# দুইবার ঠিকাদার বদল
#৬ বছরেও শেষ হয়নি কাজ
ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগের সময় উপকূলীয় জনগণের জানমাল রক্ষায় গঠিত 'মুজিব কিল্লা নির্মাণ প্রকল্প' কক্সবাজারে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির ফাঁদে আটকে পড়েছে। প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ৮টি মুজিব কিল্লার কাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি, বরং একের পর এক ঠিকাদার বদলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি ।
অভিযোগ রয়েছে—এ প্রকল্পে ব্যাপক নয়ছয় ও লুটপাট হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, প্রকল্প কর্মকর্তাদের যোগসাজশে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে মুজিব কিল্লা নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর প্রকল্প গ্রহণ করে। কক্সবাজার জেলার ৪টি উপজেলায় মোট ৮টি কেল্লা নির্মাণের জন্য তিন বছরের সময়সীমায় বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫ কোটি ৫০ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯২ টাকা। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণ—ছয় বছর পরও কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বললেই চলে। প্রকল্পে কাজের গাফিলতি, নিম্নমান ও সময়ক্ষেপণের কারণে দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ চার বছর আগেই বাতিল করা হয়।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম স্বীকার করেন, 'ঠিকাদাররা পালিয়ে গেছে, কাজ হয়নি, অনিয়ম হয়েছে। এজন্য প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।'
জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে—চকরিয়া উপজেলার চৈম্মারঘোনা ও মহেশখালী বড়দিয়া মুজিব কিল্লার কাজ ৬০ শতাংশ শেষ হলেও বাকি ৬টির কাজ প্রায় বন্ধই রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি কিল্লার কার্যাদেশ ২০২০ সালেই বাতিল করা হয়। চরণদ্বীপ তুলাতুলি, সোনাদিয়া ও চরপাড়া মুজিব কেল্লার নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে।
চরপাড়া কিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজল ব্রাদার্সকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। তাদের কাজে গাফিলতি ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প নতুন করে দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় যে ৮টি কিল্লা নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ ছিল, সেগুলোর মধ্যে চকরিয়া উপজেলার চৈম্মারঘোনা মুজিব কিল্লার নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, চরণদ্বীপ তুলাতুলি মুজিব কিল্লার জন্য ১ কোটি ৮১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা, পেকুয়া উপজেলার শরৎঘোনা মুজিব কিল্লা নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৯৭ লক্ষ ৯৩ হাজার ১০ টাকা, পূর্ব উজানটিয়া মুজিব কিল্লা নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৬৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা, মহেশখালী বড়দিয়া মুজিব কিল্লা নির্মাণের জন্য দুই কোটি ১০ লাখ ৯০৫ টাকা, সোনাদিয়া মুজিব কিল্লার জন্য ২ কোটি ১৬ লাখ ১২ হাজার টাকা, চরপাড়া মুজিব কিল্লা নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৩৪ লাখ হাজার টাকা এবং কুতুবদিয়া আজম কলোনি মুজিব কিল্লা নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় আনুগত্য থাকা ঠিকাদারদের হাতে তুলে দেওয়ায় দুর্নীতি, গাফিলতি ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে পুরো প্রকল্পটাই ব্যর্থ হয়ে গেছে। তারা দাবি করেন, তৎকালীন জেলা প্রশাসক, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার ও ঠিকাদারদের একত্রিত দোষেই এত বড় বাজেটের সরকারি উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা বলেন, 'বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে একটি তদারকি কমিটি কাজ করছে। তবে দুর্নীতির কারণে প্রকল্পটি বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৩ সালের পর আর করা যায়নি।'