মহেশখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, জোয়ারের পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু

মহেশখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, জোয়ারের পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ এর প্রভাবে বৃষ্টি ও আতি জোয়ারের প্রভাবে মহেশখালীর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে দানু মিয়া(৪২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও পানের বরজ। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। মহেশখালীর সাথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। পাহাড় ও নিম্নঞ্চলে বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জানান- অমাবস্যার অতিজোয়ার ও সমুদ্র গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় মহেশখালী উপজেলায় গত দুই-তিন ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল থেকে বৃষ্টি ও বাতাসের মাত্রা বাড়তে থাকে। বেলা ১২টায় পূর্ণ জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পায় পানির উচ্চতা। এ সময় বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে মহেশখালীর ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ও খাল দিয়ে সমুদ্রের পানি ঢুকে মহেশখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। 
জোয়ার ও বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে প্লাবিত হয় কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা, ডেম্বুনি পাড়া, চরপাড়া ও তাজিয়াকাটা। মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সাইরার ডেইল, রাজঘাট, মগডেইল তিতামাঝির পাড়া। ধলঘাটা ইউনিয়নের সরইতলা, মুহুরীঘোনা, সুতুরিয়া, সাপমারার ডেইল, পণ্ডিতের ডেইল।  ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের মুদিরছড়া, আহমদিয়া কাটা, ঠাকুরতলা, তেলিপাড়া, উম্বুনিয়া পাড়া। শাপলাপুর ইউনিয়নের দিনেশপুর, বারিয়া পাড়া, জেমঘাট ও ষাইটমারা। হোয়ানক ইউনিয়নের বড়ছড়া, হরিয়ারছড়া ও পানিরছড়া।  বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মগরিয়াকাটা ও পাহাড়তলী। কালারমার ছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা, ইউনুছখালী, ঝাপুয়া এবং মহেশখালী পৌরসভার চরপাড়া, সিকদার পাড়া ঘোনাপাড়াসহ প্রায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। 
এরই মধ্যে দুপুরে কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা এলাকায় গ্রামের বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে  জোয়ারের পানিতে ডুবে দানু মিয়া (৪২) নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি অসুস্থ ব্যক্তি বলে চিকিৎসকরা জানান।

এ অবস্থায় দুপুরে উপজেলা সম্মেলন কক্ষে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেদায়েত উল্ল্যাহ্'র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্মকতাগণ, জনপ্রতিনিধি ও সিপিপি প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মহেশখালী প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কর্মকর্তা 
কাওসার আহমেদ জানান- মাতারবাড়ি, ছোট মহেশখালী, কুতুবজোমের ঘটিভাঙা ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাতারবাড়িতে বেশ কিছু বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়লে তাদেরকে উদ্ধার করে সাইক্লোন সেল্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। কুতুজোমের ঘটিভাঙ্গায় পানিতে ডুবে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিম্নাঞ্চল পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এসব এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। সেল্টারে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে জরুরি খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং জেলা প্রশাসনের কাছে জরুরি ত্রাণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেদায়েত উল্যাহ্ জানান- ঘূর্ণিঝড়টি লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপে পরিণত হয়, এতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে মহেশখালীর প্রায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় সী-ট্রাকসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে, জরুরি সভা করে উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, কন্ট্রোলরুমের নম্বর 01700716848 বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র উন্মুক্ত শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তা মেরামত ও চালু রাখার চেষ্টা হচ্ছে। 
এদিকে রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত মহেশখালী বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছে, গুড়িগুড়ি বৃষ্টির সাথে ধমকা হওয়া বইছে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.