ঈদের পরের তিনদিনে কক্সবাজারে ৫ লাখ পর্যটক আগমন

ঈদের পরের তিনদিনে কক্সবাজারে ৫ লাখ পর্যটক আগমন
পর্যটক সমাদরে ব্যস্ত সবাই

বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের পাশাপাশি পাহাড়, নদী ও মেরিন ড্রাইভের অপার সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিনই ছুটে আসেন বিপুল সংখ্যক পর্যটক। ঈদের ছুটিতে পর্যটকের এ সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। আগামী কয়েকদিন পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকবে কক্সবাজারের সবকটি বিনোদন কেন্দ্র। বুধবার থেকেই মূলত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। কক্সবাজারে ৫১৬ হোটেল-মোটেলের বেশিরভাগ কক্ষই বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের পরের তিনদিনে নগরীতে ৫ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সমুদ্র সৈকত ছাড়াও এখানে রয়েছে মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, শহরের অজ্ঞমেধা ক্যাং ও বার্মিজ মার্কেট, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক এবং রামুর বৌদ্ধ মন্দিরসহ নানা পর্যটন কেন্দ্র।
এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ ও কটেজ রয়েছে অন্তত ৫১৬টি। এসব আবাসিক হোটেলে কক্ষ রয়েছে ২০ হাজারের মতো; যাতে ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ২০ হাজারের বেশি। আর ছুটির দিনগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পর্যটক সমাগম ঘটায় অনেককে হোটেল কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। সেই হিসাবে কক্সবাজারে প্রতিদিন আবাসিক হোটেলগুলোতে দেড় লাখের বেশি পর্যটক থাকা সম্ভব নয়।

এই বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমকে কেন্দ্র করে তৎপর হয়ে ওঠে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও দালাল চক্রের লোকজন। এতে হোটেল কক্ষের ভাড়া ও খাবার রেস্তোরাঁসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্রের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার ঘটনায় বিরূপ সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই এবার কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় চারজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে নুরুল হোসেন ও ডালিয়া দম্পতি জানান, ঈদের টানা ছুটি। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে প্রথমবার কক্সবাজার আসা। কয়েকটি পয়েন্টে গিয়েছে। খুব ভাল লাগছে। খাবার দাবারের দামটা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রাজশাহী থেকে সরকারী চাকরীজীবি সাজেদুল ইসলাম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এসেছেন। সকালে বাস থেকে নেমেই সৈকতে নেমে পড়েছেন। সমুদ্রের নোনা চলে তার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে হৈ-হল্লুড়ে মেতেছেন।
তিনি বলেন, প্রথমবার লম্বা ছুটি পেয়েছি। এরআগে ছুটি পেলেও এতদূরে আসার সাহস পেতাম না। এবার তাই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি।
হোটেল কক্সটুডের পরিচালক আবু তালেব বলেন, সোমবারই আমাদের সব কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এখন শুধু আসার পালা। আমরাও পর্যটকদের জন্য নানা আয়োজন রেখেছি। যাতে তারা এবারের ঈদের ছুটি ভালভাবে কাটাতে পারেন।
হোটেল ভিসতা বের ব্যবস্থাপক আব্দুল আউয়াল বলেন, বুধবার সকাল থেকে আমাদের সকল রুমে মানুষ উঠেছে। সব কক্ষই আগামী ৫ দিন ভাড়া রয়েছে।
আগামী কয়েকদিনের এই জমায়েতকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। ট্যুরিস্ট পুলিশ, সৈকতকর্মী ছাড়াও নতুন করে চারজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট স্পেশাল দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, ইতিমধ্যে কক্সবাজারে পৌঁছেছে দুই লাখের মতো মানুষ। সৈকতের দর্শনার্থীদের তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ৬টি ট্যুরিস্ট হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি হেল্পডেস্কে ফাস্ট এইড বক্স সরবরাহের মাধ্যমে পর্যটকদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
ইতোমধ্যে সমুদ্রসৈকত এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ১টি ওয়াচ টাওয়ার এবং ৭টি পর্যবেক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কাজ সমাপ্ত করেছি ।
এ ছাড়া সমুদ্র সৈকতে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের দ্রæত উদ্ধারপূর্বক অভিভাবকদের নিকট হস্তান্তরের লক্ষ্যে চাইল্ড সাপোর্ট সেন্টার এবং পর্যটকদের হারিয়ে যাওয়া মোবাইল, মানিব্যাগ বা অন্যান্য মালামাল উদ্ধারপূর্বক প্রকৃত মালিকের নিকট হস্তান্তরের লক্ষ্যে প্রত্যেকটি হেল্পডেস্কে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার স্থাপন করা থাকবে যেখান থেকে মূহুর্তেই পর্যটকরা এই সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সুফিয়ান জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে এ চারজন ম্যাজিষ্ট্রেটকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

পর্যটন

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.