মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে সেহেরি ও ইফতার

মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে সেহেরি ও ইফতার
জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান

আল আজহার মসজিদের পাশে দুটি রুমে আমরা ছয়জন থাকি। রান্নাবান্না নিজেরাই ভাগাভাগি করে করি। সেক্ষেত্রে আমরা সাহরির রান্না রাতে তারাবীর নামাজের শেষে করে থাকি। সাহরি শেষে ফজরের নামাজ আদায় করে ঘুমাতে যাই। কারণ, মিশরে তুলনামূলক রাতে ঘুম কম হয়। বাংলাদেশে যেমন তারাবির নামাজ পড়ে যার যার মতো বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে যায়, সাহরির সময় যেন উঠতে পারে; কিন্তু মিশরে ভিন্ন রকমের পরিবেশ। মিশরে রমজান মাসকে আনন্দ উল্লাসে উদযাপন করে। শিশু, কিশোররা আনন্দ উল্লাসে প্রফুল্ল ভাবে কাটায় রমজানের প্রতিটি দিন ও রাত।  শিশুরা প্রফুল্ল হৃদয়ে খেলা নিয়ে ব্যস্ত, আবার কেউ রমজানের আনন্দে বাজি ফুটিয়ে উৎসব করে। এভাবেই চলতে থাকে সাহরির আগপর্যন্ত তাদের আনন্দ ও উল্লাস।
ইফতারের জন্য মসজিদে প্রবেশ
ঘুম থেকে উঠে দুপুরের নামাজ পড়ে কিছু সময় কোরআন তেলাওয়াত করি। ইফতার করতে যাই আল আজহার মসজিদে। এখানে ইফতার করতে হলে আগেই অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, না করলে ও সমস্যা নাই। আসরের নামাজের পর যেসব ছাত্র-ছাত্রী ওখানে ইফতার করতে যায়, তাদের মসজিদের দক্ষিণপাশে রওয়াকুল আব্বাসিয়ার গেট দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। এই গেইটে ছাত্ররা আসরের নামাজের পর পরই লাইন ধরে থাকে ইফতার করতে ভিতরে প্রবেশের জন্য।  বিদেশি ছাত্রদের'কে এই গেইট দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী আমরা দক্ষিণ পাশের গেট দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলাম। ভেতরে ঢুকেই এক জান্নাতি উদ্যান। সামনে মসজিদ, চারপাশে কাঠে পাথরের দেয়াল। যার ভিতর নারীরা ইফতার করেন, নামাজ আদায় করেন। মাঝখানে খোলা ময়দান। যেখানে রয়েছে সাদা টাইলস করা উঠোন,উপরে খোলা ছাদ। মসজিদের বারান্দায় বসে কেউ কেউ কোরআন পড়ছেন, কেউ তাসবিহ পাঠ করছেন। তাদের সকলই বিদেশি ছাত্র। এর মধ্যে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ছাত্র বেশি। আসরের নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই খোলা ময়দানে শুরু হয়ে যায় ইফতার পরিবেশন। যেখানে সবাই সুন্দরভাবে ইফতারসামগ্রী সাজিয়ে রেখে দেয়। সবকিছু ঠিকঠাক মতো সাজানো-গোছানো থাকে। কারও সঙ্গে কারও কথা নেই। যে যার মতো কাজ করছেন। দায়িত্বশীলরা  দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এই ভাবে চলতে থাকে আজানের আগপর্যন্ত। এরপর আজান হয়। আজানের সাথে সাথে পানি পান করেই সবাই নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। ভিন্ন রকম এক দৃশ্য। বাংলাদেশে দেখতাম  ইফতার মানে ছোলা, মুড়ি, পেয়াজু, বেগুনি। এ ছাড়া ইফতার করলে কেমন জানি অপরিপূর্ণ লাগে; কিন্তু এখানে পুরোই ভিন্ন আবহ। মুরগী গরু গোস্তসহ অন্যান্য খাবার একেবারে তেল, লবণ, মরিচ ছাড়া সেদ্ধ। নামাজ শেষে সবাই বাকি খাবার শেষ করতে ব্যস্ত।

লেখক : শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কলাম

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.