নার্স মিনারার কোলে পেকুয়া হাসপাতালের নবজাতক

নার্স মিনারার কোলে পেকুয়া হাসপাতালের নবজাতক
‘রাখে আল্লাহ, মারে কে’ এই বাক্যটি আবারও সত্য প্রমাণিত হয়েছে পেকুয়ায়। হাসপাতালের টয়লেটের ভেন্টিলেটর দিয়ে ফেলে দেওয়া সদ্য প্রসূত এক নবজাতককে জীবন্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার ঘটনা রীতিমত হইচই ফেলে দিয়েছে। বাবা-মার পরিচয়হীন এই কন্যা শিশুকে পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের কাছে দিনমজুর, প্রবাসী, সরকারি-বেসরকারি চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ি ও রাজনৈতিক নেতা থেকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের আবেদনের হিড়িক পড়ে। আর শিশুটিকে দত্তক দিতে রীতিমত আবেদনকারিদের সাক্ষাৎকারও নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

হাসপাতাল ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বুধবার রাতে শাহীনা আক্তার নামের আনুমানিক ৩০ বছর বয়সি এক নারী পেটের ব্যাথা নিয়ে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ব্যাথানাশক ইনজেকশন দেন। রাতের এক পর্যায়ে ওই নারী প্রশাব করার কথা বলে টয়লেটে যান। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালের নির্ধারিত সিটে না ফিরে উধাও হন। সেই থেকে ওই নারীর আর কোন হদিস নেই। শাহীনা আক্তার নামের ভর্তি হওয়া রোগীর ওয়ার্ডের পাশের আরেকটি ওয়ার্ডের জনৈক রোগীর এক স্বজন রাতে পয়ঃকাজ সারতে টয়লেটে যান। এসময় টয়লেটে সদ্য প্রসূত এক নবজাতককে পড়ে থাকতে দেখে তুলে নিয়ে আসে। পরে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।
সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, যে টয়লেটে নবজাতিকাকে পাওয়া গেছে সেটি পেটের ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হওয়া নারীর আলাদা ওয়ার্ডের টয়লেট। প্রস্রাব করতে গিয়ে ওই নারী সন্তান প্রসব করেন। পরে টয়লেটের ভেন্টিলেটর দিয়ে নবজাতককে বাইরে ফেলে দেন। তিনি জানতেন না ভেন্টিলেটরটির অপর পাশে আলাদা আরেকটি টয়লেট আছে।
পেকুয়ার ইউএনও মো. সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, বাবা-মার পরিচয়হীন এক নবজাতককে হাসপাতালের টয়লেট থেকে উদ্ধারের বিষয়টি বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপজেলা প্রশাসনের কাছে অবহিত করেন। পরে উপজেলা শিশু কল্যাণ কমিটি শিশুটির ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে জরুরি সভার আহবান করে।

এদিকে অভিভাবকের পরিচয়হীন নবজাতক উদ্ধারের খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শিশুটিকে এক নজর দেখতে হাসপাতালে অনেকে ভিড় জমান। তাদের অনেকে শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলে উপজেলা শিশু কল্যাণ কমিটি বরাবরে আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ১৫ জন দম্পত্তি নবজাতককে দত্তক নিতে আবেদন করেন।
ইউএনও বলেন, “ বিকালে উপজেলা শিশু কল্যান কমিটির জরুরি সভায় আবেদনকারিদের স্ব-শরীরে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সেখানে নবজাতকের সেবা-যত্ন, ভরণপোষণ ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তাসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স মিনারা খাতুন দম্পতিকে আপাতত দত্তক প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় নবজাতিকাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। “
সাইফুল ইসলাম জয় জানান, নবজাতকের বাবা-মার পরিচয় জানতে উপজেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। হাসপাতালে যে নামে ও ঠিকানায় ওই নারী ভর্তি হয়েছিল তা সঠিক কিনা সেই ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে- ভুঁয়া নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে শাহীনা আক্তার নামের কথিত রোগী ওই নারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল বলে জানান তিনি।
দত্তক নেওয়া নার্স মিনারা খাতুন একজন নিঃসন্তান নারী এবং ভবিষ্যতেও মা হওয়ার মত সম্ভাবনা নেই। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় নবজাতককে তার কাছে দত্তক দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে মিনারা খাতুন বলেন, সন্তানের মা হতে না পারা কতটা বেদনা ও কষ্টের তা ভূক্তভোগী নারীরাই অনুভব করতে পারেন। এখন নবজাতককে সন্তান হিসেবে পেয়ে খুবই প্রীতবোধ করছেন।
 
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.