আশানুরূপ পর্যটক নেই কক্সবাজারে

আশানুরূপ পর্যটক নেই কক্সবাজারে
সৈকতে স্থানীয়দের ভিড়

ইংরেজি নববর্ষ বরণ ও থার্টিফার্স্ট নাইটে প্রতি বছর লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটলেও এবার আশানুরূপ পর্যটক আসেনি কক্সবাজারে। সম্প্রতি কয়েকটি নেতিবাচক ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়ায় আশানুরূপ পর্যটক আসেনি বলে জানালেন ব্যবসায়িরা। যার ফলে থার্টিফাস্ট নাইটের এই বিশেষ দিনেও ফাঁকা ছিল অধিকাংশ হোটেল-মোটেল। তবে সৈকতে স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত।
কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা বিধিনিষেধ না থাকলেও পর্যাপ্ত পর্যটক আসেনি কক্সবাজারে। যে কারণে এ রকম একটি বিশেষ দিনেও কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউসে অর্ধেকেরও বেশি কক্ষ ফাঁকা রয়েছে। বছরের প্রথম দিনে আরো ফাঁকা হয়ে যায় কক্সবাজার।
সম্প্রতি এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় এ রকম রিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর থার্টিফার্স্ট নাইট ও নববর্ষ উদযাপনে কম হলেও  লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। কিন্তু এ বছর ভিন্ন চিত্র। যে কারণে তারা হতাশ। যারা এসেছেন তাদের অধিকাংশই ব্যাচেলর। পরিবার নিয়ে তেমন পর্যটক কক্সবাজারে আসেনি।

হোটেল মাস্কাট এর একজন কর্মী জানালেন ডিসেম্বরের শুরুতে অগ্রীম বুকিং এর হিড়িক পড়েছিল কিন্তু পরপর দুইটি ঘটনার পরে অধিকাংশ বুকিংই বাতিল করা হয়েছে। যারা আসেনি তাদের বেশীরভাগ পুরো পরিবার নিয়ে আসার কথা ছিল। এছাড়া ডাল ভাত ৪০০ টাকা এবং কক্সবাজারে আসতে হোটেল বুকিং না দিলে রাস্তায় থাকতে হবে এমন প্রচারণায় পর্যটকদের মাঝে একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃস্টি হয়েছে। যার কারণে পর্যটকরা কক্সবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত হয়েছে। যারা সৈকতে ঘুরাঘুরি করছেন তাদের অধিকাংশই স্থানীয় লোকজন।
কক্সবাজার কলাতলীর হোটেল কক্স-ভিউ রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার হোটেলের ৬০টি কক্ষের মধ্যে মাত্র ২০টি কক্ষ বুকিং ছিল। আজ তারা চলে যাবে।
বছরের প্রথম দিনে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ১০টি কক্ষ বুকিং হয়েছে। অথচ অন্যান্য বছর এই সময়ে কোনো কক্ষই ফাঁকা থাকে না। কলাতলীর হোটেল-মোটেল ছাড়াও কক্সবাজারের প্রধান সড়কে অবস্থিত হোটেলেও কোন কক্ষ খালি থাকে না। এখন প্রধান সড়কে অবস্থিত সবকটি হোটেলই ফাঁকা।
তিনি বলেন, স¤প্রতি ধর্ষণের ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। যার জন্য কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমন অবস্থা কোন সময় হয়নি।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, যা ঘটেনি তার চাইতে বেশী প্রচার হওয়ায় এই অবস্থার সৃস্টি হয়েছে। বাস্তবে কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই।
কক্সবাজার পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ শহর। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা সবখানেই ঘটে। কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়া কক্সবাজারকে টার্গেট করেই অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রকাশ করেছে অতি আগ্রহ করে। অনেকেই কক্সবাজার না আসার জন্য পর্যটকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। যেন কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে ধ্বংস করতেই এসব প্রচার চালানো হচ্ছে। যারা অপরাধ করেছে তাদের ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা তাদের শাস্তি চাই।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানান, সাম্প্রতিক ঘটনার কিছুটা প্রভাব রয়েছে। এর সাথে অতিরিক্ত প্রচারণাও রয়েছে। আমরা পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্ত দিতে কাজ করছি। তবে এ ধরনের ঘটনার যেন কোনোভাবেই আর পুণরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য টুরিস্ট পুলিশ সজাগ রয়েছে।
বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো.মামুনুর রশীদ জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে টুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করছে। প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমান টিম কাজ করছে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

পর্যটন

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.