জীবন যেখানে যেমন

জীবন যেখানে যেমন
খালেদা বেগম জ্যোৎস্না :

অফিসে আসার সাথে সাথে বসের ডাক, কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বল্লেন আপা আসুন গাড়ীতে, পথে সব বলছি। ড্রাইভার সাহেব গাড়ী র্স্টাট দ্ওেয়ার পর বস বলা শুরু করলেন যা  ঘটেছে,   মোটর সাইকেল এ্যকসিডেন্ট করেছেন এক নারী সহকর্মী, তার অবস্তা ভাল না,  তাঁকে দেখতে যেতে হচ্ছে। এতক্ষন আমার যে হতচকিত ছিলাম তা আপাতত দমিত। ঘটনা-থলে য্ওায়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট জটলা, যা দেখে আমরা বিপদের আশংকা করছি। বলাবলি করছি আমাদের গাড়ী হামলা করবে কি না! 
যাই হোক যেখানে ঘটনা ঘটেছে বেশ বড় ভীড়, লোকজন নানা কথা বলছে আর বার বার আমাদের দিকে তাকাচ্চে। ভিড় টেলে আমরা এগুতে থাকলাম, গিয়ে দেখি, মেয়েটা বেহুশ, হাত,পা,মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না, তবে মানুষে উপস্তিত বুদ্বি,সাহস এগিয়ে য্ওায়ার পথ দেখায়। বস মেয়েটার পালস দেখে এ্যাম্বুলেন্স কল করলেন, আমি তার স্বামীকে ফোন দিয়ে আসতে বল্লাম। ভীড় থেকে কয়েকজন এসে জানালো, ইটের ট্রাক মেয়েটাকে ধাক্কাদিয়ে চলে গেছে, আমরা উনার ডাইরী দেখে আপনাদের ফোন দিয়েছি। উনাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ,আমরা তাড়াতাড়ি মেয়েটা ব্যাগ, কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সে উঠে পড়লাম। আমি বারবার মেয়েটার নাকে হাত দিয়ে দেখছি নিশ^াস ঠিক মতো নিচেছ কি না? সরকারী হাসপাতালে ন্ওেয়ার পর আমার বসও যেহেতু একজন ডাক্তার, উনি বিভিন্ন নির্দেশনা দিচেছন, আর ডাক্তার র্নাসরা রোগীকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিছুক্ষণ পর র্নাস এসে জানালো রক্ত দিতে হবে, একে তাকে খবর দ্ওেয়া শুরু, লোকজন আসতে দেরী দেখে বস রক্ত দেওয়ার কথা জানালেন। যেহেতু অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে , তাড়াতাড়ি রক্ত দ্ওেয়া দরকার। কিছু টেস্ট করার পর রক্ত দেওয়া শুরু।
আমাদের অনেক সহকর্মী এর মধ্যে হাসপাতালে চলে এসেছেন। প্রশ্নবাণের আমরা উত্তর দিয়ে যাচ্ছি, সবাই সমবেদনা জানাচেছ, কেউ কেউ আবার খাবার, ফল নিয়ে আসছে। এখানে বুঝা যায় সহকর্মী কি ভাবে আত্বীয় হয়ে যায়। যদিও ঐ নারী কর্মীর কোন প্রকল্পে কাজ করে , সেটা বিবেচ্য বিষয় না বরং কি ভাবে সহযোগিতা করা যায় সেটাই মূখ্য। এর মধ্যে ঐ কর্মীর পরিবারের লোকজন চলে এসেছেন। আমরা উনাদের আপাতত সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে অফিসে চলে আসলাম। 

অফিসে এসে হাত মুখ ধুয়ে দেখি খাবার সময়, আমার বস, কলিগ ও আমি খেতে বসেছি ঐ সময় দেখি মোবাইলে কল এর পর কল আসছে, মোবাইল ধরে দেখি ড্রপ ইন সেন্টারের প্রোগ্রাম অফিসারের নার্ভাস কন্ঠের ফোন, এক ড্রাগ য়্যুজার ্ওয়াসর রুমে ঢুকেছে সকাল দশটায় এখনো দরজা খুলছে না, যদিও অনেক চেষ্ঠা করেছেন, জানতে চাইলেন আপা এখন কি করবো? আমি যখন কথা বলছিলাম তখন বস, কলিগ ওনারাও শুনতেছিলেন। কিসের খাওয়া দ্রæত হাত ধুয়ে আমরা আবার ড্রপ ইন সেন্টারের দিকে রওনা। য্ওায়ার পথে থানায় নামলাম। অফিস ইন র্চাচ জানালেন আমাদের দরখাস্ত করতে হবে সমস্ত বিবরণ দিয়ে, অগত্যা আমার কলিগ দরখাস্ত লিখে জমা দিলেন। দেখি কনস্টেবল যারা আছেন তারা হ্যান্ড মাইক, মই, লাশ ন্ওেয়ার ইত্যাদি ইত্যাদি জিনিসপত্র নিয়ে আমাদের সাথে রওনা দিলেন।
ড্রপ ইন সেন্টারে গিয়ে দেখি সব কর্মী জড়ো হয়ে আছেন। আমরা ঢুকার পর উনারা মনে হয় স্বস্তির নিশ^াস ফেললেন।
আমরা ্ওয়াস রুমের কড়া নাড়ার পর মহান ভদ্র লোক বের হলেন। কি বিষয় জানতে চাইলে যা উত্তর দিলেন শুনে রাগ করবো না কান্না করবো বুঝতে পারিনি। উত্তর হলো ‘আফা ইনজেকশনটা লইয়্যা পেসাব করতে ঢুকেসি কখন ঘুমাই পরসি জানি না। কি বলবেন! যারা ড্রাগ য়্যুজাদের নিয়ে কাজ করেছেন , প্রত্যেকেই এ রকম হাজারো অভিজ্ঞতায় পূর্ণ।
পুলিশের একজন কিছুক্ষণ সবার উদ্দেশ্যে কিছু নিয়ম কানুনের কথা বললেন, কোন ধরনের সমস্যা হলে উনাদের সাথে যোগাযোগ করতে এবং উনাদের সহায়তার আশ^াস দিলেন। 
যা হউক আমরা ঘটনার মিশমাশ করে পুলিশ সাহেবদের ধন্যবাদ জানিয়ে উনাদের তারা তাৎক্ষণিক সহযোগিতার জন্য ,আবার অফিসে আসলাম।
কি রির্পোট লিখা, মেইল দেখা কিছুই হলো না। আমরা একটু হাঁফ ছেড়ে বসেছি, ধরেন তিরিশ মিনিট পরে আবার আর এক ড্রপ ইন সেন্টার থেকে ফোন ( যৌণ কর্মীদের)। বিষয় এক যৌণ কর্মীকে কিছু যুবক সারা রাত অত্যাচার করে দুপুরের পরে শহরের নির্জন গলিতে রাস্তায় অজ্ঞান অব¯থায় ফেলে গেছে। ঐ ড্রপ ইন সেন্টারের মেয়েরা দেখতে পেয়ে নিয়ে এসেছেন। ড্রপ ইন সেন্টারের ডাক্তার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়েটাকে স্বাভাবিক অবস্তায় নিয়ে আসার জন্য। আমরা গিয়ে দেখি মেয়েটা বমি করেই যাচ্ছে , ঘটনা কি জানতে চাওতে অন্য মেয়েরা জানালো প্রায় দশ বারো জন মেয়েটাকে ্ওরাল সেক্র করেছে, তাই সে অনবরত বমি করছে। ভাবতে অবাক লাগে মানুষের কি বিকৃত রুচি! 
এরার উপর খারার ঘাঁ মতো বাড়্ওীয়ালা এসে হ¤িতম্বি শুরু করে দিয়েছেন। পারলে আমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। জানিয়ে দিয়ে গেলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ী ছেড়ে দিতে।পারলে  ঐ দিনেই পাত্তাড়ি গুটাতে বলেন। না হয় উনি  ড্রপ ইন সেন্টারের সব মালপত্র ফেলে দিবেন। আমরা উনার সাথে কোন ধরনের বাকবিতন্ডায় না গিয়ে শুধু বর্তমান অব¯থাটা সহানুভ‚তির দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ করলাম। 
ডাক্তার বস মেয়েটাকে দেখে বললেন, ওর বেশ ভাল চিকিৎসার দরকার যা এখানে হবে না, হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। ড্রপ ইন সেন্টারের কিছু মেয়ে ধারাধরি করে মেয়েটাকে গাড়ীতে বসিয়ে দিল , আর আমরা হাসপাতালে নিয়ে যথাযথ নিয়মাদি মেনে ভর্তি করিয়ে দিলাম।পুলিশের ফর্ম্যালিটিও পূরণ করতে হলো।
এসব করতে করতে কখন রাত নয়টা বেজে গেছে কারো খেয়াল নাই।
কোথায় খাওয়া কোথায় দালিলিক কাজ, কোথায় নিজের কথা ভাবা! উল্টো মাথাটা ঝিমঝিম করছে। অবশেষে রাত দশটায় বাসায় (চট্টগ্রামের বাইরে) পৌঁছালাম।
বিধ্বস্ত অবস্থায় ঘুমাতে গেলাম, রাত তিনটায় চট্টগ্রামের বাসা থেকে ফোন, হ্যালো হ্যালো করেতে ফোনটা কেটে দিলো, আর কি ঘুম মাথায় নানা চিন্তা ঘুরপাক, ছেলেটার কিছু হয়নি তো! মেয়েরা ভালো আছে তো! নাকি উনার ডাইবেটিস বেড়ে গেছে! মা,ভাই ভালো আছে তো! এসব ভাবতে ভাবতে রাত শেষ। যারা পরিবারের বাইরে থাকে,তারাই শুধু এ উদ্বিগ্নতা বুঝবেন।  
ঘটনা গুলো নিয়ে যদি মালা সাজান: দেখবেন মানবিকতা, সহানুভ‚তি, দায়িত্ববোধ, নৈতিকতা, আচরণ, মস্কারা করার সীমাবদ্ধতা আরো অনেক কিছুর সমাহার।
ধরেন ্এটা শুধু একদিনের ঘটনা। চাকরী জীবনে অনেক ধরনের ঘটনার সম্মুখীন সবাই হয়। অভিজ্ঞতার ঝুলিটা সমৃদ্ধ হয়। কোনটা রেখে কোনটা লিখবো! জেনে বুঝে সন,নাম, জায়গার কথা উল্লেখ করিনি,যাতে কারো সম্মানে না লাগে। তবে একদিনে যদি এতো স্ট্রেস নিতে হয়, তখন মানষিক, শারিরীক কি অবস্তা হয় বুঝানো মুস্কিল। নিস্তেজ অবস্থায় স¦ামী, সন্তান, সংসার,নিজের কথা ভাবার সময় হয় না।
কষ্ঠটা ঐ খানে চাকুরীজীবি নারী বা পুরুষ তার সঠিক অবস্থানের  খোঁজটা পান না!
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কলাম

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.