মেটাভার্স কি সায়েন্স ফিকশনের সেই ভার্চুয়াল দুনিয়া?

মেটাভার্স কি সায়েন্স ফিকশনের সেই ভার্চুয়াল দুনিয়া?
প্রযুক্তি জগতে আলোচিত শব্দ মেটাভার্স। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভবিষ্যতের বিজ্ঞান কল্পকাহিনিকেই যেন বাস্তবে রূপদানে কোমর বেঁধে লেগেছে ফেসবুক ওরফে মেটা।

মেটাভার্স কী?

ফেসবুকটাই এক পর্যায়ে মেটাভার্স হয়ে যাবে মনে করেন জাকারবার্গ। কী এই মেটাভার্স, যার প্রতি ঝুঁকছে ফেসবুক? মেটা শব্দটি গ্রিক। এর অর্থ ওপর বা পরে। মেটা এবং ইউনিভার্স নিয়ে মেটাভার্স। সে হিসেবে মেটাভার্স অর্থ- পৃথিবীর বাইরের জগৎ।

মেটাভার্স নিয়ে এখন পর্যন্ত যা যা জানা গেলো, তাতে দেখা গেছে—এটি হবে মূলত ভিআর প্রযুক্তি নির্ভর। এর প্রধান উপকরণ হবে অগমেন্টেড রিয়েলিটি গ্লাস। এতে চোখজোড়া আর চারকোণা ফোনের ডিসপ্লেতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। চশমা পরে চোখের সামনেই দেখা যাবে ত্রিমাত্রিক জগৎ। কথা বলা, মিটিং সবই মনে হবে সামনা-সামনি হচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট পরলেই ব্যবহারকারী চলে যাবেন ভার্চুয়াল জগতে। তবে এর সঙ্গে স্মার্টফোন অ্যাপসহ অন্য কিছু ডিভাইসও উচ্চগতির ইন্টারনেটও থাকা চাই।

যেভাবে কাজ করবে মেটাভার্স
মেটাভার্স একটি বিস্তৃত ধারণা। এ সম্পর্কে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট ম্যাথুউ বল বলেন, এটি আমাদের ডিজিটাল ও ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডকে বিস্তৃত করবে। জাকারবার্গ নিজেই বলেছেন, মেটাভার্স শুধু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নয়, এর চেয়েও বেশিকিছু।
মেটাভার্সে এমন সব কাজ করা যাবে, যা এখনও মনে হবে অবিশ্বাস্য কিংবা কাল্পনিক। এই প্রযুক্তির সাহায্যে ভার্চুয়ারি অংশ নিতে পারবেন কনসার্টে। এমনকি ঘুরতে যাওয়া, ভার্চুয়াল জামা-কাপড় কেনাও যাবে। সবই হবে ভার্চুয়াল জগতে। অর্থাৎ, এত কিছু করতে কোথাও যেতে হবে না আপনাকে। আবার ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ক্ষেত্রেও মেটাভার্স দারুণ কাজ করবে। কর্মীরা ভিডিও কলের পরিবর্তে একে-অন্যকে ভার্চুয়াল জগতে সরাসরি দেখতে পাবেন ত্রিমাত্রিক একটি অফিসের ভেতর।
কীভাবে তৈরি করা হচ্ছে মেটাভার্স?
সেপ্টেম্বরে ফেসবুকের রিয়েলিটি ল্যাবসের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রো বোসওর্থ এবং ফেসবুকের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ এক ব্লগ পোস্টে বলেন, মেটাভার্স একক কিছু নয়। এটি একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও তৈরি করা সম্ভব নয়। রাতারাতি তৈরিও হয়ে যাবে না। মেটাভার্স পরিপূর্ণতা পেতে সময় লাগবে আরও অন্তত ১০-১৫ বছর।
মেটাভার্সে আরও বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করেছে মেটা কর্তৃপক্ষ। এ প্রযুক্তিকে কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট শিল্পের অংশীদার, মানবাধিকার গোষ্ঠী, সরকার, অলাভজনক সংস্থা এবং অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের জন্য ৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে ফেসবুক। এ ছাড়া ইউরোপে মেটাভার্সের প্রসারে ১০ হাজার দক্ষ কর্মীও নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
তথ্যের সুরক্ষা থাকবে তো?
মেটাভার্সে তথ্যের গোপনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ফেসবুক। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি অতীতে যেভাবে ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবস্থাপনা করেছে তাতে উদ্বেগ থেকেই যায়। মেটাভার্সে ব্যবহারকারীদের আরও বেশি তথ্য থাকবে। এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ইন্টারনেট অভিজ্ঞতাকে আরও ভালো করতে ফেসবুক এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এটা আগামীতে গেমস আকারে, লার্নিং টুল হিসেবে আসতে পারে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটির মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ঘুরে আসতে পারেন। দর্শনীয় কোনও স্থানের দৃশ্যও উপভোগ করতে পারবেন।
সুমন আহমেদ মনে করেন, এর জন্য এখনকার চেয়েও উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রয়োজন হবে। ফাইভজির ইকোসিস্টেম লাগবে।
সূত্র: দ্য ফেডারেল, নিউজ এইটিন, এপি, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

প্রযুক্তি

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.