উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের ভূমিকা নিয়ে সতর্ক আওয়ামী লীগ

উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের ভূমিকা নিয়ে সতর্ক আওয়ামী লীগ
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের প্রভাবশালী নেতাদের ভূমিকা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন অওয়ামী লীগ। বিশেষ করে এমপিরা নিজেদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান বাধাগ্রস্ত হবে এমন কথাও উঠছে দল থেকেই।

দেশের মোট ৪৯৫টি উপজেলায় চার ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট আগামী ৮মে। ইতোমধ্যেই প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক করতে দলের নেতাদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দল থেকে যে কেউ ইচ্ছা করলে প্রার্থী হতে পারবেন।  
অধিকাংশ উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী রয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন আওয়ামী লীগই হয়ে পড়েছে। প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রেও দলের নেতাকর্মীদের কোন বাধা বা নিষেধাজ্ঞা নেই। এতে প্রভাবশালী নেতারা তাদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব খাটাতে বা শক্তি দেখাতে পারে এখন থেকেই এই আশঙ্কা করছেন অনেকে।  
প্রভাবশালী নেতারা প্রত্যেকেই যার যার প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব তৈরির চেষ্টা করলে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সংঘাতে রূপ নিতে পারে এই আশঙ্কাও আছে। বিশেষ করে দলের সংসদ সদস্যদের নিয়ে এই আশঙ্কা আরো বেড়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকেও এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।

শনিবার আওয়ামী লীগের এক মতবিনিময় সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক এ ব্যাপারে দলীয় সংসদ সদস্যদের সতর্ক করেছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলের প্রভাবশালী নেতা ও সংসদ সদস্যদের প্রত্যেকের কোনো না কোনো প্রার্থীর প্রতি কমবেশি সমর্থন থাকবে। নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে  নির্বাচনী প্রভাব তৈরি করতে তারা ক্ষমতা দেখাতে গেলে অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। এই  দ্বন্দ্ব থেকে সংঘাত বা সহিংসতার মত ঘটনা ঘটতে পারে এ বিষয়টিও দলের নীতি নির্ধারকরা ভাবছেন। বিশেষ করে এমপিদের নিজস্ব কর্মীসমর্থক তো রয়েছেই পাশাপাশি প্রশাসনকে প্রভাবিত বা ব্যবহার করার ক্ষমতাও তাদের আছে।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী এমপি, মন্ত্রী কেউ কোনো প্রার্থী পক্ষে প্রচার বা নির্বাচনী কোনো কাজে অংশ নিতে পারবেন না ৷ তবে অপ্রকাশ্যে সমর্থিত প্রার্থীর প্রভাব খাটানো, বিশেষ করে প্রশাসনকে কেউ কেউ প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে এ বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এতে অবাধ সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যেমন বাধা সৃষ্টি হতে পারে পাশাপাশি সহিংসতা ছড়াতে পারে বলেও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন।
এমন এক পরিস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্র থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
শনিবার(৩০ মার্চ) আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন,আমরা একটা প্রভাব মুক্ত ফ্রি এন্ড ফেয়ার নির্বাচন করতে চাই উপজেলায়। আমি এমপি, আমি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করব, আমার একজন থাকবে তাকে জিতানোর জন্য গোটা প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করব এইটা হতে পারবে না। মন্ত্রী হন, এমপি হন  প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতায় আছে বলে, কেউ কোথাও হস্তক্ষেপ করবে; এটা গ্রহণ করা হবে না। যে উদ্দেশ্যে এই নির্বাচন উন্মুক্ত করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্যটা কোনো অবস্থাতেই ব্যাহত করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনী আইনেই আছে মন্ত্রী, এমপিরা নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তারা কোনো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করলে সেটা বেআইনি হবে। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত হবে। আমরা একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই। সেটার ক্ষেত্রে কারো কারণে ব্যাঘাত ঘটলে আওয়ামী লীগ তা সমর্থন করবে না। আওয়ামী লীগ দলীয় সাংগঠনিক শৃঙ্খলা যাতে রক্ষা হয় সে উদ্যোগ নেবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে, দেওয়া হবে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

রাজনীতি

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.