পানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা

পানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা
কক্সবাজারের মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী  মিষ্টি পান দেশ জুড়ে সামাদৃত। কদর সারাদেশে রয়েছে। বিশেষ করে  চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিষ্টি পান বাড়তি আকর্ষণ।

এবার মহেশখালীতে পানের উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি কিছুদিন আগে ভালো দাম পাওয়া গেলেও এখন কমে গেছে বলে জানিয়েছেন এই এলাকার  পান চাষিরা। তাই ন্যায্য  মূল্য নিশ্চিতের দাবি পান চাষীদের।
দুই সপ্তাহ আগেও উপজেলায় প্রতি বিড়া পান বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। তবে বর্তমানে রমজানে পানের দাম কমছে। বর্তমানে প্রতি বিড়া পান বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এক বিড়া পান উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়ে ১৫০ টাকা। ফলে সে খরচ তারা তুলতে পারবেন কি না, এ নিয়ে শঙ্কা কৃষকদের। গত বছরেও এই এলাকার চাষিরা পান বিক্রি করে কিছুটা হলেও ন্যায্য মূল্য পেয়েছে। এবার লোকসানের শংকায় রয়েছেন এই এলাকার হাজারো পানচাষি।

মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন পান বাজারে গিয়ে দেখা যায়,  শতাধিক চাষি পান নিয়ে সারিবদ্ধভাবে বাজারে বসেছেন। দেশের নানা এলাকা থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা পান কিনে। তবে চাষিরা যে দাম হাঁকছিলেন, তার চেয়ে অনেক কম দামে পান বিক্রি হচ্ছে।
পান বিক্রি করতে আসা ও হোয়ানক ইউনিয়নের পানির ছড়া এলাকার পানচাষি শফি আলম  জানান, দুই সপ্তাহ আগে প্রতি বিড়া পান ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন একই পরিমাণ পান ২৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে আমরা হতাশ।
স্থানীয় পানচাষি ও ব্যবসায়ী নুরুল আফসার জানান, তিন বছর ধরেই পানের কাঙ্খিত মূল্য পাচ্ছিনা সিন্ডিকেটের কারণে । মাঝেমধ্যে দাম বাড়লেও তা এক মাসের বেশি স্থায়ী হয় না।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তদাররা  মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানের হাটে চাষিদের কাছ থেকে পান কেনেন ।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মহেশখালীতে মিষ্টি পানের চাষ করেন প্রায় ২৭ হাজারের বেশি চাষি। ৪ হাজার একর জমিতে ছোট-বড় প্রায় ১৩ হাজার বরজ রয়েছে। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বরজগুলোতে প্রতি হেক্টরে ২০ টন মিষ্টি পান উৎপাদিত হয়েছে। এবার বিড়াপ্রতি বড় পান ২৫০, মাঝারি ২০০ ও ছোট পান ১৫০ টাকা দাম পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের বারিয়াপাড়া এলাকার গ্রামে ১০ শতক জমিতে একটি পানের বরজ করেন স্থানীয় চাষি নুরুল ইসলাম । বরজে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে বাঁশের বেড়া ও ওপরে ছনের ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পানের বরজ। ভেতরে পানের লতা (গাছ) চিকন বাঁশের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। লতা থেকে পানপাতা বের হয়ে পুরো বরজ সবুজ রং ধারণ করেছে। বরজে ঢুকে পান কাটছেন নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, পানগুলো বাঁশের খাঁচায় ভরে পাশ্ববর্তী নয়া পাড়া বাজারে বিক্রি করেন তিনি। প্রথম দিকে ভালো দাম পেলেও গরম মৌসুমে এসে দাম কমেছে বলে জানান ওই চাষি।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, মহেশখালীর সাড়ে ৩ হাজার একর পাহাড়ি জমিতে সারা বছর পান চাষ হয়। তবে সমতলের ৫০০ একর জমিতে চাষ হয় অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত। বর্ষায় সমতলে পানি জমলে বরজের ক্ষতি হয়।
উপজেলার গোরকঘাটা, নতুনবাজার, টাইম বাজার, পানিরছড়া, কালারমারছড়া, জনতাবাজার ও শাপলাপুর বাজারে পানের হাট বসে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা বাজারে এসে মিষ্টি পান ক্রয় করে ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। দেশের বাইরেও রপ্তানি হয় পান।
চাষিরা জানান, বরজ থেকে পান সংগ্রহের পর দু-এক দিন ধরে রাখা যায়। উপজেলায় পান সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় চাষিদের বিপাকে পড়তে হয়।
এছাড়া মহেশখালীতে উৎপাদিত পান স্বাদে অনন্য। এটি দেশের গন্ডি পেরিয়ে সৌদি আরব, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
মহেশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, জাতে ভিন্নতা থাকায় দেশের অন্যান্য এলাকার পানের চেয়ে মহেশখালীর মিষ্টি পান স্বাদে আলাদা। মহেশখালী দ্বীপ এলাকার মাটির গুণগত পার্থক্যের কারণে এই এলাকায় মিষ্টি পান হয়। তিনি বলেন, পানের দাম এখন কিছুটা কমেছে তবে আশা করি চাষিরা এবছর পানের নায্যামূল্য পেয়ে লাভবান হবে। 
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিকি মারমা জানান, পানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত ও চাষীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয় নিয়ে তিনি অবগত আছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। পান চাষীদের স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.