জেলায় ২ হাজার কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন

জেলায় ২ হাজার কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন
# গবেষণা ও প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র নেই 
# প্রশিক্ষণের অভাবে পিছিয়ে চাষীরা 

জেলায় সুপারি চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন ও অনুকুল আবহাওয়া থাকায় দিন দিন এ অঞ্চলে বাড়ছে সুপারি উৎপাদন। এতে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। জেলায় সবচেয়ে বেশি সুপারির চাষ হয়ে থাকে উখিয়া-টেকনাফ। যেখানে ২২৫০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, চলতি বছর ২ হাজার কোটি টাকার মতো সুপারি উৎপাদন হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত সুপারির গুণগতমান ভালো হওয়ায় তা জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়'।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ কবির হোসেন বলেন, 'কক্সবাজারে প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ'র মত সুপারি গাছ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সুপারি উৎপাদনের এলাকা উখিয়া -টেকনাফ। এখানকার সুপারিতে কোন ধরনের কষ নেই। খেতেই নারিকেলের মতো। এজন্য কক্সবাজারের টেকনাফের সুপারির চাহিদা আছে সারাদেশে'।

তিনি বলেন, 'সুপারি একটি সম্ভাবনাময় ফসল। কিন্তু সুপারি উন্নয়নের জন্য এখনও কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়নি। সুপারির জাত উন্নয়নে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি চাষিদের মাঝে উন্নত জাতের চারা বিতরণ করা হলে সুপারি উৎপাদন আরও বাড়বে'।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অঞ্চলে সুপারিভিত্তিক শিল্প-কারখানা ও প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র গড়ে তোলা গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আরও লাভবান হবেন সুপারি চাষিরা।
জেলায় ১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ২ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। চকরিয়া ৮০ হেক্টর, পেকুয়া ৭, রামু ৩২০,  সদর ১০০, উখিয়া ৯৭০, টেকনাফ ১২৮০, মহেশখালী ৫ হেক্টর ও কুতুবদিয়া সুপারির কোন চাষ হয়নি। শুকনা অবস্থায় কেজি প্রতি ৩শ থেকে সাড়ে ৩'শ টাকা হিসেব করলে যার বাজার দর দাঁড়ায় ২ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। 
স্থানীয় চাষিরা জানায়, তিন রকমভাবে সুপারি বিক্রি হয়ে থাকে। মৌসুমের শুরুতে গাছের লাল সুপারীতে একরকম দাম পাওয়া যায়। এরপর জাগ দিয়ে ভেজানো সুপারী মৌসুম শেষে আরেকটু চড়া দামে বিক্রি করা যায়। এছাড়া সুপারী শুকিয়ে মজুদ রেখে কয়েকমাস পরে খোসা ছাড়িয়েও বিক্রি করা হয়। বলতে গেলে এক মৌসুমের সুপারী ধাপে ধাপে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সারা বছরই সুযোগমতো বিক্রি করে বাগান মালিকরা বাড়তি উপার্জন করে থাকে।
সুপারি ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর যেখানে প্রতি কন (১৬ পন) সুপারি বিকিকিনি হতো ১৫০০-১৬০০ টাকা। এবার তা বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকায়। প্রতি পন (৮০ পিস) সুপারি এখন প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০- ৩৫০ টাকায়। অবশ্য মৌসুমের শুরুতে প্রতি পন সুপারি বিক্রি হয়েছিলো ২০০-২৫০ টাকা। এখানকার উৎপাদিত সুপারি মানের দিক থেকে ভালো ও সুস্বাদু হওয়ায় এর বেশ চাহিদা রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এতে করে বাজার দর ভালো পাওয়ায় খুশি ব্যবসায়ীরাও'।
স্থানীয় চাষী, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, 'সঠিকভাবে চারা লাগালে ও যত্ন নিলে ছয় বছরে সুপারির ফলন আসতে শুরু করে। তবে বেশি ফলন ধরে ১০ থেকে ১২ বছরের পর থেকে। সুপারি গাছ ২০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। একটি গাছে বছরে ৩ থেকে পাঁচটি ছড়া আসে। গাছে ফুল আসার পর ৯ থেকে ১০ মাস লেগে যায় ফলন পাকতে। প্রতি ছড়াতে ৫০ থেকে ১৫০টি পর্যন্ত সুপারি থাকে। আগস্ট থেকে সুপারি পাকতে শুরু করে। মার্চ পর্যন্ত সুপারি সংগ্রহ চলে। এতে হেক্টর প্রতি ১ থেকে ৭ মেট্রিক টন পর্যন্ত শুকনো সুপারি পাওয়া যায়'। 
কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন, 'সুপারির উন্নয়নে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়া গেলে আগামীতে আরো বেশি ফলন বাড়ানো সম্ভব।'
কবির হোসেন বলেন, 'এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সুপারি বাগান করার মধ্য দিয়ে এখানকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। সঠিক সময়ে সুপারি চাষিরা সঠিক পরিচর্যার কারণে যেমন বাম্পার ফলন হয়েছে  তেমনি উৎপাদনের দিক দিয়েও এগিয়ে গেছে'। 
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.