কক্সবাজারের কৃতি সন্তান ভাষাসৈনিক এড. মৌলভী ফরিদ আহমদ ঃ এক অবিস্মরণীয় মনীষা

কক্সবাজারের কৃতি সন্তান ভাষাসৈনিক এড. মৌলভী ফরিদ আহমদ ঃ এক অবিস্মরণীয় মনীষা
হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর :

কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদ নগর নামক পল্লী জনপদে জন্ম নেয়া জাতির এক মেধাবী সন্তান এড. মৌলভী ফরিদ আহমদ। তিনি ১৯২৩ সালে রামুর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম নাদেরুজ্জামান ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। আর মাতা মরহুমা জরিনা বেগম ছিলেন, একজন পরহেজগার গৃহিণী। 
আদর্শ বাবা-মা'র আদর-যত্নে বেড়ে উঠা গ্রামীণ ছেলে ফরিদ আহমদ ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠেন একজন জাতীয় নেতা। তিনি ছিলেন নিখিল পাকিস্তানের প্রাজ্ঞ জাতীয় রাজনীতিবিদ ও প্রখ্যাত ভাষাবিদ। একাধারে আইনাঙ্গন, সাহিত্যাঙ্গন, ক্রীড়াঙ্গন ও সামাজিক অঙ্গনে ছিলো যাঁর প্রদীপ্ত বিচরণ। 
ছোটবেলা থেকেই মেধাবী মৌলভী ফরিদ আহমদ কক্সবাজার হাইস্কুল ও  চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৪৬-৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর নির্বাচিত ভিপি হিসেবে ছাত্র জীবনেই জাতীয় অঙ্গনে বিরল কৃতিত্ব ও সাহসী নেতৃত্বের নজির স্থাপন করেন। ১৯৪৭ থেকে ৫২ সাল পর্যন্ত মাতৃভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রথম সারির বিপ্লবী সংগঠক ও সাহসী সৈনিক। তিনিই প্রথম ভাষা আন্দোলনের স্বার্থে ঢাকা কলেজের সরকারি চাকরি থেকে ইস্তেফা দেন।ভাষা আন্দোলনের সংগঠক তামাদ্দুন মজলিসের তিনি অন্যতম সদস্য ছিলেন। তাঁর দল নেজামে ইসলাম পার্টিও সাংগঠনিকভাবেই ভাষা আন্দোলনে সমর্থন যুগিয়েছেন। 

সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চতর ডিগ্রিধারী হয়েও তিনি আল্লামা আতহার আলী, আল্লামা সৈয়দ মুসলেহ উদ্দিন ও খতীবে আযম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ এর মতো উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওলামা-মশায়েখের ঈমানদীপ্ত রাজনৈতিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐতিহ্যবাহী নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগদান করেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মোহাম্মদ আলী যখন নিখিল পাকিস্তান নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি তখন এড. মৌলভী ফরিদ আহমদ ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল। জেনারেল ডিগ্রিধারী হলেও প্রখ্যাত আলেম-ওলামাদের সাথে ইসলামী রাজনীতির ময়দানে নেতৃত্বদান  ও ইসলাম বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জনের কারণে তিনি "মৌলভী ফরিদ আহমদ" হিসেবে সমাদৃতি লাভ করেন।
তিনি নেজামে ইসলাম পার্টির মুখপত্র মাসিক নাজাতের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্টের শরীক দল হিসেবে নেজামে ইসলাম পার্টি থেকে মনোনীত হয়ে পার্লামেন্টর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নিখিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পূর্বে কক্সবাজার থেকে মন্ত্রীত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত একমাত্র কৃতি সন্তান তিনিই। 
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীের জুলুম ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। সে প্রেক্ষাপটে তিনি "পুবাকাশে কালো মেঘ" শীর্ষক একটি প্রবন্ধও লিখেছিলেন। ১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর পশ্চিম পাকিস্তানের জননিরাপত্তা আইনে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে ২৭ দিন পর তিনি মুক্তি পান। তাঁর কারাজীবনের দিনলিপি "কারাগারে সাতাইশ দিন" এক অনবদ্য রচনা। 
১৯৭০ এর জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি নতুন রাজনৈতিক দল পিডিপির ব্যানারে কাজ করেন। তিনি এদলের ভাইস চেয়ারম্যানের পদও অলংকৃত করেন। 
১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তদের হাতে জাতির এ কৃতি সন্তান ও বিদগ্ধ ইসলামী  রাজনীতিবিদ নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন। আল্লাহ মরহুম এ নেতাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আমিন। 
তথ্যসূত্র-
১. মৌলভী ফরিদ আহমদ স্মরণে  সংবাদপত্রে প্রকাশিত ক্রোড়পত্র।
২. "একুশের মাওলানারা" - শাকের হোসাইন শিবলি।
৩. "ভাষা আন্দোলনে আলেমসমাজের ভূমিকা"- সাঈদ হোসাইন। 
লেখক-
ছাত্রবিষয়ক সচিব
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কলাম

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.