বৈরি আবহাওয়ায় সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচল বন্ধ

বৈরি আবহাওয়ায় সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচল বন্ধ
# নিত্যপণ্যের সংকটে বেড়েছে দাম

বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেন্টমার্টিন নৌ রুটে বন্ধ আছে নৌ-যান চলাচল। ফলে দ্বীপে নিত্যপণ্যের সংকট তৈরির পাশাপাশি বেড়েছে দামও।
সর্বশেষ গত ২৫ মে সেন্ট মার্টিনে পণ্য ভর্তি নৌযান গেছে। ওই দিন বিকেলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপজেলা প্রশাসন সেন্ট মার্টিন নৌপথে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর রবিবার দুপরে সপ্তম দিনে এসে পন্য ও যাত্রী নিয়ে টেকনাফ থেকে যাত্রা দেয়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে ৩ টি ট্রলার যাত্রা দিলেও উত্তাল সাগর পেরিয়ে ট্রলার সমুহ দ্বীপে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ট্রলারগুলো ফিরে শাহপরীরদ্বীপে ভিড়েছে সন্ধ্যায়।
বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্টমার্টিনে প্রায় ১১ হাজার মানুষ বসবাস করে। দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্য টেকনাফ থেকে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করা হয়। সর্বশেষ গত ২৫ মে সেন্ট মার্টিনে পণ্যভর্তি নৌযান গেছে। ওই দিন বিকেলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপজেলা প্রশাসন সেন্ট মার্টিন নৌপথে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর রবিবার পর্যন্ত কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যায়নি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ছৈয়দ আলম বলেন, দ্বীপের অধিকাংশ দোকানে নিত্যপণ্যের সংকট রয়েছে। কয়েকটি দোকানে কিছু চাল, আটা–ময়দা, ভোজ্যতেল, জ্বালানি (গ্যাস সিলিন্ডার) থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। তিনি বলেন, ‘বাজারের উত্তর পাশে কয়েকটি দোকানে গত শুক্রবারও একটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৮–২০ টাকায়, সেই ডিম টেকনাফে বিক্রি হয় ১০ টাকা। ১ কেজি আলু ৫০ টাকায় বিক্রি করা হলেও টেকনাফে দাম ৩০ টাকা। সব ধরনের সবজির দাম প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। শুক্রবার পর্যন্ত ভোগ্যপণ্য ও শাকসবজির সরবরাহ মোটামুটি ছিল, আজ বাজারে প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যই মিলছে না।’

সেন্টমার্টিন দ্বীপের মুদি দোকানি মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় তাঁর দোকানে সব ধরনের পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে। কেবল পর্যাপ্ত চাল মজুত রয়েছে। মো. হোসেন নামের আরেক দোকানি বলেন, ‘কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়েক লাখ টাকার সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডিম ও চাল নিয়ে এসে মজুত করেছিলাম। সেই মালামাল প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে। নৌযান চলাচল দ্রুত স্বাভাবিক না হলে দ্বীপের মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে।’
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলামও খাদ্য সংকটের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু খাদ্যসামগ্রী সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
টেকনাফ–সেন্টমার্টিন নৌপথের সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, নৌপথটিতে ৩০টি ট্রলার যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সব নৌযান বন্ধ রয়েছে। রবিবার দুপুরে পণ‍্য ও যাত্রী নিয়ে ৩ টি ট্রলার দ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা দেয়। কিন্তু উত্তাল সাগরের কারণে ট্রলার দ্বীপে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। ট্রলার সমুহ রবিবার সন্ধ্যায় শাহপরীরদ্বীপে ভিড়েছে।
সেন্ট মার্টিনের সাবেক ইউপি সদস্য ও বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খান বলেন, দ্বীপে এখন পর্যটক না থাকায় বাসিন্দারা এমনিতেই সংকটে রয়েছেন। এর মধ্যে বৈরী আবহাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধিতে আরও সংকটে পড়েছেন। দ্বীপের বাসিন্দাদের অনেকটাই ঘরবন্দী সময় কাটছে।
টেকনাফ উপজেলা খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল হাবিব ভূঁইয়া বলেন, ১৫ দিন আগে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জন্য বরাদ্দ ভিজিডি, ভিজিএফসহ খাদ্যসহায়তার চাল এসেছে। জেলা প্রশাসনের নিজস্ব তহবিল থেকে দ্বীপের জন্য বরাদ্দ হওয়া ১০ মেট্রিক টন চাল টেকনাফে নৌঘাটে এনে রাখা হয়েছে। ফলে চালের সংকট হবে না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়ানোর জন্যই নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। খাদ্যের সংকট নিরসনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাঠানো যায় কি না, সেই চেষ্টা চলছে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.