আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের সংঘাত রাজনৈতিকভাবে নিরসনে প্রস্তুত

আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের সংঘাত রাজনৈতিকভাবে নিরসনে প্রস্তুত
দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকা বিগত বছরের শেষ সপ্তাহে ২৯/১২/২০২৪ তারিখ এবং আগের সপ্তাহে ২২/১২/২০২৪ তারিখ অন্তবর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে লিখেছিলাম, আমাদের সরকার শুধু মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সাথে যোগাযোগ,সম্পর্ক রাখলে হবে না, চলমান যুদ্ধে বিজয়ী আরাকান আর্মির সাথেও নিজেদের স্বার্থে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। গোপনে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করতে হবে,লেনদেন করতে হবে। অন্যথায় এখনও রাখাইন রাজ্যে থাকা ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকেও বাংলাদেশে তাড়িয়ে দিতে পারে। বর্তমানে আমাদের সাথে বৈরী সম্পর্কের প্রতিবেশী ভারতের সাথে আগে আরাকান আর্মির সম্পর্ক মোটেও ভাল না থাকলেও এখন আরাকানে ভারতের বিপুল অর্থনৈতিক স্বার্থ থাকার কারণে ভারত গোপনে আরাকান আর্মির সাথে সর্ম্পক বেশী উন্নয়ন করেছে বলে প্রকাশ। অতীতে আমাদের সকল সরকারই প্রতিবেশী ভারতের সাথে সম্পর্ক নিয়ে বেশী ব্যস্থ ছিল, আর এক প্রতিবেশী মিয়ানমারকে তেমন গুরুত্ব দেয় নাই। এখন বিদ্রোহী আরাকান আর্মি আরাকান রাজ্য প্রায় সম্পূর্ণ দখল করার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের অবশ্যই আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে, দেশবাসী তা প্রত্যাশা করেন।        
আমাদের পত্রিকার আহবানে প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা তা না জানলেও অন্তবর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আরাকান আর্মির সাথে সরকার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে মর্মে প্রকাশ্যে ঘোষণা শুনে আমরা কক্সবাজারবাসী চরম অস্বস্তির মধ্যে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছি।
নববর্ষের দ্বিতীয় দিনে বিবিসির সুত্র দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে,সামরিক পদক্ষেপের পরিবর্তে রাজনৈতিক উপায়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের চলমান সংঘাত নিরসনে আরাকান আর্মি প্রস্তুত। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে এই কথা জানিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনটি। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের দক্ষিণতম প্রান্তে গোয়া টাউনশিপের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দিনই এই বিবৃতি আসে। সংগঠনটির মুখপাত্র খাইং থুখা বলেছেন,রাখাইন রাজ্যে যে ধ্বংসাত্মক অভিযান চলছে তা থামাতে পারবে কিনা তা জান্তা সরকারের ওপর নির্ভর করছে। খাইং থুখা বলেন, ’রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান খোঁজা শুরু থেকেই আমাদের নীতি। আমরা এই নীতি মেনে চলছি এবং আলোচনার দরজা খোলা রেখেছি। আমাদের আক্রমণ বন্ধ হবে কিনা তা মূলত শাসকগোষ্ঠী কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় তার ওপর নির্ভর করে’। চীনাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বেশীর ভাগ প্রকল্প আরাকান আর্মির দখলকৃত এলাকায় অবস্থিত। আরাকান আর্মির মুখপাত্র এসব প্রকল্প সুরক্ষার প্রতিশ্রæতি দিয়ে বলেছেন, ’আমাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিদেশী বিনিয়োগের বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে বলেছি জনগণের জন্য উপকারী যে কোনো বিনিয়োগের জন্য সর্বোত্তম সুরক্ষা এবং সহযোগিতা করব। এই নীতিতে কোন পরিবর্তন নাই।’
এদিকে ৩ জানুয়ারী নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় না এনে কুটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফেরত দান,অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ রোধ, দ্রুত প্রত্যাবাসন সহ সাত দফা দাবীতে কক্সবাজারের উখিয়ায় বানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক উপায়ে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকারসহ নিরাপত্তার সাথে জন্মভুমিতে বসবাস করার সুযোগ পাওয়ার সমস্যাও একই সাথে সমাধান হওয়ার সম্ভাবনার আলো দেখা যাচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শত দুঃখের মধ্যে এখনও বসবাসকারী দেশপ্রেমিক লাখ লাখ রোহিঙ্গারা মাতৃভুমি ত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে তাদের সমস্যার কথা দৃষ্টির অন্তরালে চলে যাবে। এখনও রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে বা অন্য দেশে চলে গেলে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার ও যুদ্ধরত আরাকান আর্মির মাথার ওপর থেকে একটা বোঝা চিরতরে সরে যাবে, যা তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। সুতরাং আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবাসনের জন্য অপেক্ষা না করে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদেরও যে যেভাবে গোপনে পালিয়ে এদেশে এসেছে সেভাবেই রাখাইনের নিজেদের বসতভিটাতে চলে গিয়ে অবস্থান করা উচিত। অন্যথায় রাজনৈতিক আলোচনার সময় সরেজমিনে গণনা থেকে রোহিঙ্গারা বাদ পরে যাবে, ’আমও যাবে, ছালাও যাবে’।

লেখকঃ একজন কলামিষ্ট, সাবেক সভাপতি কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটার, বহু বইয়ের প্রণেতা এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন সিনিয়ার আইনজীবী।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


কলাম

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.