আংশিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধি আবছার উল্লাহ সিকদার। কুতুবদিয়ার দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নের আলী আকবর সিকদার পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। জীবনের ৫৫ বছর বয়সে ৩৭ বছর পার করেছেন মৃত ব্যক্তিদের শোক সংবাদ ঘোষণায়। পেশায় মাইক সার্ভিস ব্যবসা। শোক সংবাদ কিংবা ধর্মীয় সভার প্রচারণায় নিজের পারিশ্রমিক নেননি শুধু মাইকের ভাড়া নিতেন। ২০০৪ সালে মারা যান। বড় ছেলে জাহাঙ্গীর পিতার মাইক সার্ভিস ব্যবসার হাল ধরলেও শোক সংবাদ প্রচারণা করতে পারেন না।
ছোট ছেলে আলমগীর ১৯৯৭ থেকেই পিতার জীবদ্দশায় শোক সংবাদের ঘোষণায় নেমে পড়েন। হেফজ খানায় পড়েছেন। আলমগীর নিজেই পিতার মৃত্যুর শোক সংবাদ প্রচার করেছেন। ২০১০ পর্যন্ত পিতার মত শোক সংবাদ কিংবা ধর্মীয় সভার ঘোষণায় মজুরি নেননি। সংসারের তাগিদে এখন পারিশ্রমিক নিয়ে সংসার চালান সে। আলমগীরের ছেলে মো: ইমতিয়াজ উদ্দিন ধুরুং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণিতে পড়া-লেখা করে। গত দু‘বছর ধরে তাকেও শোক সংবাদের প্রচারণায় যোগ করিয়েছে।
আশ্চর্যের বিষয় যে, আবছার উল্লাহ, আলমগীর ও ইমতিয়াজ জন্ম থেকেই ৭০ ভাগ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। আলমগীর, ইমতিয়াজ প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী। দরাজ গলায় পিতা-পুত্র-নাতী ৩ জনের শুদ্ধ বাংলা ও কন্ঠ একই। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই কে ঘোষক। কোন প্রচারণায় আলমগীরের লিখিত নোট লাগেনা। মুখে পূর্ণ ঠিকানা ও বিষয়টা বলে দিলেই ভুল ছাড়া মাইকে প্রচারণা চলতে থাকেন। আবছার উল্লাহর ২ মেয়েও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।
আলমগীর বলেন, তিনি ২৭ বছর ধরে শোক সংবাদসহ বিভিন্ন প্রচারণা করে আসছেন লিখিত নোট ছাড়া। প্রতিদিন গড়ে অন্তত দু‘টি প্রচারণা থাকে। একই সময়ে হলে ছেলেকে দায়িত্ব দেন। ছেলেকে পড়া-লেখা করাতে চান পাশাপাশি বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা থাকবে। রাজনৈতিক পরিচয়ে দক্ষিণ ধুরুং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতের সভাপতি আলমগীর। ছেলে ইমতিয়াজ ইসলামি ছাত্র শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় দক্ষিণ ধুরুং ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, এক সময় শোক সংবাদ প্রচারণার ঘোষক তেমন কেউ ছিলনা। তখন আবছার উল্লাহ প্যাডেল রিক্সায় মাইক বেধে প্রচারণা চালাতেন। তিনি মারা যাবার পর তার ছেলে আলমগীর ও নাতী ইমতিয়াজও এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। কাকতালীয় ভাবে এই ৩ প্রজন্মের কন্ঠও একই। তারা আংশিক দৃষ্টি প্রতিবন্দীও বটে।