অপহৃত ১০ জন উদ্ধার, অপহরণকারিরা কোথায়?

অপহৃত ১০ জন উদ্ধার, অপহরণকারিরা কোথায়?
কক্সবাজারের টেকনাফে গত দুদিনে অপহৃত ১০ জন জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘ সাড়ে ৬ ঘন্টার অভিযানে টেকনাফের জাহাজপুরা পাহাড়ি এলাকা অভিযান চালিয়ে বুধবার দিনগত রাত সাড়ে ১২ টায় তাদের উদ্ধার করা হয়। তবে অপহরণকারিদের ধরতে এখনো পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অপহরণকারি চক্রের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর বুধবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে টেকনাফ থানা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ফাঁড়ির ৫০ জন পুলিশ একযোগে টেকনাফের জাহাজপুরা পাহাড়ে অভিযান শুরু করে। পাশাপাশি অভিযানে যোগ দেয় র‍্যাব সদস্যরা। অভিযানের এক পর্যায়ে পুরো পাহাড়টি ঘিরে ফেলা হয়। তারপর রাতে সাড়ে ১২ টার দিকে অভিযানের মুখে অপহৃত ১০ জনকে পাহাড়ে ছেড়ে পালিয়ে যায় অপহরণকারি চক্রটি। পরে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। এখন তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর অপহরণকারিদের ধরতে পাহাড়ে অভিযান চলমান রয়েছে।
এদিকে মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহৃত ১০ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
এব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অপহৃত ১০ জনকে অক্ষত অবস্থা উদ্ধার করেছি। এখানে মুক্তিপণ কোন বিষয় নেই। অপহৃতদের পরিবারের সদস্যরা কোন তথ্য দেয় না। এমন কি একাধিকবার চেষ্টার পরও লিখিত অভিযোগ দিচ্ছি না। স্বজনরা তথ্য না দেয়ায় পুলিশ তার কাজে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন। এখন তাদের পরিবার কাউকে টাকা দিলে সেটা তো আমাদেরকে জানায়ও না। তবে সবকিছু মাথায় নিয়ে অপহরণকারিদের চিহ্নিত করে তাদেরকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া ১০ জনের কাছে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

এদিকে বুধবার দুপুর ২ টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাংস্থ ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিম পাহাড়ী এলাকায় এবং পুটিবুনিয়া পাহাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে উনচিপ্রাং এলাকা থেকে ৬ জন এবং পুটিবুনিয়া এলাকা থেকে ২ জনকে অপহরণ করা হয়।
অপহৃতের স্বজনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, হোয়াইক্যংয়ের উনচিপ্রাং এলাকা থেকে অপহৃত ৬ জনকে ছেড়ে দিতে দূর্বৃত্তরা ইতিমধ্যে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে।
তবে হোয়াইক্যংয়ের পুটিবুনিয়া এলাকা থেকে পৃথক ঘটনায় অপহৃত দুইজনের স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বুধবার রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহজালাল ঘটনার ব্যাপারে এসব তথ্য সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অপহৃতরা হলেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের এর করাচি পাড়া এলাকার লেদু মিয়ার ছেলে শাকিল মিয়া (১৫), বেলালের ছেলে  জুনাইদ (১৩), নুরুল আমিনের ছেলে সাাইফুল (১৪), শহর আলীর ছেলে ফরিদ (৩৫), নাজির হোছনের ছেলে সোনা মিয়া (২৪), শহর মুল্লুকের ছেলে গুরা পুইত্যা (৩২)।
এছাড়া পৃথক ঘটনায় অপহৃত অপর দুইজন হলেন, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যং উত্তর পাড়ার আলী আকবরের ছেলে ছৈয়দ হোসেন ওরফে বাবুল (৩৩) এবং রইক্ষ্যং দক্ষিণ পাড়ার কালা মিয়া ওরফে লম্বা কালুর ছেলে ফজল কাদের (৪৭)।
ইউপি সদস্য মো. শাহজালাল বলেন, সকালে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং এলাকার ৬ জন বাসিন্দা স্থানীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় গরু চড়ানো ও চাষের কাজ করতে  যান। পরে তারা দুপুরের পরও বাড়ী ফিরেননি। এক পর্যায়ে দুপুর ২ টার পর অপহরণকারি চক্রের এক ব্যক্তি অজ্ঞাত স্থান থেকে ০১৮৯৭২৬৬৮৮৮ নাম্বার থেকে একজনের বাবার মোবাইল নাম্বারে ফোন করে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহৃতদের মারধর করা হচ্ছে করে চিৎকার শোনানো হচ্ছে। এ বিষয় সম্পর্কে পুলিশকে জানালে অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছে।
এদিকে বুধবার সকালে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পুটিবুনিয়া পাহাড়ী এলাকায় গরু চড়াতে গিয়ে ছৈয়দ হোসেন ও ফজল কাদের নামের আরও দুইজন অপহৃত হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী।
স্বজনদের বরাতে তিনি বলেন, সকালে গরু চড়াতে গিয়ে তার ইউনিয়নের আরও দুই বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছে। বুধবার রাত ৯ টার পরও তারা বাড়ী ফিরেনি। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দুইজনও দূর্বৃত্তদের হাতে অপহরণের শিকার হয়েছেন। এ ব্যাপারে পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।
শাকিল মিয়ার বাবা লেদু মিয়া বলেন, সকালে গরু চড়াতে গেলে বিকাল পর্যন্ত ফেরত না আসায় উদ্বিগ্ন ছিল। এর মধ্যে একটি নাম্বার থেকে মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দাবিও করা হয়েছে। এখন তারা আতংকে রয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) টেকনাফের হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু আনতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন এই দুই জন।
এরা হলেন টেকনাফের হোয়াইক্যং রোজার ঘোনা এলাকার আমির হোসেনের ছেলে অলি আহমদ (৩২) এবং কম্বনিয়া এলাকার ফিরুজের ছেলে নুর মোহাম্মদ (১৭)।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকা থেকে দুজনকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, অপহৃত ২ জনের পরিবার থেকে বুধবার সকালে ফোনে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কত টাকা চাওয়া হয়েছে অপহৃতদের স্বজনরা কিছুই বলছেন না। ধারণা করা হচ্ছে হুমকির কারণে পুলিশ এবং জনপ্রতিনিধিদের না জানিয়ে গোপনে টাকা দিয়ে তাদের ফেরত আনার চেষ্টা করছেন স্বজনরা।
গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০৯ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫৯ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের পরিবারের তথ্য বলছে অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫১ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে। এর মধ্যে গত ৯ মার্চ হ্নীলার পূর্ব পানখালী এলাকা থেকে অপহরণ হওয়া মাদ্রাসা ছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে   ১৯ দিন অতিবাহিত হলেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি । যদিও পুলিশ অপহরণ ঘটনায় ব্যবহৃত অটোরিকশার চালক ও সংঘবদ্ধ চক্রের নারী সদস্য সহ চক্রের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৫ জনই রোহিঙ্গা।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.