গভীর রাতেও সৈকতে সময় কাটাচ্ছে পর্যটকরা

গভীর রাতেও সৈকতে সময় কাটাচ্ছে পর্যটকরা
গভীর রাতে কক্সবাজার সৈকতে চেয়ার বসে থাকা পর্যটকরা
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গভীর রাতেও সাচ্ছন্দে ঘুরাফেরা করছে অসংখ্য পর্যটক। অনেকে সাগর পাড়ের চেয়ারে বসে অথবা সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে হাটছে, এতে বেশ আনন্দ উপভোগ করছে তারা। পর্যটকদের দাবি দিনের সৈকতের চেয়ে রাতের সমুদ্র সৈকত আরো সুন্দর। আর নিরাপত্তা নিয়ে বেশ খুশি তারা। তবে রাতের বীচকে আরো আকর্ষনীয় করা গেলে দেশের মানুষ আরো কক্সবাজার মুখি হতো বলেও মনে করছেন আগত পর্যটকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দম্পতি শাহরিয়ার মাসুদ আর নিলা চৌধুরী এসেছেন কক্সবাজার ঘুরতে। উঠেছেন একটি তারকা হোটেলে, রবিবার রাত প্রায় ১১ টার সময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মূল পয়েন্ট নেমে বেশ কয়েকজন পর্যটকের সাথে তারা সৈকতের প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করেছেন। এ সময় আলাপকালে তারা জানান, দিনের সমুদ্র দর্শনের চেয়ে রাতের সৈকত এবং সমুদ্র দর্শন অনেক বেশি সুন্দর। যারা কক্সবাজার ঘুরতে আসে তারা দিনের বেলায় ঘুরে বা গোসল করে রাতে হোটেলে ঘুমাতে চলে যায় তবে আমাদের মতে রাতের সৈকতের মজাই আলাদা।
নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন,আসলে দেশের সব জায়গায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে, আমি ঘরে থাকলে সেখানে যে আমি নিরাপদে থাকবো কেউকি বলতে পারে ? আসলে নিরাপত্তা নিজের উপর নির্ভর করে। আমি এখানে কোন সমস্যা অনুভব করছি না, এখানে অনেক মানুষ আছে আমাদের ভালই লাগছে। পার্শবর্তি চেয়ারে বসা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ডাক্তার সুকুমার বড়ুয়া বলেন, আমি স্ত্রী সন্তান সহ ২ দিন আগে কক্সবাজার এসেছি,তবে স্ত্রীর অনুরোধে রাতে সৈকতে এসেছি।
আমি আগে বেশ কয়েকবার কক্সবাজার আসলেও সৈকতে রাতে কখনো আসিনি এখন দেখছি রাতের সমুদ্র দর্শন, সমুদ্রের পানি ছোয়া, নোনা জলে পা ভেজানো সে এক অন্যরকম অনুভুতি। আমার খুব ভাল লাগছে, এ সময় তাঁর স্ত্রী নীলিমা বড়ুয়া বলেন, আমি ছাত্রবেলায় ২ বার কক্সবাজারে এসেছি তখন আমরা বন্ধু বান্ধবী মিলে রাতে এখানে দল বেধে ঘুরেছি আমার সেই স্মৃতি এখনো মানসপটে উজ্জ্বল। তাই আবারো এসেছি।

একটু দূরে চেয়ারে বসে গান গাইতে থাকা দুই পুরুষ পর্যটকের কাছে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আলাপ কালে খুলনার একটি আইটি প্রতিষ্টানে কর্মরত আসাদুল জামিল এবং মুকাদ্দির হাসান বলেন, আমার ছোট বেলা থেকে অনেক ভাল বন্ধু, স্কুল কলেজ একসাথে পড়ালেখা এখন দুজনের চাকরীও হয়েছে এক সাথে তাই প্রথম মাসের বেতন নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছি। তারা বলেন, কক্সবাজার শহরের রাস্তাঘাট গুলোর এত বাজে অবস্থা তা আগে জানলে আসতাম না,কিন্তু বীচ এলাকার দিকে রাস্তা অনেকটা ভাল।
তবে মূল শহরে এত বাজে অবস্থা কেন বুঝতে পারছি না। একটা দেশের অন্যতম পর্যটন নগরীর এই অবস্থা এটা মেনে নেওয়া যায় না। তবে বীচে আসলে মনটা ভাল হয়ে যায়, বিশেষ করে রাতে এখানে না আসলে বুঝতেই পারতামরা আসলে সমুদ্র এত সুন্দর। আমার মতে দিনের চেয়ে রাতের বীচ অনেক সুন্দর। এখানে নিরাপত্তা বেশ ভাল বলে মনে হয়েছে। আর সমস্যা সব জায়গায় থাকে, নিজে ভাল হলে জগৎ ভাল একটা কথা আছে। তাই আমি মনে করি রাতে বীচে না আসলে সব কিছু অপূর্ণতা থেকে যেতো।
তিনি জানান আমরা এখনো গতরাতেও প্রায় ২ টা পর্যন্ত ছিলাম অনেক ভাল লেগেছে। তবে এখানে কিছু ভিক্ষুক এবং পথশিশুদের উৎপাত বেশ বিরক্ত করে। এর মধ্যে শুনলাম কয়েকজন রোহিঙ্গা ভিক্ষুকও আছে।
এ ব্যাপারে কিটকট মালিক মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, সৈকতে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যটকরা নিরাপদে ঘুরাফেরা করেন, অনেক মহিলা পর্যটক রাতে বীচের পানিতে হাটাহাটি করেন, আমরা সার্বক্ষনিক তাদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকি এবং আমাদের সদস্য সহ সবাইকে বলা আছে রাতের পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থা করে তারা যেভাবে চেয়ার চায় যেভাবে করে দিতে এবং ভাড়াও কম রাখতে।
এ ব্যাপারে ট্যূরিষ্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, বীচে মধ্যরাত পর্যন্ত অসংখ্য পর্যটক খুবই নিরাপদে বসে সময় কাটায়, অনেকে পানিতে হাটে, অনেক নারী পর্যটকও রাতের সমুদ্রের সৌন্দর্য্য উপভোগ করে। আমরা সার্বক্ষনিক তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকি। তবে বিচ্ছিন্ন ভাবে বা দূরে কোথাও না যেতে আমাদের অনুরোধ থাকে।
তিনি বলেন একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে নিয়ে বিরুপ মনোভাব ঠিক না, কক্সবাজারের সৌন্দর্য বলে শেষ করা যাবে না। তাই সবাইকে দেশ এবং প্রকৃতিকে ভালবাসার অনুরোধ জানান তিনি।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

পর্যটন

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.