# অনিয়ম-সমস্যায় নিজেই রোগাক্রান্ত কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল নানান অনিয়ম-সমস্যায় জর্জরিত হয়ে উঠেছে। চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক চিকিৎসা বিভাগ। কক্সবাজারের স্থানীয় ২৯ লক্ষ, রোহিঙ্গা ১২ লক্ষ ও লাখ লাখ পর্যটকের সরকারি চিকিৎসাসেবার বাতিঘর এই হাসপাতাল। কিন্তু এই বাতিঘরই দিতে পারছে না আলোকিত চিকিৎসাসেবা। সঙ্কট-সমস্যা ঘিরে শুধু নেই আর নেই। অনিয়মের বেড়াজাল আর দুর্নীতি-বাণিজ্য জেঁকে বসেছে জেলা সদর হাসপাতাল। জনবল সংকটে সেবা দিতে চরম হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সরকারি এ সেবা প্রতিষ্ঠানটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। জনবল থেকে শুরু করে চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ভর্তি হওয়া রোগী ও চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষের সমস্যা লেগেই রয়েছে। হাসপাতালের সিসিইউ, আইসিইউ বন্ধ আর চালুর মধ্যেই যাচ্ছে। তার কারণ এনজিও কর্তৃক পরিচালিত ফান্ড বন্ধ। আবার নেই কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার। পুরান ও নতুন ভবনের লিফট অকেজো, চালু হলেও কখনো কখনো থমকে যায়। সিট, ভর্তি, ওষুধ বিক্রি ও অপারেশন বানিজ্য এখন স্বাভাবিক বিষয়।
আইসিইউ-সিসিউউ সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্সটি মাটিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লোকমুখে এটি আধুনিক হাসপাতাল বলা হলেও নেই এখন সেবা। তার সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বেশির ভাগ সরঞ্জাম অকেজো। চক্ষু বিভাগ, কিডনি, হার্ট এর কোন চিকিৎসা নেই।
বিশাল এ হাসপাতালের এক্স-রেও করা হয় হাতে গোনা। একই অবস্থা সিটিস্ক্যান মেশিনেরও। হাসপাতালের শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। কোনটিতে নষ্ট পানির কল। কল আছে পানি নেই প্রায়ই এমন অবস্থা হয়। টয়লেটের কোনটির দরজা ভেতর থেকে আটকানোর ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালের হেল্পডেক্স থাকলেও এটি রোগী বা দর্শনার্থীর ক্ষেত্রে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। প্রতিনিয়ত রোগীর স্বজনরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপারেশন আর ওষুধ কেনা নিয়ে দালালদের কবলে পড়ছেন। হাসপাতালের খাবারের মান নিয়েও রয়েছে রোগী ও স্বজনদের বিস্তর অভিযোগ।
যথাযথ চিকিৎসাসেবা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল থেকে শুরু করে চিকিৎসা সরঞ্জামসহ অনেক কিছুই নেই কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে।
এসব বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবরই বলে থাকেন, জনবল সংকট, ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু যন্ত্রপাতি বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
এসব নানাবিধ সমস্যা নিয়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে ভয়েস অব কক্সবাজার ভোলান্টিয়ার্স নামের একটি প্লাটফর্ম।
১৪ মে (বুধবার) সকাল ১০ টায় সদর হাসপাতালের উত্তর গেইটে এ কর্মসূচী পালিত হয়।
স্বেচ্ছাসেবী নেতা জাকির হোসাইন নয়নের সভাপতিত্বে রেজাউল করিমের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও ইমরান হোসেন নবী'র সঞ্চালনায় মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, মো: কামরুল হাসান।
অতিথির বক্তব্য রাখেন-কক্সবাজার পৌর সভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ, হেফাজত ইসলামি বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা শাখার সেক্রেটারী মাওলানা ইয়াছিন হাবিব, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কক্সবাজার জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান, এনসিপি নেতা খালিদ বিন সাঈদ, দৈনিক বণিক বার্তা'র কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি ছৈয়দ আলম।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন, ছাত্র প্রতিনিধি মো: ইউসুফ বিন নূরী, সংবাদকর্মী আব্দুর রশিদ মানিক, রুহুল আমিন, মো: হোসাইন, মো: রিয়াজ, মো: আবু বকর সিদ্দিক রাহী, রাজ মিতুল, মো: জাহেদ, ইবনে হাসান রিফাতসহ অনেক স্বেচ্ছাসেবী, ব্যবসায়ী, ছাত্র প্রতিনিধি।
বক্তারা আইসিইউ, সিসিইউ স্থায়ী চালু রাখা, কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করা ও হাসপাতালে জনবল সংকট নিরসন করার আল্টিমেটাম দেন। অন্যথায় আরো বৃহত্তর আন্দোলন করার হুঁশিয়ারী প্রদান করেন।