জেলায় বাড়ছে ভূট্টার আবাদ

জেলায় বাড়ছে ভূট্টার আবাদ
# উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭২৫ মেট্রিক টন

জেলার আট উপজেলায় চলতি ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে ৫২৫ হেক্টর জমিতে ভূট্টার চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১১ হেক্টর বেশি। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১৫ হেক্টর। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৭২৫ মেট্রিক টন ভূট্টা। ৩৩ শতাংশ এক বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ভূট্টা চাষ করার জন্য সরকারের রাজস্ব খাতের আওতায় প্রতিজন ভূট্টা চাষীকে ২ কেজি করে বীজসহ ১০ কেজি এমওপি সার ও ১০ কেজি ডিএপি সার দেওয়া হয়েছে। কম খরচ ও অল্প সময়ে ফলন আসায় কৃষকরাও ভূট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশে ভূট্টার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূট্টার চাষ করে হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্যে পরিবর্তন হয়েছে। এই পণ্যটির উৎপাদন বাড়াতে সরকার প্রতিবছর কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার দিচ্ছেন। কৃষকদের ভূট্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। বিএডিসির পক্ষ থেকে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ভূট্টা বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। ভূট্টা আবাদে বীজ বপনের একমাস পর আগাছা দমন ও পানির ব্যবস্থা করতে হবে। ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব। এছাড়া রোগ বালাই, পোকা মাকড়ের আক্রমণ খুবই কম হয় ভূট্টাতে। একারনে স্বল্প খরছে কৃষকরা বেশি লাভবান হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৫ শ ২৫ হেক্টর জমিতে ভূট্টার চাষ হয়েছে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১৫ হেক্টর। এতে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৭২৫ মেট্রিক টন ভূট্টা। প্রতি হেক্টরে ৯ টন করে ভূট্টা উৎপাদন হওয়ার আশা করা হচ্ছে। জেলার সবচেয়ে বেশি ভূট্টার আবাদ হয়েছে টেকনাফে ২৩০ হেক্টর। তারপর রয়েছে, চকরিয়া ৮৫ হেক্টর, রামু, ৭০ হেক্টর, উখিয়া ৬৮ হেক্টর, সদর ৪০ হেক্টর, পেকুয়া ১৬ হেক্টর, মহেশখালী ১০ হেক্টর ও কুতুবদিয়া ৬ হেক্টর।

দপ্তরটি আরও জানায়, চলতি রবি-মৌসুমে প্রণোদনা হিসেবে জেলার ৬৪০ জন কৃষককে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বীজ ও দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যেকজনকে ভূট্টা বীজ ২ কেজি, ডিএপি ( ড্যাপ সার) ২০ কেজি এবং এমওপি ( পটাশ) ১০ কেজি।
কক্সবাজার সদরের খরুলিয়ার কৃষক রশিদ আহমেদ চলতি মৌসুমে তিনি ৬০ শতক জায়গায় ভূট্টার চাষ করেছেন। ভূট্টা চাষে তার ১৬ কেজি বীজ লেগেছে। সহায়তা হিসেবে কৃষি আফিস তাকে ৫ কেজি বীজ দিয়েছে এবং কিছু সার দিয়েছেন। 
তিনি বলেন, দুই মাস পার হয়েছে। ঠিকমতো পানি ও আগাছা পরিস্কার করেতে হয়। ৩০-৪০ হাজার টাকা তার খরচ পড়েছে। বর্তমানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা তার খেতে গিয়ে তার ৬০ শতকের ভূট্টা খেত ১ লক্ষ টাকা দাম চেয়েছেন। তিনি দেড়লাখ দিয়ে বিক্রি করবেন বলে জানায়।
পেকুয়ার কৃষক নুরু মিয়া জানান, ২০ শতক জায়গায় দুইমাস আগে ভূট্টা বীজ লাগিয়েছেন তিনি। তার খরচ পড়েছে ১০ হাজার টাকা। আর কয়েকদিন পর সে ভূট্টা তুলবেন। ৩০ হাজার টাকার ভূট্টা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদঁগাহ, রামু, খরুলিয়াসহ (সদর) বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টা চাষ হয়েছে। সবুজ রঙের গাছগুলো দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। খেতগুলোতে পানি ও কীটনাশক দেওয়া এবং পরিচর্যায় কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। খেতগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও কাজ করতে দেখা যায়।
কৃষকরা জানান, তিন থেকে চার মাসের  মধ্যে’ই ভূট্টা’র ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। ডিসেম্বর শুরু ও মাঝামাঝি সময়ে ভুট্টার বীজ বপন করতে হয়। এক বিঘা জমিতে প্রায় ২ হাজার টাকার বীজ লাগে। জমি চাষ, সেচ ও সার-কীটনাশক বাবদ খরচ হয় আরও ৬/৮ হাজার টাকা। খেতের আগাছা পরিষ্কার, জমি চষা, সার-ওষুধ দেওয়া, ভূট্টা কাটা, বাড়িতে নিয়ে আসা, মাড়াই ও বিক্রির উপযোগী করার শ্রমিক বাবদ খরচ হয় প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষে খরচ পড়ে প্রায় ১১/১৩ হাজার টাকা। আর বাজারে ভালো দাম থাকলে বিক্রি হয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ অল্প সময়ে অধিক লাভ। এ জন্য ভূট্টা চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ভূট্টা ফসলের মোচা বা কব সংগ্রহের পরে গাছের অবশিষ্ট অংশ জ্বালানি  হিসেবে ব্যবহার হয়, ভূট্টা হতে আটা, ময়দা, গো-খাদ্য তৈরীতে দেশে এর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: কবির হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫২৫ হেক্টর জমিতে ভূট্টার আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও ১১ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। চকরিয়ায় সবচেয়ে বেশি হয়েছে। যেকোন সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ চকরিয়াতে বেশি হয়ে থাকে। কৃষকেরা খুব আগ্রহ হয়ে উঠেছেন ভূট্টা চাষে। দেশে ভূট্টার চাহিদা থাকার কারনে চাষিরা লাভবান হচ্ছে। জেলায় ৪ হাজার ৭২৫ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। 
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.