সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুবলে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা সম্ভব

সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুবলে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা সম্ভব
# কক্সবাজারে বক্তাদের অভিমত 

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন না করেও ১০৯ অনুচ্ছেদের অনুবলে হাইকোর্ট বিভাগ অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে রুলস অফ বিজনেস সংশোধন করে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
বুধবার (১৪ মে) বিকেলে "বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা : প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব" শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজার শাখা ও কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ। স্বাধীন বিচার বিভাগ ও পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত প্রধান বিচারপতির রোডম্যাপ অনুযায়ী সভায় আলোচনার ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক ও বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি নিশাত সুলতানা।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ছৈয়দ আলমের সভাপতিত্বে কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থাপিত ধারণাপত্রের উপর আলোচনা করতে গিয়ে আলোচকেরা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্টের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যেটি পরিপূর্ণ একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সিনিয়র সহকারী জজ সায়মা আফরীন হীমার সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার। 

সভায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশের আদালত গুলোতে ৪২ লাখের অধিক বিচারাধীন মামলা রয়েছে। যা বিচারের জন্য রয়েছে মাত্র দুই হাজার বিচারক। মামলার সংখ্যার অনুপাতে বিচারকের পদ সৃজন করে মামলার জট কমিয়ে আনাই হচ্ছে,  একমাত্র সমাধান। অথচ বিচারকের পদ বৃদ্ধি করা বা বিচারকের পদ সৃজনের কোন ক্ষমতা বিচার বিভাগের নেই। এ ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত। তাছাড়া, দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আদালতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। বিচার বিভাগ চাইলেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন বা স্থাপনা নির্মাণ করতে পারে না। কারণ আদালতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও স্থাপনা নির্মাণের ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত।  
অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, নিয়োগ, পদায়ন ও শৃংঙ্খলা বিধান বহুলাংশে নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত। শাসক শ্রেণী এই ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলাসমূহ বিচারের ক্ষেত্রে অযাচিত প্রভাব বিস্তার করতে সচেষ্ট থাকে। একইভাবে আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিচার বিভাগকে অযাচিত হস্তক্ষেপের মুখোমুখি হতে হয়। 
বিচার বিভাগের সক্ষমতাকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করতে বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু আইন মন্ত্রনালযের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়, তা মোট বাজেটের মাত্র ০.৩ থেকে ০.৮ শতাংশ। যা মৎস্য ও পশু সম্পদ মস্ত্রণালযের কিংবা বিটিভি'র মোট বরাদ্দের চেয়েও কম। এ বাজেট বিচার বিভাগের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। 
এ অবস্থায় বিচারকদের পদ সৃজন, বাজেট প্রাক্কলন, বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাজেট বরাদ্দকরণসহ প্রাসঙ্গিক সকল ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পৃথক "বিচার বিভাগীয় সচিবালয়" গঠনের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ন্যায় বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তাব প্রস্তুতক্রমে আইন মস্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন। সেটি দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন হবে বলে বক্তারা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 
জুলাই গণ অভ্যুথানের পর রাষ্ট্রের নানা বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন্য সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি তাঁর এক বক্তব্যে বলেছেন, বিচার বিভাগের সংস্কার না হলে অন্য সকল সংস্কার অর্থহীন হয়ে পড়বে। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণসহ বাংলাদেশের বিচার বিভাগের বড় বড় অর্জন সমূহ জাতি অর্ন্তবর্তী সরকারের নিকট থেকে পেয়েছে। তাই অর্ন্তবর্তী সরকারের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে এবং বিদ্যমান দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বিলোপের স্বার্থে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা আবশ্যক। সভার গৃহীত সুপারিশ সমুহ কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি রেজুলেশন আকারে প্রধান উপদেষ্টা সহ সংশ্লিষ্ট সকল জায়গায় প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এবং ২ এর বিচারক যথাক্রমে এস.এম জিল্লুর রহমান এবং ওসমান গণি, কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আক্তার হোসেন, দৈনিক সৈকত সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক, জাতি সংঘের সংস্থা ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, বেসরকারি সংস্থা বিএনডব্লিউএলএ সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, বিচারক, আইনজীবী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ আলোচনায় অংশ নেন এবং উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.