ভালোবাসার রকমফের!

ভালোবাসার রকমফের!
॥ শামীম আরা পারভিন সুমী ॥

চারবর্ণের একনাম ‘ভালোবাসা’। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এবং পবিত্রতম মানবিক অনুভুতি-ভালোবাসা, মানবহৃদয়ে যার অস্তিত্ব সদা বিরাজমান। যুগযুগ ধরে ভালোবাসাকে ঘিরে রচিত হয়েছে কতো শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতি, পৌরানিক উপাখ্যান। আছে নানা উত্থান-পতনের ইতিহাস। প্রেম-ভালোবাসার জন্য রাজা বাদশাদের সিংহাসন ত্যাগ, হানাহানী, মৃত্যু বিপ্লবের মত অমানবিক ঘটনার নজিরও অনেক। তবুও ভালাবাসার বন্দনা শেষ হওয়ার নয়।
ভালোবাসাকে সবাই সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারেন না। হৃদয়ে যেনো “পথ খুঁজে পথ যে হারায়” এর শক্তি যেনো অনন্ত, সুদুর প্রসারি । ভালোবাসা বিজয় দেয়, হৃদয়ে বিপ্লব ঘটায়, কখনো কখনো ভাঙ্গনের গান শোনায়। সময়ের প্রয়োজনে ভালোবাসা ভিন্ন রঙ অথবা ভিন্ন প্রকাশ ঘটায়। অনেকের ভাবনায় থাকে “ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কি”?
আবার কেউ কেউ কল্পনার জগতটাকে আরও মোহনীয় করার জন্য গেয়ে শোনায়, “ভালবাসবো বাসবোরে বন্ধু তোমায় যতনে,”।
স্বপ্নের প্রজাপতিরা যখন নির্দ্ধিধায় মুক্ত আকাশের বিশালতায় পথ খুঁজে ফেরে তখন তারা চাওয়া-পাওয়ার হিসাবের অংক না মিলিয়ে স্বপ্নের প্রাসাদ গড়ে। তাইতো ভালবাসায় বিভোর হওয়া চঞ্চল হৃদয় বলে, “ভালবাসি ভালোবাসি সেই সুরে কাছে দুরে, জনস্থলে বাজাই বাঁশি ”। কিন্তু উত্থান-পতনের সিড়ি বেয়ে পরক্ষণেই  ভালোবেসে প্রত্যাখাত হৃদয়ে আর্তনাদ ঝরে, “ ভালোবেসে যদি সুখ নাহি, তবে কেনো মিছে ভালাবাসা।

হঠাৎ পথের মাঝে ডানা ভেঙ্গে আহত প্রজাপতি বলে, “ভালোবাসা হয় যদি অপরাধ, তবে দুজনে সমঅপরাধী”। এ মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে হৃদয় ভালাবাসার কাঙ্গাল সাজে। তাই ভালাবাসার আকাশে রঙ্গিন ঘুড়ি সুতা ছিড়ে ভুপাতিত হয়ে বেজে উঠে, “ভালোবেসে গেলাম শুধু ভালোবাসা পেলাম না”।
#  বিশ্ব ভালোবাসা দিবস
কাল ১৪ ফেব্র‍ুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। হ্যাপী ভেলেন্টাইনস ডে। ভেলেন্টাইনস ডে এর কল্পকাহানী নিয়ে প্রাচীন পৌত্তলিকদের ১৭ শো বছরের আগের ইতিহাস কমবেশী সবার জানা । পৌরানিক উপাখ্যানের আলোকে এ কাহিনী সাত বা আট মতভেদে সাজিয়ে রচিত হয়েছে।
আসল বা মৌলিক কাহিনীটা খুঁজে পাওয়ায় যেন মহা-মুশকিল। এই দিনটির সুচনা লগ্ন থেকে সভ্যতার আধুনিকায়নে এটিকে নানা রূপ-রস দিয়ে মুখোশে সাজিয়েই আজকের বিশ্ব ভালাবাসা দিবস ! আর আধুনিকতার নামে এই দিবসের আগের দিনগুলোতে চলে ভালাবাসার ন্যাকামী ও নষ্টামি প্রকাশের মহড়া। যেমন- ৭ ফেব্রুয়ারি রোজ (গোলাপ) ডে, ৮ ফেব্রুয়ারি প্রপোজ ডে, পর্যায়ক্রমে চলে টকলেট ডে, টেডি ডে, প্রমিজ ডে, কিস্ ডে আরও নির্লজ্জ কত কিছুৃ। অতি দুঃখের বিষয় যে, সত্যিকার অর্থে সেন্ট ভেলেন্টাইনের ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের রক্তঝরানো তীব্রকষ্টের আর্তনাদের করুণ আহাজারি আমাদের হৃদয় ছোঁতে পারেনি ।
ভেলেন্টাইনের জীবনে  লোহারশিকলে বন্দী অফুরন্ত স্বপ্ন, দিগন্ত ছোঁয়া প্রত্যাশার চিরসমাধি বরণের হৃদয় বিদারক ঘটনাকে আমরা মানবিকতার  বিচারে আনতে পারিনি। তাইতো আমরা আজ ভালোবাসা দিবসে প্রতিনিয়ত বেহায়পনার দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। সর্বত্রই বিকৃত ব্যতিক্রম সাজসাজরব । অপসংস্কৃতির উশৃংখল মাতাল ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছেছ সারা দেশ। উম্মাদনা ও অশ্লীলতায় মেতেছে আবাল বৃদ্ধবণিতা। ভালোবাসা প্রকাশের বহুমুখী নোংরা কৌশল ও কদাচারের যেন শেষ নেই। এ বেলেল্লাপনার স্বরূপ বিশ্লেষণে যেনো  কলমও লজ্জা পায়, তেমন পরিস্থিতিতে পৌছে গেছি আমরা। ভবিষ্যত পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে-আন্দাজ করাও কঠিন।
# জাগ্রত হোক আসল ভালোবাসার ভুবন
প্রচলিত ভ্রান্তধারণার নোংরা পরিসর ক্রমান্বয়ে লুপ্ত হওয়া চাই। ভেলেন্টাইনস ডের সত্যিকার মর্মাথ উপলব্দির মাধ্যমে, সহজাত উপায়ে এদিনকে মর্যাদা দিতে হবে। এ দিবসকে ঘিরে যেনো সৃষ্টি না হয় আমাদের তরুণ প্রজন্মের অনাসৃষ্টি বা অধপতনের মুলকারণ।
এতো ভাঙ্গাগড়ার পরও আমরা আবার স্বত্থির নিঃশ্বাস ফেলি। আজও আমরা প্রত্যাশিত ভালবাসার সুর্যোদয় দেখি শিশুর হাসির সরলতায়, মায়ের পবিত্র চেহারায়, বাবার অনুপম সচেতনতায় আর কঠোর দায়িত্ববোধে। অসহায়ের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোয়, গরিব দুঃখীদের বুকে আগলে রাখায়, দুর্দশাগ্রস্থদর প্রতি পবিত্র সহানুভুতিশীলতায়। আজো ভালাবাসার পুজা হয়। আবার কখনো আকাঙ্খিত ভালবাসার সমাধি হয় ভগ্ন হৃদয়ের দুয়ারে। যেখানে দারিদ্রতা অভাব খিলবিল করে। স্বপ্নচারি বারেবারে  স্বপ্নাহত হয়। অন্ধকারগলির যেখানে প্রত্যাশাগুলো পথ হারিয়ে যায়। হাজারো কষ্টের পরেও মানুষ ভালবাসার স্বপ্নে বিভোর হয়। শীতের পর আবার বসন্তের গান বাজে। হারানো সুর আবার কন্ঠে ফিরে আসে। এমনি করে সুখে দুখে হাসি কান্নায় জয়-পরাজয়ে আর আশায় বেঁচে থাকে আমাদের ভালবাসা। জীবন ও জগতকে রাঙাতে ভালোবাসার বর্ণিল স্বপ্ন পথ খুঁজে।
তাই আমাদের আশা অন্তরের সব কলুষতা মুছে, বাধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ভালোবাসার পায়রা পথ খুঁজে পৌছে যাক স্বপ্নের প্রাসাদে। জয় হোক সুন্দর হৃদয়ে জয়, হোক পবিত্র ভালাবাসার, চিননন্দিত হোক ভালবাসার ভুবন ।
লেখিকা: সহকারী শিক্ষক, পেকুয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কক্সবাজার। পেকুয়া, কক্সবাজার।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কলাম

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.