তহবিল সংকটে অনিশ্চয়তায় দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষা

তহবিল সংকটে অনিশ্চয়তায় দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষা
# স্থানীয় শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ
# কক্সবাজারে ইউনিসেফ এর সাংবাদিক সম্মেলন

তহবিল সংকটের কারনে দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের শিশু তহবিল-ইউনিসেফ। সংস্থাটি বলছে, টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতা না এলে শরণার্থীশিবিরে ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর ওপর প্রভাব পড়বে।
গতকাল সোমবার সকাল ১১ টায় ইউনিসেফ'র কক্সবাজার ফিল্ড অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির কক্সবাজারের প্রধান অ্যাঞ্জেলা কার্নে এসব তথ্য জানান। এসময় ইউনিসেফ চট্টগ্রাম ফিল্ড অফিসের প্রধান মাধুরী ব্যানার্জী, যোগাযোগ কর্মকর্তা আবিদ আজাদ, ব্যবস্থাপক মূসা দ্রাম্মেসহ সংস্থাটির অন্য কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাঞ্জেলা কার্নে জানান, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এক হাজার ১৭৯ জন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকের সঙ্গে ইউনিসেফের চুক্তি শেষ হবে। এই স্বেচ্ছা-সেবকরা মূলত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সদস্য। কক্সবাজারে ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষাকেন্দ্র আপাতত জুন মাসের শেষ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে। পুনরায় খোলা হবে কি না, তা নির্ভর করবে নতুন করে তহবিল পাওয়ার ওপর। শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও গ্রেড-১ ও ২ শ্রেণিভুক্ত স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষকেরা আর চাকরিতে থাকবেন না।

তিনি বলেন, "ইউনিসেফ অন্যান্য কিছু তহবিল আকৃষ্ট করতে সক্ষম হলেও এগুলো পেতে বিলম্ব হবে। ফলে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে ইউনিসেফ পরিচালিত শিক্ষা কেন্দ্রগুলো। এতে করে ইংরেজি, বিজ্ঞান ও সামাজিক শিক্ষা শেখানো বন্ধ হয়ে যাবে।অগ্রাধিকার পাবে বর্মিজ ভাষা, গণিত, জীবন দক্ষতা ও সামাজিক-মানসিক শিক্ষা। এসব পাঠদানে যুক্ত থাকবেন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের শিক্ষকেরা। এ ছাড়া ইউনিসেফ নতুন পাঠ্যবইও বিতরণ করবে না।পুরোনো বইগুলোই শিক্ষাবর্ষ শেষে নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুনর্বিন্যাস করে দেওয়া হবে।

ইউনিসেফ জানিয়েছে, বছর শেষের মূল্যায়ন এবং প্লেসমেন্ট টেস্ট (শিশু কোন শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য তা বের করার পরীক্ষা) বাতিল করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকরা ছুটির সময় পারিশ্রমিক পাবেন না এবং অর্থ না আসা পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমে পড়ানো চালিয়ে যেতে পারেন।
এদিকে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন  এনজিওতে কর্মরত ১২৫০ জন চাকুরিচ্যুত স্থানীয় হোষ্ট শিক্ষককে পূর্ণবহাল দাবিতে উখিয়ায় দ্বিতীয় দিনের মত মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি সহ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন স্থানীয়রা।
সমাবেশ থেকে কড়া হুশিয়ারী দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত গুলি করলে-ও পিচপা হবে না। চাকুরিচ্যুত স্থানীয় হোষ্ট শিক্ষককে পূর্ণবহাল করা না  হলে আইএনজিও এবং এনজিওর কোন গাড়ি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকতে দেওয়া হবে না এবং এই আন্দোলন চলবে।
বিক্ষোভকারী শিক্ষকরা জানান, ব্র্যাক, কোডেক, ফ্রেন্ডশিপ, মুক্তি, কোস্ট ফাউন্ডেশন ও জেসিএফসহ বিভিন্ন এনজিও রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য পরিচালিত স্কুলগুলোতে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা উভয় সম্প্রদায়ের শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল। তবে হঠাৎ করে ‘অর্থ সংকটের’ কারণ দেখিয়ে শুধু স্থানীয় ১ হাজার ২৫০ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়, যেখানে রোহিঙ্গা শিক্ষকরা বহাল থাকেন। তাদের অভিযোগ, আরও প্রায় ৩ হাজার শিক্ষককে ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, 'অর্থ সংকটের কারণে শিক্ষা প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই চাকরির উপর ভিত্তি করে অনেকের ভবিষ্যত জড়িয়ে আছে। তারা এখন খুবই চিন্তিত ও ক্ষুব্ধ। এই পরিস্থিতির বিষয়টি ইউনিসেফ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.