হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর
কুরআনুল কারীম আল্লাহ তা'আলার কালাম, সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব। কুরআন মজীদ যে নবীর উপর নাযিল করা হয়েছে তিনিও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ স.। যে মাসে নাযিল হয়েছে সেই রামাযানুল মোবরারকও সর্বশ্রেষ্ঠ মাস। যে রাতে এ কুরআন মজীদ নাযিল হয়েছে সে রাতটিও সর্বশ্রেষ্ঠ রাত। যে রাতের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআন মজীদে ইরশাদ করেন,“নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জানো লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর সহস্র মাসের চেয়েও উত্তম।” -(সূরা ক্বদর-আয়াত-১,২ ও ৩)।
কুরআনুল কারীমের শিক্ষাদান ও গ্রহণকারী উভয়কেও (মানব জাতির মধ্যে) সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং রাসুলে কারীম স. । তিনি ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি যে কুরআন মজীদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।”-(বুখারী)। অপর বর্ণনায় রাসুলে কারীম স. কুরআন মজীদের তিলাওয়াতকে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে অভিহিত করেছেন। কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত বর্ণনায় তিনি আরও ইরশাদ করেনে “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের একটি হরফ পড়বে তার জন্য একটি সওয়াব এবং সে একটি সওয়াব দশটি সওয়াবের সমতুল্য। তথা প্রতি হরফে দশটি সওয়াব মিলবে।”-(তিরমিযী)।
তিলাওয়াতে কুরআনের কারণে মু’মিন অন্তরে সৃষ্টি হয় তাকওয়ার আবহ। শাণিত হয় ঈমানী স্পৃহা। যেমনটি ইরশাদ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা। “মু’মিনতো তারাই যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের নিকট তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে।” (সূরা আনফাল-আয়াত-০২)।
তিলাওয়াতে কুরআনের ফযীলত ও হাফেজে কুরআনগণের মান-মর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিভাত হয় সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ স. এর সেই হাদীস থেকে যেটি শুরুতে উল্লেখ হয়েছে। "রাসুলে কারীম স. ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি যে কুরআন মজিদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।” -(বুখারী)। তিনি আরও ইরশাদ করেন, “সাহেবে কুরআন তথা যিনি কুরআন শিখলেন এবং তার ওপর আমল করলেন (কিয়ামতের দিন) তাঁকে বলা হবে পড় এবং মর্যাদার স্তরে উন্নীত হও, আর ধীরস্থির ভাবে পড় যেভাবে তুমি দুনিয়াতে পড়তে। কেননা তোমার মর্যাদার স্তর ওই আয়াতের সমাপ্তির ওপরই যে আয়াত পর্যন্ত তুমি পড়বে।”- (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ)।
কুরআনুল কারীমের এমনই বিশুদ্ধ তিলাওয়াত, অর্থ ও তাফসীর শিক্ষাদানের পবিত্র খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছে সহীহ ধারার দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্রগুলো। হিফ্জখানাগুলোর অবদানেই প্রতি বছর অসংখ্য হাফেজে কুরআন তৈরী হয়ে কুরআনের খেদমতে নিবেদিত হন। কুরআনুল কারীম নাযিলের মাস রমাযানুল মোবারকে বিশ্বময় অসংখ্য হাফেজে কুরআনের তিলাওয়াতে সজীব হয়ে উঠে মু'মিন হৃদয়। মসজিদে মসজিদে তাঁদের তিলাওয়াতে কুরআনের পবিত্র সূরে মুখরিত হয় পুরো যমিন।
যাঁরা হাফেজে কুরআন তাঁদের কত বড়ই খোশনসিব । তাঁরা আল্লাহপাকের বিশেষ রহমতপ্রাপ্ত এবং আল্লাহ প্রদত্ত বিরল প্রতিভার অধিকারী। তাই তো তাঁরা আল্লাহপাকের ৩০ পারা কুরআনের আমানত বক্ষে ধারণ করার তাওফিক লাভ করেন। তাঁদের অন্তর কুরআনের আলোয় আলোকিত আর চেহারা ঈমানের জ্যোতিতে দীপ্তিমান।হাফেজে কুরআনগণের মর্যাদার সাথে সাথে তাঁদের পিতা-মাতাকেও কিয়ামতের ময়দানে সূর্যের চেয়েও আলোকিত তাজ পরিধান করানো হবে বলে হাদীস শরীফে এসেছে।
তাই হাফেজে কুরআনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সকলেরই উচিত। যাঁদের শ্রেষ্ঠ মর্যাদার ঘোষণা স্বয়ং রাসুল স. দিয়েছেন; যাঁদেরকে কিয়ামতের ময়দানে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা সম্মাননায় ভূষিত করবেন, সেই হাফেজে কুরআনগনের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান প্রদর্শন করা কুরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শামিল। আর তাঁদের অবমাননা পবিত্র কুরআনেরই অবমাননার শামিল।
কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কুরআনের ভাষায়, রাসুলে কারীম স. এর দৃষ্টিতে যাঁরা শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত সেই ওলামায়েকেরাম ও হাফেজে কুরআনগণ সমাজে আজ নানাভাবে অবহেলার শিকার।
এভাবে কুরআনের খাদেমগণ, হাফেজ সাহেবানেরা যাতে অবহেলিত না হন, কোনভাবে যাতে তাঁদের অবমাননা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। হাফেজ সাহেবদেরও উচিত যেহেতু তাঁদের অন্তরে পবিত্র কুরআনের আমানত সংরক্ষিত সেহেতু কোনভাবে যাতে তাঁর খেয়ানত না ঘটে, অবমাননা না হয় সেভাবে জীবন যাপন করা এবং কুরআনের তিলাওয়াত ও চর্চা জারী রাখা।
সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসতে হলে ঘরে ঘরে কুরআনের তিলাওয়াতের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। বাড়িয়ে দিতে হবে কুরআনুল কারীমের চর্চা। জীবনকে ঢেলে সাজাতে হবে কুরআন -সুন্নাহর আলোয়।
আসুন! কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিখি, কুরআনের শিক্ষা আহরণে মনোনিবেশ করি, কুরআনের হাফেজ, আলেম ও কারী সাহেবানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। কুরআনের শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের একনিষ্ঠ সহযোগী হই। সর্বোপরি কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সমাজবিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করি।
লেখক-
খতীব-
শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউট জামে মসজিদ, কক্সবাজার।
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক-
কক্সবাজার ইসলামী সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ।