কক্সবাজারে লাখো পর্যটক

কক্সবাজারে লাখো পর্যটক
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটে। ছবিটি গতকাল তোলা
টানা ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। সাগরের নীল জলরাশিতে আনন্দ-উচ্ছ¡াসে মেতেছে সবাই। আগেই বুকিং হয়ে গেছে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজের প্রায় সব কক্ষ। এতে হাসি ফুটেছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মুখে। প্রচুর পর্যটক আগমনের কারনে কক্ষ না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন অনেক পর্যটক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহান বিজয় দিবসের এক দিনের ছুটি এবং শুক্র, শনিবারসহ সাপ্তাহিক টানা ৩ দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে সমাগম ঘটেছে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখন সৈকত জুড়ে লোকে লোকারণ্য। দীর্ঘ ঘরবন্দি সময় কাটানোর পর মুক্তির আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে সৈকত জুড়ে। কখনও সাঁতার কেটে কখনও বিভিন্ন রাইডে চড়ে অবকাশে মেতেছেন লাখো পর্যটক। তবে হোটেলগুলোতে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
কুমিল্লা থেকে কক্সবাজার এসেছেন সাইমুন ও তুলনা দম্পতি। সাইমুন বলেন, ২০ দিন আগে বিয়ে হয়েছে আমাদের। ছুটি পেয়ে কক্সবাজারে চলে এলাম। খুবই ভালো লাগছে জীবন সঙ্গীর সাথে কক্সবাজারের মনোরম পরিবেশে সময় কাটাতে পেরে। আমরা মেরিণ ড্রাইভের একটি হোটেলে উঠেছি। আগেই রুম বুক করে রেখেছিলাম। তাই কোন সমস্যা হয়নি।
ফেনি থেকে আসা আরেক পর্যটক মুক্তার হোসেন বলেন, আমরা আগে রুম বুক না করে কক্সবাজার এসে বেকাদায় পড়েছি। মাঝারি মানের একটা হোটেলের রুমও এখন ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া চাইছে। কোনমতে ৫ হাজার টাকায় একটা রুম ম্যানেজ করেছি।

কক্সবাজার বৃহত্তর বীচ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান জানান,  একসাথে কয়েকলাখ মানুষের সমাগম ঘটায় আমরা এখন বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় বুক বেধেছি। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। আশা করছি, বিগত করোনাকালের ক্ষতি আমরা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবো।  
দিনের বেলা ভ্রমনের জন্য কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটন স্পট থাকলেও এখানে রাতে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের রাতের বিনোদনের জন্য কনসার্ট বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে বলে অভিমত ট্যুর অপারেটরস্ এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার এর সভাপতি আনোয়ার কামালের। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকার এখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করে যৌথভাবে উদ্যোগ নিতে পারে ।
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্বপালনে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক পিন্টু কুমার রায়। তিনি বলেন, যাতে পর্যটকদের কোন সমস্যা না হয়, তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি সৈকতে আসা পর্যটকদের পানির পিপাসা মেটাতে আমরা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. সৈয়দ মুরাদ ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, কক্সবাজারে আসা বিপুল পর্যটক আগমনের সুযোগে একটি চক্র নানা অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার দিনব্যাপী কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনে পর্যটকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সেজন্য হোটেল ও রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় হোটেল সি-পার্লের দুটি কক্ষে থাকা দুজন পর্যটকের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া হয় এবং দুটি হোটেলকে জরিমানা করা হয়। এরমধ্যে হোটেল সি-পার্লকে পাঁচ হাজার ও হোটেল ওপেলাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে পর্যটকদের কোনও ধরনের অভিযোগ থাকলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রে জানানোর জন্য মাইকিং করা হয়।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ছাড়াও হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী পাথুরে বীচ, মেরিন ড্রাইভ, রামুর বৌদ্ধ বিহার ও মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির দেখতেও ভিড় জমাচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। পর্যটকদের অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানি রোধে, পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশেও পুলিশের নারী সদস্যরা সৈকতে ঘুরছেন।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

পর্যটন

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.