রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ
# অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত

উখিয়া টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত স্কুল থেকে স্থানীয় শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে ও চাকুরিতে  পূনর্বহালের দাবিতে উখিয়ার কোট বাজারে স্টেশনে ৭ ঘণ্টা ব্যাপী  সড়ক অবরোধ পালন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (৩  জুন) সড়ক অবরোধ সহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শিক্ষকরা। ফলে এসময়  কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা। এছাড়াও টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের উনচিপ্রাং এলাকায় বিক্ষোভ হয়।
দুপুর ২ টার দিকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের  আশ্বাস অনুযায়ী  উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুল হোসেন চৌধুরী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষা কার্যক্রম আপাতত  ঘোষণা করলে  আন্দোলনরত শিক্ষকরা  তাদের সড়ক অবরোধ স্থগিত ঘোষণা করেন।

এ সময় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উখিয়া বিএনপির আহ্বায়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উখিয়া বিএনপির সদস্য সচিব সুলতান মাহমুদ  চৌধুরী এবং উখিয়া জামায়াতের আমীর মাওলানা আবুল ফজল উপস্থিত থেকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের পক্ষে একত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন। একই সাথে জনস্বার্থে এবং জনগণের ভোগান্তি দূর করতে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ জানান।  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনুরোধে আন্দোলনরত  শিক্ষকরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করলে দীর্ঘ সাত ঘণ্টার পর অবশেষে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলনকারীরা জানান, ব্র্যাক, কোডেক, ফ্রেন্ডশিপ, মুক্তি এবং ধারা নামক এনজিও সংস্থাগুলোর পরিচালিত স্কুলগুলোতে রোহিঙ্গা শিক্ষকদের রেখে স্থানীয় প্রায় ১,২৫০ জন শিক্ষককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এর প্রতিবাদেই রাজপথে নেমেছেন তারা।
উখিয়া ও টেকনাফ ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের ফাণ্ডে পরিচালিত শিক্ষা প্রকল্পের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে চাকরীচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ৭ ঘন্টার অধিক সময় ধরে যানচলাচল বন্ধ ছিল। যার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষকরা।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে জানান, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত এনজিও সংস্থা ব্র্যাক, কোডেক, ফ্রেন্ডশীপ, মুক্তি কক্সবাজার, জেসিএফ সহ শিশু শিক্ষা কেন্দ্রেগুলোতে রোহিঙ্গা সেচ্ছাসেবকদের বহাল রেখে ১২৫০ জন বাংলাদেশি শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করে। যা দাতাসংস্থা ইউনিসেফের ফাণ্ড সংকট বলে দাবী করে আসছে।
উখিয়া উপজেলার কোর্টবাজারে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা  বলেন, দাতাসংস্থা ইউনিসেফের নির্দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো স্থানীয় বাংলাদেশি শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করেছে। স্থানীয়দের বাদ দিয়ে দেশের অন্যান্য বিভাগ ও জেলা থেকে তাদের আত্নীয়স্বজন এবং নিজস্ব জনবল নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা  বলেন, চাকরি ফিরে পেতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সহ এনজিও সংস্থাগুলোর প্রধানদের কাছে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। কোন কাজ হয়নি। এর আগেও বহুবার আন্দোলন করা হয়েছে। তারা বার বার অর্থ সংকট দেখিয়ে যাচ্ছে। কোনো মতে চাকরি ফিরিয়ে দিচ্ছে না। তাই রাজপথে আন্দোলনে নামতে শিক্ষকদের বাদ্য করা হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, স্থানীয় শিক্ষকরা সড়কে আন্দোলন করছে শুনেছি বিষয়টি জেলা প্রশাসক বারাবরে অবগত করা হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকুরীচ্যুত ৪ হাজার শিক্ষকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্প ভিত্তিক সকল শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হল। কার্যক্রম চালু করতে হলে স্থানীয় শিক্ষকদের সাথে নিয়ে প্রকল্প চালু করতে পারবে। অন্যতায় প্রকল্প বন্ধ থাকবে।
আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেন উখিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী, উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল ফজল, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াত সেক্রেটারী সোলতান আহমদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি পেশার নেতৃবৃন্দ।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.