'নারী ও যুব গোষ্ঠিকে পিছিয়ে রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়'

'নারী ও যুব গোষ্ঠিকে পিছিয়ে রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়'
কক্সবাজারের রামুতে নারী ও যুব অধিকার বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন- নারী ও যুব গোষ্ঠিকে পিছিয়ে রেখে একটি দেশের কাংখিত উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব নয়। উৎকর্ষতার এ যুগে এখনো দেশে নারী ও যুব গোষ্ঠির উন্নয়নে পরিকল্পিত কর্মপন্থা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যুবরা সমাজের প্রাণশক্তি। তাদের সঠিক পথে পরিচালনা ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে।

মঙ্গলবার, ২৭ মে সকালে রামু উপজেলা পরিষদের হিমছড়ি সম্মেলন কক্ষে এ সংলাপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিব) ও ন্যাশনাল এন্ডুমেন্ট ফর ডেমোক্রেসী (নিড)।
অনুষ্ঠানে নারী ও যুব অধিকার বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ক ধারনা পত্র তুলে ধরেন- রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিব) এর নির্বাহী পরিচালক রুহি নাজ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈয়বুর রহমান, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা উম্মে সুরাইয়া আমিন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক খালেদ শহীদ, রামু প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) এর ট্রেনিং অফিসার হাসিনা মমতাজ লাভলী।

অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নারী ও যুব জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তি এবং নির্যাতন-নিগ্রহের শিকার নারী ও যুবরা তাদের দূর্ভোগ-দূর্দশার কথা তুলে ধরেন। পুরো আয়োজন সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন- রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিব) এর এসোসিয়েট কোঅর্ডিনেটর কাজী মো. শাহীনুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে নারী ও যুব অধিকার বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ক ধারনা পত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ যুব, জাতীয় যুব নীতি ২০১৭ অনুযায়ী "যুব" বা "যুবক" বলতে বোঝানো হয়েছে সেই সকল নাগরিকদের যাদের বয়স ১৮ বছর থেকে ৩৫ বছর এর মধ্যে। ২০২২ সালের আদমশুমারি ও খানা জরিপ অনুসারে, এই যুব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৫ কোটি ৫০ লাখ ৫২ হাজার ৮৭২ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। যুবরা দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ হওয়া সত্ত্বেও তাদের বেকারত্ব, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের অভাব এবং আধুনিক শিক্ষা সেবায় সীমিত প্রবেশাধিকার সহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। মফস্বল এ সমস্যা প্রকট। কক্সবাজার সহ বাংলাদেশের যুবরা, সংখ্যা অনুযায়ী যথাযত কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব এবং যুবদের যথাযত দক্ষতার অভাবের কারণে বেকারত্ব এবং কর্মসংস্থানের সল্পতার মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যুবদের মধ্যে যথাযত প্রযুক্তিগত শিক্ষা, দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে, যা তাদের উপযুক্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। দারিদ্র্যতা একটি প্রধান বাধা, যা শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং স্ব-কর্মসংস্থান উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থানগুলিতে প্রবেশাধিকারকে সীমিত করে। কক্সবাজার যেহেতু সীমান্ত এলাকা, এখানে বিভিন্ন ধরনের সীমান্ত-সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সুযোগ যেমন বেশি, তেমনি এসব সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে যুবকদের জড়িয়ে পড়ার প্রবণতাও বেশি।
দেশে শিক্ষার সামগ্রিক মান যুবদের এগিয়ে যাবার পথে গুরুত্বপূর্ন বাধা সৃষ্টি করে, ভকেশনাল বা নিদৃষ্ট দক্ষতা কেন্দ্রিক শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ যুবদের একটি বড় অংশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করছে। এই অঞ্চলের যুবদের কাছে মাদক সহজলভ্য, যা এই অঞ্চলের যুবদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকে ধাবিত করছে।
কক্সবাজারে স্বাস্থ্য খাতে নানা ধরনের অসুবিধার কথা যুবদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শুনতে পাওয়া যায়। বিশেষভাবে যুবতীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ঝুঁকি থাকে। কর্মসংস্থানের দিক থেকে যদিও পর্যটক কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সংস্থা গুলোতে যুবদের কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যুবদের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ কম এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া বা উন্নতির সুযোগ কমে যায়। সরকারি সেবার পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে যুবদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, যাতে তারা শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও সুযোগ পায়।
সরকারি সেবা গ্রহণের প্রক্রিয়া সহজ করা, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বা কর্মসংস্থান। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার। সকল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে সক্ষম এমন শিক্ষা পদ্ধতি সৃষ্টি করা, যেখানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এবং জেন্ডার সংবেদনশীল ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পাঠ্যক্রমের ব্যবস্থা থাকবে। যুবদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত করতে ক্ষুদ্রঋণ, ঋণ ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা, যা তাদের সরকারি সেবায় প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধি করবে। এনজিওদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব স্থাপনের মাধ্যমে যুবশক্তি উন্নয়নে কাজ করা, যা সরকার ও যুবদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করবে। এনজিওগুলো প্রান্তিক এলাকার যুবদের আরও কার্যকরভাবে পৌছাতে পারে এবং সরকারি সেবার প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.