কক্সবাজারে সদর উপজেলার খরুলিয়ায় কেঁচো চাষে সফলতার মুখ দেখছেন প্রবাসী রশিদ আহমেদ। খরুলিয়ার ঘাট পাড়া এলাকায় ১০ শতক জায়গায় ২৪ টি চারি ( ইট দিয়ে নির্মিত চৌবাচ্চা) দিয়ে কেঁচো সার উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে ২ লক্ষ টাকা পুঁজি দিয়ে ২০০ কেঁচো দিয়ে শুরু।
রশিদ আহমেদ বলেন, চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রতি কেজি ১৫ টাকায় ১০ টন কেঁচো সার কিনে এনেছিলাম নিজস্ব বাগানের জন্য। আমার নিজস্ব চাহিদা আছে বছরে ১৫ টন। এখন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেছি। প্রথমবার প্রায় ৫০ টনের অধিক ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।
রশিদ আহমেদ বলেন, শুরুতে ১'শো কেজি বিক্রি করেছি। এখন যে কেঁচো সার আছে সেখানে ৫০ টনের মতো হতে পারে। প্রতি কেজি কম্পোস্ট পাইকারি দামে ১৫ টাকা হলে দাঁড়ায় টন প্রতি ১৫ হাজার টাকা। খুচরা বাজারে ২০ টাকা কেঁচো সার বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসেবে দেখা যায় প্রতি টন কেঁচো সারের দাম দাঁড়ায় ২০ হাজার টাকা। ৫০ টন লক্ষ্য মাত্রা অনুযায়ী রশিদ আহমেদের আয় হবে ১০ লাখ টাকা।
নতুন পরিবেশবান্ধব এ-পদ্ধতি এখন দেশজুড়ে সমাদৃত। তাই সরকারও এ সারের ব্যবহার বাড়াতে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে উদ্যেক্তা তৈরি'তে জোর দিচ্ছে। এ সার ব্যাপকভাবে ব্যবহার হলে কক্সবাজার অঞ্চলের আনুমানিক কয়েক লাখ কৃষক এর সুফল পাবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
বর্তমানে সদর উপজেলায় জৈবসারের চাহিদা রয়েছে ১ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি মেট্রিক টন জৈবসারের দাম ১৪- ১৫ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রায় দেড় কোটি টাকার জৈবসারের চাহিদা রয়েছে। জেলায় ৯ হাজার হেক্টর জায়গা এই ভার্মি কম্পোস্ট চাষের জন্যে উপযোগী মনে করছেন কৃষিবিদরা। যেখান থেকে উৎপাদন হতে পারে লক্ষ মেট্রিক টন কেঁচো সার। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও বিক্রি করা সম্ভব।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হাসান দৈনিক কক্সবাজার'কে এ বিষয়ে বলেন, খরুলিয়ায় একজন উদ্যেক্তা তৈরি করেছি। তাকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। তিনি কয়েকদিনের মধ্যে উৎপাদনে যাবে। তার নিজস্ব বাগানের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও বিক্রি করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, তাঁর এই উদ্যোগ দেখে অনেক উদ্যেক্তা তৈরি হবে। কোঁচো সারে ব্যবহারে ভালো ফসল উৎপাদন সম্ভবের পাশাপাশি অনেক বেকারদের কর্মসংস্থানেও সুযোগ হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রশিদ আহমেদের ১০ শতক জায়গার ৩ শতকে কম্পোস্ট চাষ করেছেন। তার জায়গায় ফুলকপি, সিম, বাঁধাকপি, মাল্টাসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করেছেন। সেখানে তার উৎপাদিত কেঁচো সার তিনি নিজ হাতে বাগানে দিচ্ছেন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ভার্মি কম্পোস্ট শুরু করেন তিনি।
রশিদ আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে কম্পোস্ট চাষের জন্য ২ লক্ষ টাকা পুঁজি দিয়েছি। ঘর তৈরিসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। চার মাস পরে এসে উৎপাদন শুরু করেছি। আমি নিজের জন্য ১'শো কেজির মতো জৈবসার ব্যবহার করেছি।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী সুপন বড়ুয়া দৈনিক কক্সবাজার'কে বলেন, এটি ভালো একটি উদ্যেগ। তার এই উদ্যেগে, এলাকার পর্যাপ্ত জৈব সারের চাহিদা পূরণ হবে। এই সার ব্যবহারে উচ্চ ফলন আশা করা যায়। এই সারে মাটির পানি ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। কেঁচো-২০০ টি, ইট দিয়ে নির্মিত চৌবাচ্চা এবং ১ মাসের বাসী গোবর। এখানে গোবর ঢেলে ভরে দিতে হবে। সেখানে ২০০ থেকে ৩০০ কেঁচো ছেড়ে দিতে হবে।
জানা গেছে, ফসলের ক্ষেতে রাসায়নিক সার ব্যবহারে অতিরিক্ত ব্যয় করতে গিয়ে যখন কৃষকরা দিশেহারা ঠিক তখনি স্বল্প মূল্যের কেঁচো দিয়ে তৈরিকৃত সার মিলছে হাতের নাগালে। এতে ভালো মানের ফসল উৎপাদনে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা।