রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যের কারণে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে শত শত একর কৃষিজমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দূষিত বর্জ্যে নদী-খাল পরিণত হয়েছে ড্রেনে। বিষাক্ত পানি জমিতে পড়ায় ফসল হচ্ছে নষ্ট। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় শতাধিক কৃষক। ক্যাম্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
উখিয়ার পশ্চিম বালুখালী এলাকার কৃষক গফুর উল্লাহ বলেন, ‘২০১৭ সালের আগে প্রতি বছর জমিতে তিন ধরনের ধান ও নানা মৌসুমি সবজি হতো। এখন ২০ একর জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। যতই পরিষ্কার করি, ক্যাম্প থেকে পলিথিন, বোতল, মেডিকেল বর্জ্য এসে জমে জমি একেবারে নষ্ট করে ফেলেছে।’
আরেক কৃষক ফরিদ আলম বলেন, ‘গত ৮ বছরে জমিতে চাষ করতে পারছি না। কেউ কোনো ধরনের সহায়তাও দেয়নি। খুবই কষ্টে আছি।’
কুতুপালং এলাকার কৃষক মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, ‘দুই একর জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বর্জ্যে। আমরা খুব অসহায়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও এখন তার খেসারত দিতে হচ্ছে।’
তেলিপাড়ার জেলে জাফর আলম বলেন, ‘যে খালে মাছ ধরতাম, তা এখন নালায় পরিণত হয়েছে। মাছ নেই, পানি বিষাক্ত। কৃষিজমি ও নদী-খাল সবই শেষ।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল গফুর বলেন, ‘২০১৭ সালের আগে বালুখালীর বড় খালটি ছিল খুব উপযোগী। এখন সেখান দিয়ে কুতুপালং ক্যাম্পের আবর্জনা নদীতে চলে যাচ্ছে। খালের পাশের সব জমির ফল-ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফে ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। এসব ক্যাম্পের বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে জমিতে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতি বছর বৃষ্টি নামলেই কৃষকদের জমি ডুবে যায় বর্জ্যে। চাষাবাদ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রায় কয়েকশ একর জমি নষ্ট হয়ে গেছে।’
উখিয়া ও টেকনাফের কৃষি বিভাগ বলছে, রোহিঙ্গা বর্জ্যের প্রভাবে কৃষিজমির পরিমাণ ও উৎপাদন উভয়ই কমছে। বিভাগীয় তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে টেকনাফে আবাদি জমি ছিল ১৩ হাজার ৭২৮ হেক্টর, যা ২০২৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৬ হেক্টরে। একই সময়ে উখিয়ায় ১৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমি কমে ১৬ হাজার হেক্টরে নেমেছে।
সমুদ্র গবেষক মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্য নদী হয়ে সাগরে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে। এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।’
এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সবার সমন্বয়ে সমাধান বের করার চেষ্টা করবো। এনজিও ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এলাকাবাসীর দাবি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যের কারণে উখিয়া ও টেকনাফে অন্তত এক হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহায়তা পাননি তারা।