উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে হবে না প্রসঙ্গে

উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে হবে না প্রসঙ্গে
বেশ কয়েক দিন ধরে পত্রিকাগুলোতে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই সংবাদে ভোটারা ও সাধারণ মানুষ নড়েচড়ে বসেছে। আবার নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী হচ্ছে,সর্বত্র তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরা বলছেন,প্রথমত তৃণমূলে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এড়ানো,দ্বিতীয়ত নির্বাচনকে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ করার জন্যই এ সিদ্ধান্ত। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে ভোটাররা তুলনামূলকভাবে সৎ,চরিত্রবান,ভাল প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করার জন্য অধিক পরিমাণে ভোট কেন্দ্রে যাবে। এখন সাধারণ মানুষের ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার আগ্রহ নাই কেন? সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল বিশ্বাস আমরা ভোট দিলেও, না দিলেও সরকারী দলের প্রার্থীই বিজয়ী বলে ঘোষিত হবে। সরকারী দলের সমর্থকদের বিশ্বাস আমরা ভোট কেন্দ্রে না গেলেও আমাদের প্রার্থী পরাজিত হবার সম্ভাবনা নাই। এই ধরনের বিশ্বাস ও ধারনা থেকেই ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার সংখ্যা লজ্জাজনকভাবে কমে গেছে। উপজেলা নির্বাচনসহ সামনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীক ছাড়া অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচন সত্যিই অংশগ্রহনমূলক ও প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হবে। বিএনপিসহ নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোও নির্বাচনে অংশগ্রহন করার সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন না করলে বিরোধী দলগুলো দলীয়ভাবে নির্বাচন বর্জনের ডাক দেওয়ার সম্ভাবনা কম। নির্বাচন বর্জনের ডাক দিলেও তা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মানবেন না। বিগত বছরগুলোতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে মনোনয়ন দিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করলে বিএনপি বর্জনের ডাক দেয়। কিন্তু বিএনপির ডাক অমান্য করে অনেক বিএনপি নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহন করলে অনেককে দল থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বহিস্কার করা হয়েছে। বহিস্কৃত বিএনপি নেতাদের অনেকে পরাজিত হয়েছেন,অনেকে বিজয়ী হয়েছেন। যে বহিস্কৃত বিএনপি নেতারা পরাজিত হয়েছেন তারাও বিপুল পরিমান ভোট পেয়েছেন। দলীয়ভাবে বহিস্কার করে নির্বাচনের সময় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের বিব্রত ও ভাবমূর্তি ক্ষন্ন করা না হলে হয়ত তারাও নির্বাচিত হতেন বলে অনেকে দাবী করেন। 

দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ,পৌরসভা,উপজেলা ইত্যাদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে যে এক্সপেরিমেন্ট বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে তার ফলাফল হলো,মনোনয়ন বি ত দলীয় নেতাদের কাছে মনোনয়ন প্রদানকারী কেন্দ্রীয় নেতাদের সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ও তা প্রকাশ্যে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। দলের সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি তৃণমূল নেতাদের আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ ও আস্থা হ্রাস পেয়েছে। দলীয় প্রতীক নিয়ে অনেক সময় অযোগ্য চরিত্রহীন ব্যক্তিও নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে দলীয় কোন্দল বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ হতাশ হয়েছেন। সামাজিক শৃঙ্খলা ও সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়েছে। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ কমেছে। দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে । হানাহানি মারামারি বেড়েছে,মামলা-মোকদ্দমাও বেড়েছে। ভোটের প্রতি অবিশ্বাস ও ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার প্রতি সাধারণ মানুষের অনিহা সৃষ্টি হয়েছে আশঙ্খজনকভাবে। গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। 
দলীয় মনোনয়ন দিয়ে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহন না করার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একটি সিদ্ধান্তেই উল্লেখিত অনেকগুলো সমস্যার অটো-সমাধান হয়ে যাবে বলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন। দলীয়করণমুক্ত নির্বাচন হলে প্রচুর পরিমাণ ভোটার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করতে উৎসাহিত হবেন তাতে কোন সন্দেহ নাই।
লেখকঃ একজন কলামিষ্ট, সাবেক সভাপতি কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটার, বহু বইয়ের প্রণেতা এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন সিনিয়ার আইনজীবী।

আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কলাম

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.