পানকৌড়ি

পানকৌড়ি
খালেদা বেগম জ্যোৎস্না :

’নান্না দেখ দেখ মাছ গুলো কি ভাবে নান রুটি খাচ্ছে’। ভোর বেলায় দুই নাতিকে নিয়ে গোল দিঘীর পাড়ে হাঁটতে যাই উদ্দ্যেশ্য কিছুটা সাস্থ্য সচেতনতা, সাথে নাতি-নাতনিদের সাথে কিছুটা সময় কাটানো আর আশেপাশের পরিবেশ দেখানো। ওদের বিভিন্নমুখী প্রশ্নতে আমি নাজেহাল হয়ে পড়তাম। এদিকে প্রশ্ন চলতো আর সাথে হাঁটহাঁটি এর মধ্যে একদিন একটা কালো পাখি দেখিয়ে জানতে চায়লো কি পাখি, কি নাম, খায় কি? দেখলাম কালো সুন্দরী পান কৌড়ি। ওদের এতো অজস্র প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু পানকৌড়ির উড়ার দৃশ্য এবং ডুব দিয়ে মাছ ধরার কৌশল অনন্য।
পানকৌড়ি কিন্তু বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় দেখা যায় না, যে জলাশয়গুলোতে মাছ আছে সে সকল জলাশয়েই পানকৌড়ির দেখা পাওয়া যায়। এতো সাধারণ পাখি নিয়ে লিখার কি আছে, ঠিক কথা। কিন্তু যখন তার ডুব দিয়ে মাছ ধরার ব্যপারটি খেয়াল করবেন তখন দেখবেন ডুব দেওয়ার মধ্যে তার একটা ছন্দ আছে, খুব বেশী সময় ধরে পানকৌড়ি মাছ খুঁজে না। আর ডুবটা দেয় ঘুরে ঘুরে কোন সময় সোজা পুকুরের এ মাথা থেকে ও মাথা কোন সময় কোণাকোণি। তবে একবার ডুব দিলে বেশ কিছুক্ষন ধরে ডুব দিয়ে থাকতে পারে। তারপর পেটপুরে মাছ খেয়ে উড়াল দিয়ে তার গন্তব্যে চলে যায়।
আমি পাখি বিষয়ে গবেষনা করিনি আর পানকৌড়ি কে নিয়ে লেখাও আমার মূল উদ্দেশ্য না। যা বলতে চাই তা হলো আমাদের  সাথে পানকৌড়ির চরিত্রের একটা মিল আমি দেখতে পাই।

পরিবার থেকে শুরু করি। যদি যৌথ পরিবার হয় পরিবারে এমন কাউকে দেখবেন যে সে শুধু এক জনের কথা আরেক জনকে, আরেক জনের কথা অন্য জনকে বলে বেড়াচ্ছে এবং সেটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। তার সে উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়া পর্যন্ত সে তার প্রচেস্টা চালিয়ে যাবে কিন্তু এমনভাবে অভিনয় করবে সে যেন ননীর পুতুল, কিচ্ছু জানে না, কোন প্রমাণও পাবেন না। নিজের স্বার্থ হাসিল করে ডুব দিয়ে থাকবে কিন্তু মাঝখানে সুন্দর যৌথ সংসারটা তছনছ হয়ে পড়ে। যেমন পানকৌড়ি মাছ খাওয়ার পর উড়াল দেয়।
এখন তো একক পরিবারের সংখ্যা বেশী। ওরা যখন ছোট থাকে ভাই বোনের মাঝে মায়া-মমতার বন্ধন অটুট থাকে। বড় হলে বিয়ে হয়ে যে যার মতো থাকে, কিন্তু যখন বাপের বাড়ি থেকে কোন কিছু দেওয়া নিয়ে কারো ভুল ধারনা হয় তখন দেখা যায় আসল চেহারা, রীতিমত মা বাবার সাথে ঝগড়া শুরু করে। মাঝখানে একজন তুষের আগুনের মতো আগুন উসকে দিয়ে চুপচাপ দেখতে থাকে ঝগড়ার মোড় কোন দিকে যাচ্ছে। সে সুযোগ বুঝে তখন সবলের পক্ষে যোগ দেয়, যেখানে দূর্বলের পক্ষ নেওয়া দরকার। যখন তার স্বার্থ পূরণ হয় সে ডুব দেয় ঠিক যেমন করে পানকৌড়ি ডুব দেয়। আবার যখন নিজের স্বার্থে আঘাত লাগে তখন তার নিজের জ্বালানো আগুনে নিজে জ্বলতে থাকে, যাকে পায় তাকে আক্রমনাত্মক কথা শুনিয়ে দেয় নিজের দোষটা একবারও দেখে না।
পাড়া প্রতিবেশীর বেলায়ও একই দৃশ্য। কিছু মনুস্য এ ফ্ল্যাট থেকে অন্য ফ্ল্যাটে উপযাযক হয়ে উপদেশ দিয়ে আসে যাতে সুন্দর পরিবেশটা নষ্ট হয়, শুরু হয় মনোমানিল্য। এমনকি মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। যারা এ কাজগুলো করে তারা চুপ করে আড়ালে এসব নিয়ে মজা করে। প্রকৃতি কিন্তু কাউকে ছাড় দেয়না। এক পর্যায়ে নিজেরা যখন এ অবস্থার মধ্যে পড়ে তখন না থাকে সমবেদনা জানানোর লোক বা না থাকে দুঃখ বুঝানোর কেউ। তাকে ডুবন্ত অবস্থায়ই থেকে যেতে হয় । 
মাহে রমজান চলছে নামাজ দান খয়রাতের অভাব নেই সাথে খেজুর, ডাল, তেল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মজুদেরও কমতি নাই। কারা করছে ? আমরাইতো! এদের সিন্ডিকেটের মহামানব কিন্তু সম্মুক্ষে অতি মানবের বেশে থাকে। যিনি জলের কাকের (পানকৌড়ি) মতো সাধারন মানুষের মাঝে বাস করে এবং নিজের স্বার্থ লাভের কাজ চালিয়ে যায়। ঈদুল ফিতরের কথা বলাই বাহুল্য। সিন্ডিকেট কোথায় নেই বাস মালিক, দোকান মালিক, সব ব্যবসায়ী মহলে, চাকুরীর স্থলে বা বেশিরভাগ জায়গাতেই যেখানে অন্যকে ঠকিয়ে ব্যক্তিগত লাভের অংকটা ভারি। জবাব দিহিতার অভাবে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট সক্রিয়। চাকুরীর ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে পদো উন্নয়ন, আত্বীয়করণ, আর্থিক সুবিধা প্রদান, উপযুক্ত ব্যক্তিকে পদোউন্নয়ন না করে দমিয়ে রাখা যা সিন্ডিকেট তৈরীতে সহায়তা করে। এসব উর্ধতন ব্যক্তিরা অগোচরে সুবিধা নেওয়ার জন্য ডুব মেরে থাকে।
রাস্ট্রীয়তন্ত্র যদি সঠিক পদক্ষেপ নেন তবে এসব অরাজকতা অনেক কমে যাবে বলে আমার ধারনা। পানকৌড়ি তো শুধু মাছ ধরে খায়। আমরা যারা মানুষ বলে নিজেদের দাবি করি আমাদের মধ্যে অনেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষই খায়।
আমরা একটু সচেতন হই, সহমর্মী হই, তামাশা না করে মানবিক হই।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কলাম

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.