আইনের দৃষ্টিতে সমতা এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু সংবিধান প্রদত্ত এই মৌলিক অধিকার থেকে রাষ্ট্রের সুবিধাবি ত নানা শ্রেণীর মানুষ অর্থনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি বহুবিধ কারণে বি ত হয়ে আসছিল যা, কাঙ্খিত ছিল না। সে কারণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা প্রদানকল্পে আওয়ামী লীগ সরকার দুই যুগ আগে প্রথমবারের মতো প্রণয়ন করেন “আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০”। এই আইনের আওতায় সমাজের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় খরচে (বিনামূল্যে) আইনি সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা সরকারি খরচে আদালতে মামলা দাখিল করতে পারবে বা তাদের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত মামলাতেও সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে। তাছাড়া মামলার প্রাসঙ্গিক খরচ, আইনি পরামর্শ ও সহায়তা এবং অন্য যে কোন সহায়তা সে প্রাপ্ত হবে। ইতিমধ্যে এই আইনের আওতায় দেশের লক্ষ লক্ষ অসহায় জনগোষ্ঠি সরকারি খরচে আদালতে আইনি সেবা নিচ্ছে, মামলা পরিচালনা করছে এবং নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বহু অসহায় দুঃস্থ নারী ও শিশুসহ সকল শ্রেণীর মানুষ তাদের প্রাপ্য কোটি কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে।
আইনটির আওতায় প্রতিটি জেলা শহরে রয়েছে জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটি যার সভাপতি হলেন ঐ জেলার জেলা ও দায়রা জজ। জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সেক্রেটারি প্রমুখ হলেন কমিটির সদস্য। দেশের প্রতিটি জেলার মতো কক্সবাজার জেলাতেও জেলা জজ আদালত ভবনে এই কমিটির কার্যালয় রয়েছে যেখানে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়—সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থসামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচার প্রার্থীগনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনামূল্যে সকল ধরনের আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। প্রতিটি জেলায় রয়েছেন একজন লিগ্যাল এইড অফিসার যিনি নিজে একজন বিচারক। তিনি সার্বক্ষণিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারূপে আইনি পরামর্শ প্রদানসহ দেওয়ানী মামলা, পারিবারিক মামলা এবং পারিবারিক দ্বন্দ্ব হতে উদ্ভূত ফৌজদারী প্রকৃতির বিরোধ সংক্রান্ত বিষয়াবলি আপোষ—মীমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করত: দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীকে আইনি সেবা প্রদান করছেন।
আইনটির ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা এবং উহার তাৎপর্য তুলে ধরার জন্য প্রতিবছর এপ্রিল মাসের ২৮ তারিখে পালিত হয় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান দিবস। এ বছর “স্মার্ট লিগ্যাল এইড, স্মার্ট দেশ/ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ” এই স্লোগান নিয়ে মহাসমারোহে দেশব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে এবং তার অংশ হিসেবে কক্সবাজার জেলা লিগাল এইড কমিটিও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরছে। এর মধ্যে রয়েছে বর্ণাঢ্য র্যালি, দিবসটির তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা, লিগ্যাল এইড মেলা, বিনামূল্যে আইনি সেবা ও পরামর্শ, রক্তদান কর্মসূচি, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা, শ্রেষ্ঠ প্যানেল আইনজীবীগণের সম্মাননা, প্যানেল আইনজীবী ও আইনি সেবা গ্রহীতার পরামর্শ সভা, ইত্যাদি। সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে যথাযথ মর্যাদাসহ দিবসটি উদযাপিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি দিবসটির সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।
মুন্সী আব্দুল মজিদ
জেলা ও দায়রা জজ, কক্সবাজার।
এবং
সভাপতি, জেলা লিগাল এইড কমিটি, কক্সবাজার।
