করোনার মহামারিতেই চলছে দাঁতের চিকিৎসার নামে ভয়াবহ প্রতারণা। গ্রামের সহজ সরল মানুষেরা শিকার হচ্ছে প্রতারণার। শহরের অলিগলিতে এ সব ডেন্টাল ক্লিনিকের নিয়োজিত দালালরা গাড়ি তেকে নামলেই নানা প্রলোভন দেখিয়ে রোগিদের নিয়ে যায় দাঁতের চিকিৎসার তাদের নির্দিষ্ট ক্লিনিকে। সেখানে র্সবশান্ত করে ছাড়ে রোগিদের। কক্সবাজার পৌরসভার মধ্যেই নামে বেনামে গজিয়ে উঠছে দাঁতের চিকিৎসার কথিত অর্ধশত প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বলছেন রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে অনেকটা জোর খাঁটিয়ে গড়ে তোলা এ সব অবৈধ ক্লিনিকের বেশিরভাগই অনুমোদনহীন। নেই চিকিৎসকের উচ্চতর ডিগ্রি, দাঁতের চিকিৎসার জন্য যে যন্ত্রপাতি দরকার তার কোনটিই নেই। তবুও চলছে অপচিকিৎসার রমরমা বাণিজ্য।
জানা যায়, গত বছর ৯ নভেম্বর শহরের হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত ডেন্টাল ক্লিনিক সমুহে ভ্রাম্যমান আদালত ‘অনুমোদনহীন ডেন্টাল ক্লিনিক’ বন্ধে অভিযান চালিয়ে ৭টিকে সিলগালা করে দেওয়ার ৮ মাসের মধ্যে পুনরায় ক্লিনিকগুলো চালু করে মালিকেরা। সিভল সার্জন অফিসের কয়েকজন কর্মচারির সাথে লেনদেনগত সম্পর্কের কারণে এসব ডেন্টাল ক্লিনিক চালু করতে কোন সমস্যা হয়না বলে অভিযোগ। শহরের অভ্যন্তরে মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে নতুন প্যাথলজি গজিয়েছে ১২টি। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে শুধুমাত্র কতিপয় চিকিৎসকের আর্শিবাদে মোটা অংকের কমিশনের ভিত্তিতে উক্ত ডেন্টাল ক্লিনিকসমুহ গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।
সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা যায়,একটি ডেন্টাল ক্লিনিক খোলার জন্য সরকারি অনুমোদন, নির্দিষ্ট জায়গা, বিএমডিসির অনুমোদিত চিকিৎসক, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, ট্রেড লাইসেন্স, জনবলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র দরকার হলেও শহরের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠা এ সব ডেন্টাল ক্লিনিকের কোন কাগজপত্র নেই। ফলে অজ্ঞাত শক্তির বলে খুব সহজেই গড়ে উঠছে এসব প্রতিষ্ঠান।
রংচটা বিজ্ঞাপন, বাহারী সব সেবাদানের নাম করে ডাক্তারের নামের পাশে নানাসব উচ্চতর ডিগ্রি বসিয়ে সাধারণ রোগীদের প্রতারিত করছে উক্ত ডেন্টাল সেন্টার। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দিন দিন বেড়েই চলছে এর সংখ্যা। গতবছর ৮ নভেম্বর ভ্রাম্যমান আদালত শহরের হাসপাতাল সড়কে অভিযান চালিয়ে ৬টি অবৈধ ডেন্টাল সেন্টারকে জরিমানা ও শাস্তি প্রদান করে যা স্থায়ী ছিল মাত্র ৩ মাস।
খরুলিয়ার মাষ্টার পাড়ার গৃহবধু সাহেদা বেগম জানান, করোনার প্রকোপের মধ্যে হঠাৎ প্রচন্ড দাঁত ব্যাথা শুরু হলে পান বাজার সড়কে চিকিৎসা করাতে আসি। আমাকে নিয়ে কয়েকটি ক্লিনিকের লোকজন নানা সুবিধার কথা বলে টানাটানি শুরু করে। শেষমেষ আমার সিদ্ধান্তেই ডাঃ বশিরের কাছে চিকিৎসা করি। কিন্তু দালালের দৌরাত্ব্য দেখে মনে হয়েছে এটা যেন দাঁতের চিকিৎসার বাজার।
এদিকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিশেষ করে হাসপাতাল সড়কে অনুমোদন ছাড়া চলা ১২/১৩টি অনুমোদনহীন দাঁতের চিকিৎসা কেন্দ্রের মধ্যে ৯টিকে সিভিল সার্জন অফিস থেকে ৩ বছর আগে বন্ধের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কার কথা কে শুনে। নোটিশের তোয়াক্কা না করে দিব্যি চলছে এ সব ডেন্টাল সেন্টার। সিভিল সার্জন অফিস থেকে কালো তালিকাভুক্ত করে নোটিশ দেওয়ার ৪ বছর পরও দেদারছে চলছে এসব ক্লিনিক। নোটিশ পাওয়া এ সব অবৈধ প্রতিষ্ঠান সমুহ হল হাসপাতাল সড়কের ডিজিটাল ডেন্টাল পয়েন্ট, ডেন্টাল সার্জারি, ফ্যামিলি ডেন্টাল সেন্টার, কক্স ডেন্টাল সেন্টাল, মডার্ণ ডেন্টাল হাউজ, ওরাল ডেন্টাল, মুমিন রাজুধনন্তরি ডেন্টাল কেয়ার। কিন্তু কি কারণে কার শক্তিতে এত বছর এসব অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক চলে তা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনই ভালো জানে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চালানো অভিযান লোক দেখানো কিনা তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই ভালো জানেন। পাবলিকের বারোটা না বাজা পর্যন্ত হয়ত থামবেনা এসব ডেন্টাল সেন্টার। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে শহরে আরো শতাধিক অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক গজিয়ে উঠার আশংকা রয়েছে।