কক্সবাজারের রাখাইনদের ‘সাংগ্রেং’ উৎসব চলছে

কক্সবাজারের রাখাইনদের ‘সাংগ্রেং’ উৎসব চলছে
রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব ‘সাংগ্রেং’। রাখাইন বর্ষকে বিদায় ও বরণে ৭ দিনের এই উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে রবিবার (১৪ এপ্রিল) থেকে। আগামি বুধবার (১৭ এপ্রিল) থেকে তিন দিন ব্যাপী জলকেলি বা পানি খেলার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব।

রাখাইন পঞ্জিকা অনুসারে ১৩৮৫ রাখাইন বর্ষের শেষ দিন মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল)। বুধবার (১৭ এপ্রিল) থেকে শুরু হবে ১৩৮৬ রাখাইন বর্ষ। এই বর্ষ বিদায় ও বরণে রাখাইনরা ৭ দিনের ‘সাংগ্রেং’ উৎসব পালন করে থাকে। যা প্রতিবছরের মতো রবিবার থেকে শুরু হয়েছে।
কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতা মংথেলা রাখাইন জানান, রবিবার ১৪ এপ্রিল চন্দন মিশ্রিত জল দিয়ে বুদ্ধ স্নানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ৭ দিনের এই উৎসব। এলাকা ভিত্তিক রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন বিহার ও ঘরে থাকা বৌদ্ধ মূর্তি স্নান করে এই উৎসবের শুরু করে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন সোমবার শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিহার প্রাঙ্গনে জড়ো হন রাখাইনরা। ওখানে ঠান্ডা শরবত পান এবং পঞ্চশীল গ্রহন করে সকলের মঙ্গল প্রার্থনা করা হয়। পঞ্চশীল একটি ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন।
তিনি জানান, ১৬ এপ্রিল তৃতীয় দিন রাখাইন শিশু-কিশোররা একে-অপরকে পানি নিক্ষেপ করে থাকে। এই উৎসব মুল শেষ ৩ দিনের জলকেলি বা পানি খেলা। রাখাইন পল্লীগুলোতে প্যান্ডেলে-প্যান্ডেলে চলবে তিন দিনের এই পানি খেলা।

রাখাইন গবেষক মংছেন হ্লা রাখাইন বলেন, শেষ তিন দিন উৎসব মুখর এবং আকর্ষণীয়। যেখানে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়াও পর্যটকরা অংশ নেন। ওই ৩ দিন রাখাইন পল্লী থেকে আবাল-বৃদ্ধ বনিতা শোভাযাত্রা সহকারে বৌদ্ধ বিহারে যান। এতে অল্প-বয়সীরা মাটির কলস এবং বয়স্করা কল্পতরু বহন করেন। এরপর সেখানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পর্ব শেষ করেন। বিকালে তরুণ-তরুণীরা বাদ্যযন্ত্র সহকারে দলবেঁধে ঘুরে বেড়ান জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। নানা প্রজাতির ফুল আর রঙ-বেরঙের কাগজে সাজানো হয় প্রতিটি প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের মাঝখানে থাকে পানি রাখার ড্রামসহ নানা উপকরণ। এতে পানির রাখার এসব উপকরণের এক পাশে অবস্থান করেন তরুণীরা আর অন্য পাশে থাকেন তরুণের দল। তারা নাচে-গানে মেতে উঠে একে অপরের প্রতি ছুড়তে থাকেন মঙ্গলজল। রাখাইনদের বিশ্বাস, এই মঙ্গলজল ছিটানোর মধ্য দিয়ে মুছে যায় পুরাতন বছরের ব্যথা, বেদনা, গ্লানি, অপ্রাপ্তি আর অসঙ্গতি। এতে নতুন বছরকে শুচিতার মাধ্যমে বরণ করা হয়ে থাকে সবার মঙ্গল কামনায়।
এদিকে রাখাইনদের ৩ দিনের জলকেলি উৎসব সফলভাবে শেষ করতে সকল প্রস্তুতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম।
তিনি জানান, উৎসব সফল এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ করতে পুলিশ ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রাখাইন পল্লীগুলোতে পোষাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোষাকে নজরধারী থাকবে। উৎসব স্থলে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তাও।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.