মেহেদী নয়, রক্তের রঙে চিরবিদায় রিমঝিমের

মেহেদী নয়, রক্তের রঙে চিরবিদায় রিমঝিমের
দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়ে জীবন সংগ্রামে সফলতার সিঁড়ি পার হচ্ছিলেন রিমঝিম। একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরির পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছিলেন পড়াশোনাও। সম্প্রতি ভর্তির সুযোগও পেয়েছেন ঢাবিতে। আগামী ৬ জুলাই পাকাপাকি ছিলো পছন্দের ছেলেকে নিয়ে রিমঝিমের বিয়ের পিঁডিতে বসার দিনক্ষণ। চট্টগ্রামের পটিয়ার ভান্ডাগাঁওয়ের যুবক সানি বড়ুয়ার সাথে স্বপ্নিল নতুন জীবনের স্বপ্ন বেঁধেছিলেন এই তরুণী। কক্সবাজারের রামু নিজ বাড়ি থেকে বিয়ের কেনাকাটা করতে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম। কিন্তু বিধাতার কী ইচ্ছা- হাতের কাছে এসেও স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার ভাগ্য হয়নি রিমঝিম বড়ুয়ার! এক মুহূর্তেই নিভে গেলো হাজারো স্বপ্নবোনা রিমঝিমের প্রাণ! সব স্বপ্ন ছিন্ন করে পরপারে যাত্রা করেছেন তিনি।
 
গতকাল সোমবার, ১৬ জুন সকাল ৯টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের রামু রশিদ এলাকায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নির্মমভাবে প্রাণ হারান রামুর পূর্ব রাজারকূল গ্রামের হিমাংসু বড়ুয়ার মেয়ে কলেজছাত্রী রিমঝিম বড়ুয়া (২২)। এই ঘটনায় আরো দুইজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, কক্সবাজার সদরে পিএমখালী দক্ষিণ পাতলি এলাকার ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ (৫৫) ও রিয়াদ (১১)। এই ঘটনায় আরো অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন।
 
নিহত রিমঝিম বড়ুয়ার মামাতো ভাই স্থানীয় ইউপি সদস্য লিটন বড়ুয়া জানান, নিহত রিঝঝিম বড়ুয়া কক্সবাজার সরকারি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। পাশপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। সম্প্রতি পারিবারিকভাবে তার বিয়ে ঠিক হয়। বর চট্টগ্রামের পটিয়ার ভান্ডারগাঁওয়ের ব্যবসায়ী যুবক সানি বড়ুয়া। গত ১৬ দুই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাদের বাগদান সম্পন্ন হয়। আগামী ৬ জুলাই বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
 
তিনি আরো জানান, গতাকাল সোমবার দুই পরিবারের সদস্যরা মিলে চট্টগ্রাম থেকে বিয়ের কেনাকাটা করার কথা ছিলো। সে মোতাবেক সকালে পুবরী পরিবহনের একটি বাসে একাই রামু থেকে চট্টগ্রামের যাচ্ছিলো রিমঝিম বড়ুয়া। তার বিবাহিত বোন ও এক ছোটবোন চট্টগ্রামের থাকে। তাদের সাথে নিয়ে বরের পরিবারের লোকজনসহ কেনাকাটা করার কথা ছিলো।
 
ইউপি সদস্য লিটন বড়ুয়া বলেন, ‘একভাই-তিনবোনের তৃতীয় ছিলেন রিমঝিম বড়ুয়া। দিনমজুর বাবার সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা এনে দিতে পড়ালেখার পাশপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি নিয়েছিলেন। চাকরি, পরিবার এবং নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে দারুণ খুশি ছিলেন রিমঝিম। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস- এক মুহূর্তে নিভে গেলো তার জীবনপ্রদীপ। তার এমন মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক মৃত্যুতে স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন।  পুরো এলাকার শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’

ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক জানিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস পোস্ট করছেন রিমঝিমের বন্ধু ও স্বজনরা। এক স্বজন লেখেন- ‘লাল শাড়িত তোকে দেখা হলো না, ওপারে ভালো থাকিস বোন।’
এই দুর্ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামমুখী পুরবী পরিবহনের একটি বাসের সাথে কক্সবাজারমূখী একটি মালবাহী কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বাসটি মহাসড়কের পাশে নিচু স্থানে উল্টে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হয়। আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। সবাইকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.