কালারমারছড়া থেকে পাইপলাইনে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে জ্বালানি সরবরাহ শুরু

কালারমারছড়া থেকে পাইপলাইনে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে জ্বালানি সরবরাহ শুরু
কক্সবাজারের মহেশখালী কালারমারছড়া থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পের পাইপলাইন কমিশনিংয়ের আওতায় কালারমারছড়ার রিজার্ভ ট্যাংক থেকে তেল সরবরাহ শুরু হয়। 

এসপিএম প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী শরিফ হাসনাত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে মহেশখালী থেকে পাইপলাইনে ডিজেল পরিবহন শুরু হয়েছে। আমরা চেক করে অপারেশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে গিয়ে পৌঁছতে শুক্রবার দুপুর হবে।’
প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘সেখানে ট্যাংকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল রয়েছে। এগুলো পাইপলাইনে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আনা হবে। ডিজেল সরবরাহ সফল হওয়ার পর সেখান থেকে পাইপলাইনে ক্রুড অয়েল সরবরাহের কাজ শুরু হবে। ৯ মার্চ থেকে ক্রুড অয়েল পরিবহনের পরিকল্পনা রয়েছে।’
এর আগে এসপিএম প্রকল্পের আওতায় সাগরে জাহাজ থেকে তেল নেওয়া, সেখান থেকে মহেশখালীর কালারমারছড়ায় স্থাপন করা স্টোরেজ ট্যাংকে তেল নিয়ে আসার কমিশনিং কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কালারমারছড়ায় স্থাপন করা যেসব মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি আছে, সেগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কালারমারছড়ার স্টোরেজ ট্যাংকে এখন ৮৩ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল এবং ৬০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল মজুদ আছে। পাইপলাইন কমিশনিংয়ের অংশ হিসেবে এখন এই জ্বালানি তেলগুলোই ইস্টার্ন রিফাইনারিতে নিয়ে আসা হবে। এটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে প্রকল্পটির শতভাগ কমিশনিং কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন সাগর থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল ইস্টার্ন রিফাইনারিতে নিয়ে আসতে আর কোনো বাধা থাকবে না।  

গতানুগতিক পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় গভীর সমুদ্র থেকে সরাসরি পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য ২০১৫ সালে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্প হাতে নেয় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। শুরুতে তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও পরে দুই দফায় সময় বাড়ানো হয়। তৃতীয় সংশোধনী অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন মেয়াদ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়।
প্রকল্পটি আওতায় সাগর থেকে মহেশখালীর কালারমারছড়া, সেখান থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত প্রায় ২২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুটি পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। এর পাশাপাশি মহেশখালীর কালারমারছড়া এলাকায় তৈরি করা হয়েছে ৬টি বিশালাকার স্টোরেজ ট্যাংক। কালারমারছড়া এলাকায় প্রায় ৯০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে এই ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে পরিশোধিত তেলের জন্য তৈরি করা তিনটি স্টোরেজ ট্যাংকের ধারণক্ষমতা ১৫০ হাজার ঘনমিটার। অপরিশোধিত তেলের জন্য তৈরি করা বাকি তিনটি স্টোরেজ ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা ৯০ হাজার ঘন মিটার।
প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার পর গত বছরের জুলাই মাসে ‘এমটি হরে’ নামের একটি তেলবাহী জাহাজ থেকে প্রথমবারের মতো পাইপলাইন দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানি তেল সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু তখন পাইপলাইনে ত্রুটি ধরা পড়ায় সাগর থেকে পাইপলাইনে মহেশখালীর কালারমারছড়ায় তেল নিয়ে আসার উদ্যোগটি ভেস্তে যায়। পরে ত্রুটি সারিয়ে ৩০ নভেম্বর বিকালে ওই পাইপলাইন দিয়ে এমটি হারে জাহাজ থেকে ক্রুড অয়েল সরবরাহ শুরু হয়। এটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর গত ৫ ডিসেম্বর বিকাল থেকে ডিজেল পরিবহন শুরু হয়। ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা এমটি জেগ অপর্ণা জাহাজ থেকে ডিজেল পরিবহন শুরু হয়। সাগর থেকে তেলগুলো পরিবহন করে সেগুলো কালারমারছড়ায় স্থাপিত এসব স্টোরেজ ট্যাংকে মজুদ রাখা হয়। এখন সেখান তেলগুলো এখন ইস্টার্ন রিফাইনারিতে নিয়ে আসা হবে।
 
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

বাংলাদেশ

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.