বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মুখী একটি এস আলম বাস পেকুয়ার চৌমুহনী মোড়ে এসে পৌঁছায়। ডান দিক থেকে একটি সিএনজি ঢুকে পড়াতেই বাসটি আটকে পড়ে ঠিক চৌরাস্তার মুখে। এরইমাঝে বাম দিক হতে (সিএনজির বিপরিত পাশ) পণ্যবাহী একটি নসিমন এসে জটলা বাঁধিয়ে সৃষ্টি করে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই চতুর্দিক হতে আসা যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি, ইজিবাইক রিক্সা ও পণ্যবাহী ট্রাকের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ সারির তীব্র যানজট। নিমিষেই এ যানজট মানুষের বিরক্তি ও দুর্ভোগের কারণ হয়ে পরিণত হয় জানজটে।
বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে আনোয়ারা-বাঁশখালী-চকরিয়া (এবিসি) সড়ক ও বরইতলী-মগনামা সড়কের মিলিত স্থল পেকুয়ার চৌমুহনী মোড়ের স্টেশন এ দৃশ্য দেখা যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে এক দশক আগেও এ স্টেশন এতটা গুরুত্ববহ ছিলোনা। কালের বিবর্তন আর যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এখন জনাকীর্ণ এ স্টেশন। এ স্টেশন হয়েই দৈনিক পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও চকরিয়ার কিছু অংশের প্রায় দশ হাজার মানুষ চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত করে। যার প্রেক্ষিতে প্রতিদিন বেলা বাড়ার সাথে সাথেই এই চৌরাস্তার মোড়ে তৈরি হয় তীব্র যানজট।
অনেকেই এক্ষেত্রে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না থাকাকে যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন। চৌমুহনীর ব্যবসায়ী আলতাফ মাহমুদ বলেন, কুতুবদিয়া, মহেশখালী আর পেকুয়ার মানুষের চট্টগ্রামে যাতায়াতের দ্বার হওয়াতে এ স্টেশনে গত কয়েক বছর ধরে যানবাহনের আধিক্যেতা বেড়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে উল্লেখযোগ্য রাস্তা স¤প্রসারণ হয়নি। পাশাপাশি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নেই কোন তদারকি।
এদিকে সচেতন সমাজ মনে করেন এই নিত্যনৈমিত্তিক যানজট রোধকল্পে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই। রাস্তা স¤প্রসারণ করে মোড়ে একটি গোল চত্বর তৈরি করা হলে যানজট অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলেও মনে করেন তাঁরা।
চৌমুহনী মোড়ের প্রশিদ্ধ শালকর দোকানদার সুজিত কুমার দাশ বলেন, এখানে পেকুয়া থানার অধীনে একটি পুলিশ বক্স ছিলো। পুলিশ বক্স তখন জনস্বার্থে ট্রাফিকের ভূমিকা পালন করতো। গত দুই মাস ধরে এখন তা আর নেই। ফলে মোড়ে যানজট নিরসনে কেউ দায়িত্ব পালন করেনা। কেউ কোন নিয়মনীতি মান্য না করার কারণে গুটিকয়েক যানবাহন জড়ো হলেই সৃষ্টি হয় যানজট।
এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চৌমুহনী মোড়ের যানজটের বিষয়ে গত আইন শৃঙ্খলা সভায় আমি আলোচনা করেছি। ইতোমধ্যে কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। আশাকরি শীঘ্রই একটি প্রস্তাবনা আমরা কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগে পাঠাবো।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর বলেন, ট্রাফিকের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ইতোমধ্যে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়েও একটি আশানুরূপ ফল পাবো বলে মনে করছি।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, পেকুয়ার যানজট ও সড়কের বেহাল দশা নিয়ে আমরা অবগত হয়েছি। অক্টোবরের শুরুতেই মগনামা-বরইতলী সড়কের সংস্কার ও স¤প্রসারণ কাজ শুরু হবে। তখন যেসব মোড়ে যানজট নিরসনে গোল চত্বরের প্রয়োজন হবে সেখানেই আমরা তা করে দিব।
প্রসঙ্গত ২০১৯ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব উল করিম এক আইনশৃঙ্খলা সভায় চৌমুহনী মোড়ে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক চাকা সচলের অন্যতম চিংড়ির আদলে একটি ভাস্কর্য বসিয়ে গোল চত্বর বানানোর প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পর তা আর হয়ে উঠেনি।