টানা ছুটিতে পর্যটন খাতে ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা

টানা ছুটিতে পর্যটন খাতে ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা
ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ, দুইয়ে মিলে ছিল লম্বা ছুটি। তাই টানা ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ভিড় করে ৪ লাখের বেশি পর্যটক। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে এসব পর্যটক সমুদ্র সৈকতের লোনাজলে মেতেছিলেন নিজেরদের মতো করে। কেউ লোনা জলের ঢেউয়ে শরীর ভাসিয়ে উপভোগ করছেন সাগরের আবহ। আর কেউবা সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘুরে ফিরে লোনা জলের হাওয়ায় উচ্ছ্বসিত নিজের মতো। ফলে ঈদ আর বৈশাখের উৎসব বসেছে সমুদ্র শহরের আনাছে—কানাচে। উপেক্ষিত বৈশাখ মাসের শুরুর তীব্র রোদও।

এদিকে পহেলা বৈশাখ উৎসবের দিনও মাতোয়ারা ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজার। ভ্রমণপিপাসুরা যেমন নোনাজলে মাতোয়ারা ছিলেন ঠিক তেমনি তারকামানের হোটেলগুলোতে নেচে—গেয়ে ও গ্রামীন বাংলার নানা আয়োজনে মুগ্ধ হন। 
কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের টানা ছুটিতে কক্সবাজারে কি পরিমাণ পর্যটকের সমাগম হয়েছে তার কোন সরকারি হিসেব নেই। তবে কক্সবাজারের ৫ শতাধিক হোটেল মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজের ৮০ শতাংশ রুম পর্যটকের ভরপুর ছিল। সেই হিসেবে হোটেল মোটেল রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজ কতৃর্পক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবার ঈদ ও পহেলা বৈশাখের টানা ছুটিতে কক্সবাজারে ৪ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম হয়। এতে পর্যটন ব্যবসার সবখাতে প্রায় ৩ শো কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।
আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা আরও বলেন, এবারের টানা ছুটিতে পর্যটকদের তুলনামূলক হয়রানি কম হয়েছে। যেহেতু প্রশাসন কঠোর নজরদারি ছিল তাই পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। আশা করি, সামনের দিনগুলো পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন।
 
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানান, রমজানের পুরো এক মাসের খরা কাটিয়ে ঈদ ও পহেলা বৈশাখের টানা ছুটিতে আশানুরুপ পর্যটক সমাগম ঘটায় খুশি ব্যবসায়িরা। শুক্রবার কক্সবাজারের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ৭০—৮০ শতাংশই বুকিং হয়েছে। পর্যটক আরও বাড়ছে। যেহেতু টানা ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের একটু বাড়তি চাপ থাকে, তাই হোটেল কক্ষের বুকিং সহ দুর্ভোগ ও হয়রানি লাগবে আগাম তথ্য জেনে ভ্রমণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘ঈদ পরবর্তী ১০ দিনের যে ছুটি, এ ছুটিতে ভ্রাম্যমাণ টিম মাঠে রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশও কাজ করছে। প্রতিটি হোটেলেই জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ টিমের নম্বর দেয়া হয়েছে, যাতে পর্যটকদের কোনো অভিযোগ থাকলে তা জানানোর জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত পর্যটকদের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
পহেলা বৈশাখ  :
পহেলা বৈশাখের উৎসবে মাতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজার। ভ্রমণপিপাসুরা যেমন নোনাজলে মাতোয়ারা ঠিক তেমনি তারকামানের হোটেলগুলোতে নেচে—গেয়ে ও গ্রামীন বাংলার নানা আয়োজনে মুগ্ধ হন। ভ্রমণপিপাসুরা বলছেন, কক্সবাজারে ভিন্নমাত্রায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন করছেন তারা। আর দেশীয় সংস্কৃতির প্রচার এবং ভ্রমণপিপাসুদের আনন্দ দেয়া মূল উদ্দেশ্যে বলে জানিয়েছে পর্যটন সংশ্লিস্ট ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘নানা প্রান্ত থেকে আসা বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই শতাধিক ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। পর্যটকদের রাতদিন নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান ও নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘কক্সবাজার প্রতিটি হোটেলে কক্ষ ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। অতিরিক্ত ভাড়া যেন আদায় না হয়, সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পৃথক কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
টানা ছুটিতে শহরের বাইরেও পর্যটকরা কক্সবাজার—টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটোয়ারটেক, শামলাপুর ও টেকনাফ সৈকতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। ওইদিকে সৈকত ছাড়াও আছে পাহাড়—ঝর্ণা, প্রাকৃতিক গুহাসহ নানা দর্শনীয় স্থান। এ ছাড়া সাগরদ্বীপ মহেশখালী ও সোনাদিয়া, রামু বৌদ্ধ বিহার, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পর্যটকদের প্রবল আগ্রহ থাকলেও নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেখানে যেতে পারছেন না দর্শনার্থীরা।
বালুচরে নজর কাড়ে ‘ভিন্ন—কিছু’ :
সমুদ্রসৈকতের বালুচরে নজর কাড়ছে ‘আই লাভ কক্সবাজার’, দোলনা, টেলিভিশন ও দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক দৃশ্য। যা ঈদের টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে এসব ফটোবুথ। ভ্রমণপিপাসুরা বলছেন, ভিন্ন আঙ্গিকে সেজেছে সৈকতের বালুচর, যা ঈদে বাড়তি বিনোদন দিচ্ছে। আর আগত ভ্রমণপিপাসুদের ভিন্নভাবে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
বিশাল সাগরের সামনে বিশাল বালুচর; বালুচরে শোভা পাচ্ছে আই লাভ কক্সবাজার, দোলনা, টেলিভিশন ও লাল কাঁকড়ার সমুদ্রসৈকত। যা নজর কাড়ছে ঈদের টানা ছুটিতে কক্সবাজার বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসুদের। বিশাল সমুদ্রসৈকতকে পেছনে রেখে এসব ফটোবুথে ছবি তুলতে ব্যস্ত তারা।
বালুচরে ভ্রমণপিপাসুরা ৩৬০ ডিগ্রী ক্যামেরায় নানা ভঙ্গিতে ভিডিও ধারণ করছেন। কেউ কেউ ছবি তুলছেন আই লাভ কক্সবাজার, দোলনা বা টেলিভিশনের ফ্রেমে। প্রতিটি ফটো বুথে ভ্রমণপিপাসুদের উপচে পড়া ভিড়। ছবি তুলতে অনেকটা লাইনেও ধরতে হচ্ছে। ভ্রমণপিপাসুরা বলছেন, ঈদের টানা ছুটিতে ভিন্ন কিছু উপভোগ করছি কক্সবাজারে।
শুধু সৈকতের লাবনী পয়েন্ট; সুগন্ধা, কলাতলী, প্যারাসেলিং, ইনানী ও পাতুয়ার টেক সৈকতেও স্থাপন করা হয়েছে ফটোবুথ। যাতে ছবি তুলে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
পর্যটকরা বলছেন, কক্সবাজার সবসময় টানে। তাই কর্মব্যস্ত জীবনে ঈদের টানা ছুটি পেলেই কক্সবাজার ছুটে আসি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ঈদের টানা ছুটির সঙ্গে যোগ হয়েছে পহেলা বৈশাখ। তাই আগত পর্যটকদের ভিন্নমাত্রার আনন্দ দিতে চেষ্টা করা হয়েছে। কক্সবাজার সৈকতের ৬টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে ৩০টির মতো ফটোবুথ।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.