চকরিয়ায় সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রকৃত জমি মালিকদের হয়রানীর অভিযোগ

চকরিয়ায় সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রকৃত জমি মালিকদের হয়রানীর অভিযোগ
চকরিয়ায় প্রতারণার মাধ্যমে জমি কিনে ভোগ দখলে যেতে না পেরে একের পর এক মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে প্রকৃত জমি মালিকদের হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় চক্রটি তথ্য গোপন করে প্রতারণার মাধ্যমে খতিয়ান সৃজন করে কৃষি ব্যাংক ডুলাহাজারা শাখা থেকে জমি মর্গেজের নাম দিয়ে হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল কোটি টাকা। বিষয়টি জানার পর প্রকৃত জমির মালিক তার বৈধ কাগজপত্র নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে হাজির হলে ভন্ডুল হয়ে যায় সেই  চক্রের মিশন। এমনই অভিযোগের কথা জানিয়েছে জমির মালিকপক্ষ। 

জমির মালিক জালাল উদ্দিন বলেন, খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়া মৌজার বিএস ৩০, ৬১, ও ৮৯ নম্বর খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক কবির আহমদের কাছ থেকে চারটি পৃথক রেজিষ্ট্রি কবলামূলে ১ একর ৪০ শতক জমি ক্রয় করেন আমার পিতা আকবর আহমদ। পরবর্তীতে ওই জমি সরস নিরষে বন্টনের সুবিধার্থে উপরোক্ত খতিয়ানের অপরাপর মালিকদের সাথে একটি রেজিষ্ট্রিকৃত অংশনামা সম্পাদিত হয়। ওই অংশ নামায় আমার পিতা আকবর আহমদ ছিলেন তৃতীয় পক্ষ। অংশনামা সম্পাদিত হওয়ার পর থেকে প্রত্যেকের জমি অদ্যাবধি পর্যন্ত ভোগ দখলে রয়েছেন। জমির মালিক জালাল উদ্দিন আরও বলেন, বিএস খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক কবির আহমদ তার অংশের জমি বিক্রি করে নি:স্বত্ববান হওয়ার পর ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী লামা উপজেলার ২৮৬ নং ফাঁসিয়াখালী মৌজার ফকিরাখোলা এলাকায় বসতি নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু উক্ত কবির আহমদ তার নামীয় সম্পত্তি বিক্রির তথ্য গোপন করে বিএস ৩০, ৬১, ও ৮৯ নম্বর খতিয়ান থেকে তার নামীয় অংশের বিক্রিত জমি নিয়ে পুনরায় বিএস ৬১২ নং খতিয়ান সৃজন করে। পরবর্তীতে উক্ত জমি হতে ৬৭ শতক জমি পার্বত্য লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী মৌজার ২৮৬ নং খরিনাখোলা এলাকার বাসিন্দা রেজাউল কবির মানিক ও খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল কবিরকে রেজিষ্ট্রি কবলামূলে বিক্রি করে দেন। এই জমি বিক্রির সময় কবির আহমদ পূর্বের বিক্রিত জমি সে তথ্যটিও গোপন করেন। আর জমি ক্রেতারাও পূর্বের সকল তথ্য গোপন করে তাদের ক্রয়কৃত জমি নিয়ে বিএস ৬৩২ নং খতিয়ান সৃজন করেন।
জমির মালিক জালাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবরে একটি লিখিতি আপত্তি দাখিল করি। পরবর্তীতে এসি ল্যান্ড পক্ষ বিপক্ষ কাগজপত্র যাচাই বাচাই করে কবির আহমদের সৃজিত বিএস খতিয়ান নম্বর ৬১২ ও রেজাউল করিম মানিক এবং মো. নুরুল কবিরের সৃজিত বিএস ৬৩২ নম্বর খতিয়ান বাতিল করে দেন। এসময় এসি ল্যান্ড আমার বাবা আকবর আহমদ কর্তৃক কবির আহমদের কাছ থেকে পূর্বের জমি ক্রেতা হিসেবে উক্ত জমি আমি ও আমার অপরাপর ভাইবোনদের নামে ৬৮৩ নম্বর বিএস খতিয়ান সৃজন করে দেন।  
জমির মালিক জালাল উদ্দিন বলেন, তথ্য গোপন করে সৃজন করা ৬৩২ নম্বর বিএস খতিয়ান এসিল্যান্ড চকরিয়া কর্তৃক বাতিলের বিষয়টি গোপন করে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৪ ধারায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এর আদালতে একটি এম আর মামলা দায়ের করেন রেজাউল করিম মানিক ও মো. নুরুল কবির। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে উভয় পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় বাখার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি সহকারি কমিশনার (ভূমি) চকরিয়াকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এছাড়া সহকারি কমিশনার (ভূমি) চকরিয়া কর্তৃক ইতিপূর্বে বাতিল করা বিএস ৬১২ ও ৬৩২ নম্বর খতিয়ান পূর্নবহালের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালতে অপর একটি নামজারী রিভিশন মিচ মামলা দায়ের করেন রেজাউল করিম মানিক ও মো. নুরুল কবির। বর্তমানে এ দুইটি মামলা পৃথক দুই আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

জালাল উদ্দিন বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে খুটাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেধাকচ্ছপিয়া পাগলিরবিল এলাকায় মাষ্টার হোমিও’র দোকানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় আমি ডুলাহাজার ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আয়াতুল্লাহ সওদাগরের সাথে পাগলিরবিল এলাকার মোহাম্মদ হোসেন সওদাগরের অফিসে একটি শালিশী বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ইউপি সদস্য আয়াতুল্লাহসহ শালিশী বৈঠকে উপস্থিত লোকজন নিয়ে হোমিও দোকানটি আগুনে পোড়ার হাত থেকে রক্ষা করি। কিন্তু পরবর্তীতে হোমিও দোকানের মালিক আবু সাঈদ মো. জুয়েল আমার পরিবারের সদস্যদের আসামী করে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে জালাল উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা জড়িত না থাকার বিষয়টি উঠে আসায় পুলিশ মামলা নিতে অনিহা প্রকাশ করে। অগ্নিকান্ডের ৮দিন পর একই চক্রটি পুনরায় অজ্ঞাতনামা আসামী দেখিয়ে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদি ঘটনাস্থলের প্রায় ২ কিলোমিটার দুরের বাসিন্দা আপন শ্যালক নয়ন মোস্তফাকে দিয়ে চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় একটি জবানবন্দি রেকর্ড করায়। ভূক্তভোগী জমির মালিক জালাল উদ্দিনের আশংকা আপন শ্যালককে শিখিয়ে দেয়া জবানবন্দিকে হতিয়ার করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। এব্যাপারে আদালত, পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগী জালাল উদ্দিন। 
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত পক্ষের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.