তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন
# হাসপাতালসমুহে রোগীর চাপ
# অধিকাংশ ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বরে আক্রান্ত
# তরল খাবার, বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শ 
# ন্যাশনাল গাইডলাইন পালনে নির্দেশনা

গরমের তীব্রতা বেড়েই চলছে। গত ২ সপ্তাহের প্রচন্ড গরমে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে প্রাণিকূল। মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে সারাদেশের মত কক্সবাজারেও। গত এক সপ্তাহ যাবৎ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করছে। গরমের কারণে  বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে তাপজনিত রোগির সংখ্যা। তাপদাহে চিকিৎসা ও করণীয় বিষয়ে ন্যাশনাল গাইডলাইন পালনের উপর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ মন্ত্রণালয়।
এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এ সংক্রান্ত জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: ইয়াসিন আরাফাত এ সংক্রান্ত মূল বক্তব্য  উপস্থাপন করেন। সদর হাসপাতালের সকল চিকিৎসককে 'তাপদাহে করণীয়' শীর্ষক ন্যাশনাল গাইডলাইন পালনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সদর হাসপাতালে তাপদাহের ও নানা কারণে ভর্তিরোগীর সংখ্যা বেড়ে ৬৯৪ জনে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা : আশিকুর রহমান। বহির্বিভাগেও রোগীর চাপ বেড়েছে বলে তিনি জানান। 
এদিকে শহরের প্রাইভেট হাসপাতালের পাশাপাশি সদর হাসপাতালে রোগির চাপ সামলাতে ত্রাহি অবস্থা চিকিৎসকদের। গতকাল ও কক্সবাজারে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গরমের তীব্রতা আরো ৪/৫ দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গরমের তীব্রতার কারণে এমনিতে নিম্নআয়ের মানুষ চরম দূর্বিসহ জীবন কাটছে।  এর সাথে গরমজনিত রোগের কারণে  পরিবারে চলছে ত্রাহি অবস্থা। দৈনিক ৫ শতাধিক রোগিকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের। গরম, নিত্যপণ্যের দামের র্উধমূখিতা, রোগের তীব্রতা সব মিলিয়ে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আশিকুর ররহমান জানান, গরমের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রতিদিনই রোগির ভীড় বাড়ছে। আমাদের হাসপাতালে ২৫০ শয্যার। কিন্তু রোগি ভর্তি রয়েছে (গতকাল সকাল ১১টা পর্যন্ত ) ৬৯৪ জন। যেভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগি আরো বাড়তে পারে। ভর্তি হওয়া রোগির মধ্যে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ঠজনিত রোগির সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বরের রোগি ক্রমাগত বাড়ছে।  তিনি রোগ থেকে রক্ষা পেতে বিনা কারণে  গরমে বাইরে না যাওয়া, প্রচুর পরিমানে পানি পান করা, ফলের রস পান এবং পরিস্কার পরিছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন-ভাইরাসজনিত জ্বর, ডায়রিয়া, সর্দি-কাঁশি শিশুদের বেশি আক্রমণ করছে। এছাড়া হিটস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে। ফলে আপাতত গরমে বাড়ির বাইরে বের হতে না পারলে ভাল। 
তিনি আরো জানান- ভর্তি রোগির পাশাপাশি গতকাল বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন রেকর্ড সাড়ে ৬শ জন রোগি।
কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের কয়েকজন চিকিৎসক বলেন-তীব্র গরমের কারণে  সাধারণত হিট এলার্জি, হিট এক্সোসন, হিট ক্রাম এবং হেপাটাইটিস-বির সমস্যা প্রকট হয়। এ সংক্রান্ত রোগি বেড়েছে সদর হাসপাতালে। বিশেষ করে ঘামের কারণে হিট এলার্জির প্রকোপ দেখা যাচেছ। এ রোগসমুহ থেকে বাঁচতে হলে পারতপক্ষে গরম এড়িয়ে চলা বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত গরম এড়িয়ে চলা উচিত। পাশাপাশি ডায়রিয়ার কারণে পানিশূন্যতা হলে কিডনিরোগ জটিল হতে পারে। এজন্য প্রচুর পরিস্কার ও বিশুদ্ধ পানি পান জরুরি। সাধারনত গরম ও ঠান্ডা মিশে এ সময় রোগ বৃদ্ধি পায়। এক্ষত্রে ডাব, লেবুর শরবত এবং বিশুদ্ধ পানি পানের বিকল্প নেই। তিনি গরমজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এদিকে অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ  হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা দুর্বিষহ দিন অতিবাহিত করছে। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিও হাসফাঁস করছে। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্থি নেই। প্রখর রোদে সাধারণ শ্রমিকদের জীবন চলছে দূর্বিসহ। গত কয়েক দিন থেকে হঠাৎ করে তাপমাত্রা বাড়ায় ঘরে ঘরে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। দিনমজুর, রিক্সা চালক, খেত-খামারিরা প্রচন্ড রোদের কারণে চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছে। 
কক্সবাজারের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন, বর্তমানে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, গরমজনিত রোগের কারণে  দেশব্যাপী রোগির সংখ্যা বেশি। গরমে রোটা নামক ভাইরাসের আক্রমনের কারণে ডায়রিয়া রোগি বেড়ে যায়। এ সময় পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তরল খাবারের পাশাপাশি স্যালাইন খাওয়াতে হবে। গরমে শিশুর ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের প্রভাব বেশি হবে স্বাভাবিক। শিশুদের এসব রোগ থেকে মুক্ত রাখতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.