ঐতিহাসিক মদীনা সনদ, বদর যুদ্ধের চেতনা ও ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তা

ঐতিহাসিক মদীনা সনদ, বদর যুদ্ধের চেতনা ও  ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তা
হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর :

১. ঐতিহাসিক মদীনা সনদ:
রাসুলে কারীম স. মক্কা থেকে মদীনা হিজরত করার পর ‘মদীনা সনদ’ প্রণয়নের মাধ্যমে যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন তা-ই কল্যাণরাষ্ট্রের অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত । সে মদীনা সনদ বিশ্ব ইতিহাসের সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান, ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তা ও শান্তি-সম্প্রীতির ঐতিহাসিক দলিল। 
২. ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের চেতনা:
 হিজরতের দ্বিতীয় বছরই মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র মক্কার কাফের শক্তির হুমকির সম্মুখিন হয়। সে হুমকি মোকাবিলায় রাসুলে কারীম স. ঐতিহাসিক বদরের প্রান্তরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এটিই ছিলো ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার প্রথম রক্তস্নাত মহাসংগ্রাম বদরের যুদ্ধ। দ্বিতীয় হিজরী সনে মাহে রমযানের রোযা ফরয হয়। আর সে বছরই ১৭ রমযান সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। 
মুসলিম ও কুফরী শক্তির মধ্যে সংঘটিত সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী এটিই প্রথম বড় যুদ্ধ। সে যুদ্ধে রাসুলে কারীম স. ৩১৩ জনের নিরস্ত্র ঈমানদীপ্ত সৈন্যদল নিয়ে ১০০০ জনের সশস্ত্র কুফরী সৈন্যদলকে পরাভূত করে তাদের চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দেন। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে আসমানী সাহায্যে মাধ্যমে বদর যুদ্ধের এমন অভূতপূর্ব বিজয়ে মুসলমানদের ভিত অধিকতর দৃঢ় হয়। সঞ্জীবিত হয় অফুরন্ত ঈমানী শক্তি ও ভুবনজয়ী প্রেরণা। 

বদর যুদ্ধের সুমহান শিক্ষা, শাণিত চেতনা ও অনন্ত প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে ঈমানী ভ্রাতৃত্ববোধকে সুসংহত করে ইহুদী, নাসারা, কুফরী শক্তির মোকাবিলায় অগ্রণী হওয়া এবং নবভী আদর্শে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামোকে ঢেলে সাজানোই  মু'মিন-মুসলামনদের ঈমানদীপ্ত কর্তব্য। মু'মিন জনতা এই কর্তব্যবোধ থেকে দেশে দেশে ইসলামী রাষ্ট্রবিনির্মাণের প্রত্যয়ে বদরের চেতনায় যত দ্রুতই জেগে উঠতে পারবেন ততই কল্যাণ।
কবিতার ভাষায় বলি...
"বদর বিশ্ববুকে ঈমানের অবারিত ঝর্ণাধারা
বদর মু'মিন হৃদয়ে সজীবতার ফল্গুধারা।
বদর তো ইসলামের আলোকিত চাঁদ
বদর মানে বিশ্বময় ইসলাম জিন্দাবাদ।"
২. ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তা:
রাসুলে কারীম স. এর শাশ্বত আদর্শের আলোকে ইমলামী রাষ্ট্রবিনির্মাণের মাধ্যমেই নাগরিকের যথার্থ স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। রাসুলে কারীম স. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক মদীনা রাষ্ট্র তারই অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত।  
উপমহাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী ইসলামী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি তেমনই ইসলামী  রাষ্ট্রবিনির্মাণের সংগ্রামে নিবেদিত এক আদর্শিক প্লাটফরম। যার নেতৃত্বেই ১৯৫৬ সালে রচিত হয়েছিলো ইসলামী শাসনতন্ত্রের ঐতিহাসিক ২২ দফা মূলনীতি। এ সংগঠনেরই যুগান্তকারী স্লোগান "আইন আল্লাহর, সরকার জনগণের, জমি কৃষকের, কারখানা শ্রমিকের।" 
নেজামে ইসলাম পার্টির অভিভাবকত্বে উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গানেদ্বীনের হাতে ১৯৬৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভ করে ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তার আদর্শিক পাঠশালা ইসলামী ছাত্রসমাজ। ইলমে নবভীর চর্চা, ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিবাচক দিক অবলম্বনে নবপ্রজন্মকে বাতিলের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আদর্শ সৈনিকরূপে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজ কাজ করছে। সেই সাথে ইসলামের চিরন্তন সৌন্দর্যে যুবমননকে আলোকিত করে ইসলামী রাষ্ট্রবিনির্মাণের সংগ্রামে নিবেদিত করতে কাজ করছে বাংলাদেশ ইসলামী যুবসমাজ। 
২০২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশে স্বাধীনতার নতুন আবহ ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশধারাকে তরান্বিত করার এক সুবর্ণ সুযোগ বয়ে এনেছে। এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে ঈমানদীপ্ত কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের কর্মধারা বেগবান করার মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রবিনির্মাণের সংগ্রামকে জোরদার করতে হবে। যুবশক্তিকেও নবভী আদর্শের আলোয় সুসংগঠিত করে তরান্বিত করতে হবে ইসলামী রাষ্ট্রবিনির্মাণের মিশন। 
প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক পাঠ্যক্রমের সমন্বয়ে ইলমে নবভী চর্চা ও চারিত্রিক দৃঢ়তার অর্জনের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির ইতিবাচক জ্ঞান অর্জনসহ বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানেও নেতা-কর্মীদের অধিকতর যোগ্যতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। আদর্শিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিষ্ঠা, সচেতনতা, সময়ানুবর্তিতা, আলোকিত জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও সাংগঠনিক দক্ষতার সাক্ষর রাখতে হবে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কলাম

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.