কৃত্রিম ঘাটতিতে নাভিশ্বাস নিত্যপণ্যের বাজার

কৃত্রিম ঘাটতিতে নাভিশ্বাস নিত্যপণ্যের বাজার
# কমেছে তেল, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে চাউলের দাম

# বন্যা ও শিলাবৃষ্টির অজুহাত ব্যবসায়ীদের
স্বস্তি ফিরছে না নিত্যপণ্যের বাজারে। এক সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকার পর আবারও বাড়তি  চালের দাম। কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও তেলের দাম। সবজির বাজারেও দাম বাড়তি। কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতিতে যখন সংকটে সাধারণ মানুষ, তখন ফসল নষ্টের পাশাপাশি অসাধু চক্রের কৌশলে কৃত্রিম ঘাটতিতে আবারও নাভিশ্বাস অবস্থা নিত্যপণ্যের বাজার। বন্যা পরিস্থিতি ও শিলাবৃষ্টি'র অজুহাত দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল শনিবার শহরের বাহারছড়া বাজার, কানাইয়া বাজার, কলাতলী বাজার ঘুরে দেখা যায় শুধু আলু ছাড়া সব সবজির দাম বাড়তি। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, টমেটো ৯০ টাকা, পটল ৩৫ টাকা, কাকরল ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০টাকা, তিতকরলা ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, কচুর ছড়া ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, দেড়শ ৫০ টাকা, ললিতা আলু ৩০ টাকা, দেশি আলু ৫০ টাকা। কাঁচা মরিচ দুই দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাহাড়ছড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা বদিউল আলম জানান, গত এক সপ্তাহে কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে। আমাদের কিছু করার নেই। আমরা বেশি দামে কিনি, তাই বেশি দামেই বিক্রি করি।
আরেক সবজি বিক্রেতা মন্নান বলেন, আমরা কেজিপ্রতি ২ থেকে ৫ টাকা ব্যবসা করি।
শহরের নতুন বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ এমরান। তিনি টমটম চালিয়ে দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা আয় করেন। কোনো কোনো দিন এর কম বেশিও হয়। কিন্তু বাজারে গিয়ে আর হিসাব মেলাতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘যে ভাবে নিত্যপণ‍্যের দাম বাড়ছে তাতে এ আয়ে কোন মতেই আর সংসার চলে না। বেঁচে থাকাই এখন দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একই কথা বললেন, কানাইয়া বাজারে বাজার করতে আসা নুরুল আমিন। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। কথা হলে তিনি বলেন, ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি। এখনো অনেক কিছু কিনতে পারিনি। সবকিছুর দাম চড়া। মাছের দামে যেন আগুন। তাই চাউল, শাকসবজি নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছি।
মাছের দাম বলতে সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে পাঙ্গাস। কেজিপ্রতি ১৪০-১৬০ টাকা, তেলাপিয়া বড় ২০০ টাকা, ছোট ১৭০ টাকা, লইট্যা ১২০-১৪০ টাকা, মিঠা পানির রুই কেজিপ্রতি ২২০- ৩২০ টাকা, মৃগেল ১৯০-২৬০ টাকা। তাছাড়া ইলিশ মাছ বড় সাইজের ১ কেজির উপরে ১২০০ টাকা, মাঝারি ৫০০-৮০০ টাকা। চিংড়ি বাগদা ১০০০ টাকা।
এছাড়া মুদি পণ্যের মধ্যে ভালোমানের মিনিকেট চাল ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, মসুর ডাল মোটা দানার ৭০ টাকা, ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। ভোজ্য তেল খোলা প্রতি লিটার ১৭০ টাকা, বোতলজাত এক লিটার ১৮০-১৮৫ টাকায় বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আতঙ্ক না ছড়ালে এবং পাইকাররা সিন্ডিকেট না করলে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির তেমন কারণ নেই।
শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার (মাছ বাজার রোড) বড় বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, নিত্যেপণ্য'র দাম স্থিতিশীল আছে। কিছু পন্যের ক্ষেত্রে দাম একটু বাড়তি।
পেয়াজ কেজিপ্রতি ৩২ টাকা, রসুন ৯৫-১০০ টাকা, আদা ৮০-৯০ টাকা, মসুর ডাল ৯৫-১২০ টাকা, মটর ডাল ৬০ টাকা, সয়াবিন ৫ লিটার ৯০০ টাকা, ১ লিটার ১৯০ টাকা, সরিষার লিটার প্রতি ২৫০ টাকা, মসল্লা আইটেম মধ্যে ইন্ডিয়ান এলাচি কেজিপ্রতি ১২৫০ টাকা থেকে শুরু ১৮০০ টাকা,লবঙ্গ ১১০০ টাকা, দারুচিনি ৩২০ টাকা, চিকন জিরা ৩৬০ টাকা, মিষ্টি জিরা ২০০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, এক দোকান থেকে অন্য দোকানের দামের মাঝেও পার্থক্য আছে।
বড় বাজারের শহিদ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ তৈয়ব বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে সবকিছুর দাম স্থিতিশীল। তার মধ্যে কিছু পণ‍্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। ময়দা, মটর, দুধ পাউডার, কনডেন্স মিল্ক ও নুডলস। ময়দা প্যাকেটজাত ৭২ টাকা, খোলা ৪৫ টাকা, আটা ৫৫ টাকা এবং লবনও দুই টাকা বেড়ে ৩২ টাকা, মার্কস পাউডার দুধ ৪০০ টাকা, ডানো ৬০০-৮০০ টাকা, নুডলস ৮ প্যাকেট সম্বলিত ১৪৫ টাকা যা আগে ছিলো ১০৫ টাকা।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী মনির স্টোরের স্বত্বাধিকারী মনির সওদাগর বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে। শুকনা মরিচের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। সিলেটের চিকন মরিচ কেজিপ্রতি ২৫০ টাকা আগে ছিলো ২৩০ টাকা, দেশি মিষ্টি মরিচ ৩২০ যা আগে ছিলো ৩০০ টাকা।
বড় বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী কাসেম স্টোরের মিজানুর রহমান জানান, সরবরাহ কম থাকলে স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেক জিনিসের দাম বাড়ে।
এদিকে কিছুটা বেড়েছে চালের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যার কারণ ও ধানের দাম বাড়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম বাড়ছে। হঠাৎ করে চালের দাম বাড়ার কারণ কী, তা জানতে চাইলে, চাউল বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতি সভাপতি এইচ এম জসিম উদ্দিন দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, চাপাইনবয়াবগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে আমরা চাউল আমদানি করি। সেখানে বন্যার কারণে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে যার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। তিনি বলেন, গত দুই মাস ধরে চালের দাম ওঠানামা করছে। নতুন চাল বাজারে আসলে দাম একটু বাড়তি হয়। বস্তাপ্রতি ২'শ থেকে ৩'শ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়।
চাউল বাজারে (বড় বাজার) বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, চিনিগুড়া (গোল্ডেন) ৫০ কেজি ৪,৫০০ টাকা, তুলসী ৫,৪০০ টাকা, কাটারি দিনাজপুর ৩,৫০০ টাকা, কাটারি চাপাইনবয়াবগঞ্জ ৩,৭০০ টাকা, বাসমতী সিদ্ধ চাউল ৩,৪০০ টাকা, (নওগাঁ) বাসমতী আশুগঞ্জ সিদ্ধ ২৯ নং ২,৪০০ টাকা, পাইজাম সিদ্ধ ২,১০০ টাকা, কাটারি সিদ্ধ ৪,৬০০ টাকা, নাজির শাইল ৩,৮০০ টাকা, স্বর্ণা ২,২০০ টাকা। আতপ চালের মধ্যে ২৮নং ২৭০০ টাকা,  আতপ ২৯ নং ২,৪৫০ টাকা, মোটা আতপ ভালো মানের ২০০০ টাকা, নরমাল আতপ ১,৮০০ টাকা। এগুলোর মধ্যে বাসমতী, কাটারি সিদ্ধ, নাজির চাউল, কাটারি আতপ, ২৫ কেজি বস্তা রয়েছে। যেগুলো ৫০ কেজির চালের দাম অনুযায়ী প্রতি বস্তায় ২০ -৩০ টাকা করে বেশি।
চাউল বাজারের ব্যবসায়ী আলম এন্ড সন্স'র মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ধানের বকুল বের হয়নি। এজন্যে উৎপাদন হয়নি। তাছাড়া উত্তরবঙ্গে বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে চালের দাম একটু বাড়তি।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

অর্থনীতি

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.