স্মার্ট লিগ্যাল এইড, স্মার্ট দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ

স্মার্ট লিগ্যাল এইড, স্মার্ট দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ
আবদুল্লাহ আল মামুন :

বিংশ শতাব্দীতে কল্যাণ রাষ্ট্রের উত্থানের সাথে সাথে আইনগত সহায়তা প্রদানের ধারণাটিও উত্থাপিত হয়। এই ধারনাটির উৎপত্তি ঘটে মূলত তাদের জন্য যারা মামলা মোকাদ্দমা চালিয়ে যাবার খরচ বহনে অসমর্থ। আইনগত সহায়তা বলতে বুঝায় দরিদ্র বিচারপ্রার্থীকে আদালতের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয়দিকে আর্থিক সহযোগিতা করা। আধুনিক বিচার ব্যবস্থায় আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাওয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং অনুন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের সাধারন মানুষের এই খরচ বহন করা দুরূহ ব্যাপার। দরিদ্র মানুষের কাছে ন্যায় বিচার দুরূহ বিষয়। এ ক্ষেত্রে বিচারপতি গধঃযবি.খ.ঔ এর মন্তব্য প্রায়ই ব্যবহৃত হয় "রিজ হোটেলের মত ন্যায় বিচার সবার জন্য উন্মুক্ত"। এই বাক্যটির মাঝে একটি ব্যাঙ্গ লুকায়িত আছে। অর্থাৎ রিজ হোটেল সবার জন্য উন্মুক্ত হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এটি ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনুরূপভাবে ন্যায়বিচার সবার জন্য উন্মুক্ত বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে সহায় সম্বলহীন অসচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য এটিও ধরাছোঁয়ার বাইরে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিচারে সমতার নীতি অনুসারে আইনগত সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্য হল আইন ও আইনী সহায়তা সবার জন্য সুগম করে দেয়া। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার অনুচ্ছেদ ৭ এ প্রণীত হয়েছে এর মূলনীতি—"আইনের চোখে সবাই সমান এবং বৈষম্যহীনভাবে আইনের সুরক্ষা পাবার অধিকারী"। আইনের সামনে সমতা বিধান বলতে অবশ্যম্ভাবীভাবে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বিচারকার্যে আদালতে মামলা উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে সকল পক্ষের আদালত ব্যবহারের সম সুযোগ থাকতে হবে। এ বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রেখেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল এমন এক শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে জাতির পিতা ১৯৭২ সালের সংবিধানে মানুষের মৌলিক অধিকার এবং সব নাগরিকের আইনের আশ্রয় পাওয়ার সমানাধিকার নিশ্চিত করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ—সামাজিক কারণে বিচারপ্রাপ্তীতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার "আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০" প্রণয়ন করে। বর্তমানে আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষ ছাড়াও এসিড—দগ্ধ নারী পুরুষ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা, বিনা বিচারে আটক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী, পাচারকৃত নারী বা শিশুদের সম্পূর্ণ সরকারি অর্থ ব্যয়ে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। কক্সবাজার লিগ্যাল এইড অফিস এখন শুধু আইনি সহায়তা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবে সীমাবদ্ধ নয় বরং মামলা জট কমানোর লক্ষ্যে এই অফিস এখন "এডিআর কর্নার" বা বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তির কেন্দ্রস্থল হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এই অফিস থেকে জনগণকে বিনা খরচে সরকারি আইনি সহায়তা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যা সারা দেশের আদালত সমূহের ন্যায় কক্সবাজারে মামলাজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
আমি "জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস—২০২৪" এবং দিবসটি উপলক্ষ্যে কক্সবাজার লিগ্যাল এইড কমিটি কর্তৃক গৃহীত বহুবিধ কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
লেখকঃ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কক্সবাজার।

আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কলাম

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.