সাগর স্নানে বাড়ছে ঝুঁকি

সাগর স্নানে বাড়ছে ঝুঁকি
# ১০ বছরে মারা গেছে ৬০ জন, জীবিত উদ্ধার ৭৭৩ জন

কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণের জায়গা সমুদ্রস্নান। আর এই অপরূপ সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে অজানা এক মৃত্যুঝুঁকি। পর্যটকদের মধ্যে অতি উৎসাহী অনেকে লাল পতাকা’র নির্দেশানা না মেনে সাগরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যান। এতেই ঘটে মৃত্যু’র মত ঘটনা।
সী-সেইফ লাইফগার্ড দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে সমুদ্র সৈকতে সাগরে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের মধ্যে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৭৩ জনকে। আর মারা গেছে ৬০ জন। গত কোরবানের টানা ১০ দিনের ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগমে সাগরে ভেসে বাবা-ছেলে সহ মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।
১২০ কিলোমিটারের সমুদ্র সৈকতের নগরীতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের ৯০ শতাংশই সাগরের নোনা জলে স্নান করেন। কিন্তু এই আনন্দঘন মুহূর্তের পেছনেই লুকিয়ে আছে মৃত্যুর মত ভয়ঙ্কর এক বিপদ। সাগরের নিচে সৃষ্টি হওয়া গুপ্ত খাল ও স্রোতের ফাঁদ পড়ে অনেকে তলিয়ে যায় সাগরে। আর এই দূর্ঘটনায় বেশি পতিত হয় অসচেতন পর্যটক।

জানা গেছে, সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পর্যন্ত মাত্র ৫ কিলোমিটার জুড়ে কাজ করছেন সী-সেইফ লাইফ গার্ড নামে একটি বেসরকারি সংস্থার ২৭ জন উদ্ধারকর্মী। কিন্তু বাকি ১১৫ কিলোমিটার টেকনাফ থেকে কলাতলী এবং শৈবাল পয়েন্ট থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত সম্পূর্ণ অরক্ষিত। যদি কেউ নিখোঁজ হন ওই অঞ্চলগুলোতে, উদ্ধার কার্যক্রম প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তার মধ্যে পর্যটকদের অনেকে সুইমিং জোন সহ নিরাপদ গোসলের নির্দেশনা মানছেননা বলে জানান পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সী-সেইফ লাইফ গার্ড।
সী-সেইফ লাইফ গার্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, ‘সাগরে গোসল করতে নামা পর্যটকদের অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়। তাদের ওখান থেকে ফিরাতে চাইলে কথা শুনেনা। অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করে। এদিকে পর্যটকরা আমাদের মেহমান হওয়ায় জোর করা যায়না। এতেই ঘটে বিপদ। যদিও অনেকে সচেতন।’
এই দূর্ঘটনা এড়াতে সচেতনতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লোকবল, দক্ষতা ও নজরদারি বাড়ানোর কথা বলছেন বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মোবারক হোসেন বাপ্পী জানান, ভ্রমণ করতে এসে কখনো অতি উৎসাহী হয়ে বিপদে পড়া যাবেনা। এক্ষেত্রে নিজের জীবন রক্ষার্থে নিজেকেই সর্তক থাকতে হবে।
সিলেট থেকে আসা রাব্বী চৌধুরী নামে আরেক পর্যটক জানান, ‘সর্তক হওয়া যেমন জরুরী ঠিক তেমনি ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অনেকে সাগরে গোসলে ঝুঁকির বিষয়ে অনেক কিছু জানেনা। এই ক্ষেত্রে প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব এবং লোকবল বাড়ানো দরকার। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তারা দায়িত্ব এড়াতে পারেনা।’
এ প্রসঙ্গে সী-সেইফ লাইফগার্ডের টিম ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গত ১০ বছরে সমুদ্র সৈকতে সাগরে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের মধ্যে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৭৩ জন। আর মারা গেছে ৬০ জন। এ নিয়ে সম্মিলিতভাবে সকলের আন্তরিকভাবে কাজ করা দরকার। এছাড়া বেড়াতে আসা পর্যটকদেরও সচেতন হতে হবে নিজের জীবনের নিরাপত্তায়। লাল-হদুল পতাকা বুঝে বা সী সেইফ লাইফগার্ডদের নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করা উচিৎ।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাহিদুল আলম জানান, ভ্রমণরত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বীচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটি সবসময় মাঠে রয়েছে। পর্যটকের সমাগম বেশি হলে বিভিন্ন পয়েন্টে টিম ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করা হয়। এছাড়া লাইফগার্ড ও বীচ কর্মীরা মাঠে রয়েছে। তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে প্রশাসন। পর্যটকদেরও সচেতন হতে হবে নিজেদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.