ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারে যুক্তিতর্ক কোন আইনে

ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারে যুক্তিতর্ক কোন আইনে
গত আট ফেব্রুয়ারী এক তরুণ আইনজীবী বন্ধুর অনুরোধে তার পিতাকর্তৃক বাদী হয়ে দায়েরকৃত একটি ফৌজদারী মামলার যুক্তিতর্ক শুনানীর সময় বাদীপক্ষের নিয়োজিত আইনজীবীকে সহায়তা করার জন্য কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে গিয়েছিলাম। বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট আমাকে দেখে বললেন আজকে প্রথম আপনাকে আমার আদালতে দেখলাম। আপনার সাথে আইন সংক্রান্তে একাডেমিক আলোচনা করার ইচ্ছা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করলেন,ফৌজদারী কার্যবিধির ২৩ চাপ্টারে দায়রা আদালতে মামলা বিচারের সময় ২৬৫জে ধারায় যুক্তিতর্ক করার বিধান আছে। চাপ্টার ২০ এ ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা বিচার সংক্রান্তে ২৪১ ধারা থেকে ২৫০ ধারার মধ্যে যুক্তিতর্ক করা সংক্রান্ত কোন বিধান নাই। ফৌজদারী কার্যবিধির কোন ধারার বিধানমূলে আপনারা আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক করেন,আমরা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত যুক্তিতর্ক শুনি?  খুবই যৌক্তিক ও মৌলিক প্রশ্ন।

কোন আইনজীবী যে বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখার জন্য আদালতে উপস্থিত হবেন অবশ্যই সেই বিষয়টি নিয়ে ভালমতো পড়ে,প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। আমি সংশ্লিষ্ট মামলায় যুক্তিতর্ক করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে,পড়াশুনা করে গেলেও ফৌজদারী কার্যবিধির কোন ধারায় ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন সেই প্রশ্ন সম্পর্কে পড়াশুনা করে,প্রস্তুতি নিয়ে যাই নাই। সৎ স্বীকারোক্তি হলো আমি ৪৫ বছর উকালতি জীবনে প্রায় সব সময় দায়রা জজ আদালতেই  মামলা করেছি বিধায় দায়রা মামলা সংক্রান্ত আইন,বিধিবিধান পড়া হয়েছে বার বার। ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের মামলার বিচার সংক্রান্ত বিধানগুলো প্রয়োজনে পড়েছি,কিন্ত দায়রা মামলার বিধানগুলির মত প্রতি দিন পড়ি নাই। আমি বললাম ফৌজদারী কার্যবিধিতে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে যুক্তিতর্কের সুনির্দিষ্ট বিধান না থাকলেও ’জাজ-মেইড ল’ বা উচ্চ আদালতে সিদ্ধান্ত আছে বলেই শত বছর ধরে যুক্তিতর্ক করার প্রচলন চলে আসছে।  আমাদের দেশে প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ ব্রিটিশ আমল থেকে (২২ মার্চ ১৮৯৮ তারিখ) কার্যকর আছে। ভারতেও একই ফৌজদারী কার্যবিধিটি চালু ছিল। তারা ১৯৭৩ সালে এই কার্যবিধি বাতিল করে তাদের দেশের জন্য উপযোগী নতুন ফৌজদারী কার্যবিধি,১৯৭৩ প্রণয়ন ও চালু করেছে। আমাদের দেশে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ’ল রিফর্মস অর্ডিনেন্স, ১৯৭৮’ মূলে দায়রা আদালতে মামলা বিচার সংক্রান্ত ফৌজদারী কার্যবিধির চাপ্টার ২৩ নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যাতে যুক্তিতর্ক সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট বিধান ২৬৫জে ধারা সংযোজন করা হয়েছে।
 ১৯৭৮ সালের অধ্যাদেশমূলে ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক মামলার বিচার প্রসঙ্গে ’সমন-কেইস’ ও ’ওয়ারেন্ট-কেইস’ পদ্ধতি বিলুপ্ত করে সব মামলাকে এক ধরনের মামলা করা হয়েছে। যথেষ্ট আইনগত উপাদান ও সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকলে অভিযোগ গঠন না করে আসামীকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নতুন ২৪১এ ধারাটি ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশমূলে সংযোজন করা হয় এবং আনুষ্ঠানিক চার্জ গঠন সংক্রান্ত ২৪২ ধারাটি একই অধ্যাদেশমূলে প্রতিস্থাপন করা হলেও বাকী বিধানগুলি ঠিকই রাখা হয়েছে, যাতে যুক্তিতর্কের সুনির্দিষ্ট কোন বিধান নাই। তবে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা বিচারের সময় বাদী-আসামী উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক করার অধিকার ও নিয়ম কখন থেকে ’জাজ-মেইড ল’ দ্বারা চালু হয়েছে সেই বিষয়টি নিয়ে এত দিন কেন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি বা জোরালোভাবে আলোচিত হয়নি? এই উপ-মহাদেশে ফৌজদারী কার্যবিধির ওপর অনেক বিখ্যাত লেখকের বই পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন সুপ্রীমকোর্ট-হাইকোর্ট বি,বি,মিত্রের বইকেই সব চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন প্রতীয়মান হয় । আমি সৌভাগ্যক্রমে বি,বি,মিত্রের সি,আর,পি,সি’র দুইখন্ড বই মরহুম পিতা এডভোকেট ফজলুল করিমের  কাছ থেকে পেয়েছিলাম। বি,বি,মিত্রের প্রথম সংস্করণ প্রকাশ হয় ১৯২০ সালে,দশম সংস্করণের চতুর্থ প্রিন্ট প্রকাশ করা হয় মে,১৯৪৪ সালে। ১৯৪৪ সালের চতুর্থ প্রিন্টই আমার হাতে আছে, যার দ্বিতীয় খন্ডের ৯২৯ পৃষ্টার ’আর্গুমেন্ট’ শিরোনামের ৮৪২এ অনুচ্ছেদ সংশ্লিষ্টদের অবগতির জন্য অনুবাদ না করে হুবহু ইংরেজীতে নিম্নে প্রদান করছি।  
” 842A.  Argument :-- A Court is bound to hear arguments,if offered,in every criminal trial or proceeding—Baij Nath,25 Cr.L.J 1380, 83 I.C 340, AIR 1925 Oudh 228, 27 O.C 323. So long as he is not guilty of unnecessary repetition or of irrelevant arguments, a Counsel is entitled to present his client’s case as he thinks best and it is no ground for a Judge to decline to hear him or  to cut short his argument merely because he is expected by Superior Courts to turn out a certain amount of work within a fixed time---Mohammad Bakhsh, 29 Cr.L.J 279, 107 I.C 763,AIR 1928 lah. 319.
The practice of receiving from the pleaders of the parties notes of argument after a case has been heard is most reprehensible and must be dicontinued. Where there is no indication that after the additional notes of written argument were put in by the prosecution, the defence had an opportunity of replying to the points raised therein, the trial was invalidated.—Jagendra Nath v. Rabindra Nath , 40 C.W.N 863.”

লেখকঃ একজন কলামিষ্ট, সাবেক সভাপতি কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটার, বহু বইয়ের প্রণেতা এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন সিনিয়ার আইনজীবী।
 
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কলাম

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.