সেন্টমার্টিনে মানুষের ‘চরম দুর্দিনে’ প্রকৃতিতে ফিরছে ‘সুদিন’

সেন্টমার্টিনে মানুষের ‘চরম দুর্দিনে’ প্রকৃতিতে ফিরছে ‘সুদিন’
একদিকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বিধি-নিষেধের জেরে পর্যটক নেই, অন্যদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নির্দেশে মাছ ধরতে সাগরেও নামতে পারছেন না- এই দুই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে ‘চরম দুর্দিন’ যাচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দাদের।

বঙ্গোপসাগরের কোলের এই দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ৭০ শতাংশই গত প্রায় আড়াই দশকে পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন। আর বাকি প্রায় এক হাজার ৬০০ জেলে পরিবারের সদস্যদের একমাত্র অবলম্বন ‘দরিয়া’।
এখন এই দুই পেশা বন্ধে দ্বীপের বাসিন্দাদের ‘দুর্দিন’ শুরু হলেও সেখানকার প্রকৃতিতে ফিরে এসেছে সুদিন। কারণ দ্বীপে বাইরের কোনো মানুষ নেই, নেই কোনো কোলাহল। পরিবেশ দূষণ নেই, প্রকৃতি নিজের মত করেই যেন অপরূপ সৌন্দর্যে ফিরেছে।
তবে এই প্রশ্নও তুলেছেন দ্বীপবাসী; মানুষকে ‘চরম দুর্দিনে ঠেলে দিয়ে’ দ্বীপ নিয়ে কেন এত ‘রাখঢাক’ তাদের সঙ্গে?

এর কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আলমের কণ্ঠেও।
তিনি বলছিলেন, 'এই দ্বীপে এখন শুধুই আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা! চায়ের দোকান, বাজার, পাড়া-মহল্লা, মসজিদ সর্বত্র সবার প্রশ্ন, কী হতে যাচ্ছে সেন্ট মার্টিনে? সেন্ট মার্টিনের ভবিষ্যত কী? সবার মনে অজানা ভয়, কী হচ্ছে! শেষমেশ কি আমাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি হাতছাড়া হবে? আল্লাহ জানে।'
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ আহসান উদ্দীন বলেন, 'বিধিনিষেধের কারণে স্থানীয় লোকজনের যাতায়াতে কোনো সমস্যা নেই। তবে বিভিন্ন প্রকল্পের লোকজনকে অনুমতি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।'
দ্বীপে খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলায় সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য গত কয়েক দিনে ৭৬ হাজার কেজি চাল পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ইউএনও বলেন, 'মূলত দ্বীপের জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য, বাঁচানোর জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় সেখানে পর্যটকদের যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
‘রহস্য’ দেখছেন স্থানীয়রা
গত প্রায় আড়াই দশকে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন খাত বিস্তৃত হয়েছে। স্থানীয় অনেক মানুষ কৃষিকাজ ও অন্য পেশা ছেড়ে পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন; পাশাপাশি দেশের অনেক উদ্যোক্তাও এই দ্বীপে বিনিয়োগ করেছেন।
ভৌগোলিক ও আবহাওয়াগত কারণে সেন্ট মার্টিনে কখনোই সারা বছর পর্যটক যেতে পারেন না। সাধারণত সরকারিভাবেই ১ অক্টোবর শুরু থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই পর্যটন ব্যবসা চলে। কখনও কখনও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ‘অঘোষিতভাবে’ মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত গড়ায়। অর্থাৎ বছরের পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ মাস ব্যবসা করেন সেন্ট মার্টিনের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার সেই সময়সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে পর্যটকের ভ্রমণের সময় কমানো হয়। পাশাপাশি কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়।
গত বছরের নভেম্বরে মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় হঠাৎ করেই দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে একদিনে দুই হাজার পর্যটক যাওয়া এবং সেখানে রাতযাপনের সুযোগ দেওয়া হয়।
সবশেষ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সেখানে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়; যা নয় মাস চলবে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা জারির পর সেন্ট মার্টিনের লোকজন কক্সবাজার মূল শহরে এসে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেন। সেখানে তারা তাদের বিপদের কথা বলেন।
পাশাপাশি এই সময়ে সেন্ট মার্টিন নিয়ে নানা ‘রাজনৈতিক কথাবার্তা ও গুজব’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে; যা সেখানকার মানুষকে আরো ভীত করেছে বলে অনেকের ধারণা।
যদিও কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জমির উদ্দিন বলছেন, 'সেন্ট মার্টিনের অধিবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া বা সেন্ট মার্টিন অন্য কারো হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি একটি ‘গুজব’। সরকার আসলে সেন্ট মার্টিনকে একটি পরিবেশবান্ধব দ্বীপ হিসেবে সুরক্ষা দিতে চায়। পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয় এমন সীমিত আকারে পর্যটক যাতায়াতের সুযোগ সরকার রেখেছে।'
তবে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ও বাজার কমিটির বর্তমান সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশের ভূখণ্ড হওয়া সত্ত্বেও সেন্ট মার্টিন এবং সেন্ট মার্টিনের অধিবাসীদের নিয়ে সরকারের এ ধরনের আচরণ রহস্যজনক বলে মনে হয়। স্পষ্ট কোনো কারণ ছাড়া এই সিদ্ধান্ত সেন্ট মার্টিনের ১০ হাজারের বেশি মানুষের খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার মত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার শামিল।'
বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করে হাবিবুর রহমান বলেন, 'দ্বীপে এখন চরম খাদ্যের অভাব বিরাজ করছে। একদিকে পর্যটন মৌসুমে হঠাৎ করে পরিবেশের দোহাই দিয়ে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে এখন সাগরে ৫৮ দিনের মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা চলছে। এতে দ্বীপবাসী চরম অনটনে রয়েছে। হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় দ্বীপের মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। দ্বীপের অসংখ্য মানুষ টেকনাফ এবং কক্সবাজারে কাজের সন্ধানে দ্বীপ ছেড়ে গেছে।'
দ্বীপের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদও একই কথা বলছিলেন। তার কণ্ঠে কিছুটা ক্ষোভও ছিল।
তিনি বলেন, 'সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে পর্যটন-নির্ভর দ্বীপবাসী অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে দ্বীপবাসী। দ্বীপের কুকুরের বন্ধ্যাকরণ, চিকিৎসা ও খাবারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু অনাহারে থাকা মানুষের খাবারের ব্যাপারে কারো কোনো দায়বদ্ধতা নেই।'
কৃষি ছেড়ে পর্যটনে এসে বিপদে
মূল ভূখণ্ড টেকনাফ থেকেই মূলত সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করে মানুষ। কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম থেকেও পর্যটকরা যেতে পারেন। এখন স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলে কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু দ্বীপের বাইরের লোকজনকে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে যেতে হয়।
গত সপ্তাহে সেখানকার কয়েকজন পর্যটন ব্যবসায়ীরা সঙ্গে কথা বলে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
তারা আক্ষেপ করে বলছিলেন, দ্বীপে কমবেশি আড়াই শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। আগে পাঁচ মাস ব্যবসা করে বাকি সাত মাস বসে থাকতে হত। এতে চলাটা কঠিন ছিল। কিন্তু এখন দুই মাস ব্যবসা করে পর্যটন ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা দায়। সরকারকে এটা ভাবতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অধিকাংশ হোটেল ও কটেজের দরজায় তালা ঝুলছে। কর্মহীন হাজারো কর্মচারী। বাজারে আগের মত ক্রেতার ভিড় নেই, ব্যবসাও নেই।
পর্যটনের ব্যবসা যখন বাড়ছে, তখন দ্বীপের বাসিন্দা মৌলভী আব্দুর রহমান কৃষি জমি বিক্রি করে আর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পর্যটন ব্যবসায় আসেন। গত কয়েক বছরে বেশ গুছিয়েও নিয়েছিলেন। এই ব্যবসার ওপর নির্ভর করেই নিজের দুই মেয়েকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছিলেন অনেক স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু এখন তিনি ভাবছেন, তার সেই সিদ্ধান্ত ভুল হয়ত ছিল।
আব্দুর রহমান বলেন, 'আমার দুই মেয়ের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে তাদের লেখাপড়ার খরচ আর দেওয়া সম্ভব হবে না।'
তিনি বলেন, 'পরিবেশ রক্ষায় যদি কোনো নীতিমালা দিতে চায় সরকার, আমরা মানতে রাজি। কিন্তু সেটা পর্যটন বন্ধ করে কেন? আমরা এ দেশের নাগরিক, আমাদের রুজি-রুটি বন্ধ করে দেবেন না।'
একই অবস্থায় পড়েছেন দ্বীপের আরও অনেকেই।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের একজন রাজনৈতিক নেতা বলেন, 'একসময় এখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন মাছ ধরে ও চাষাবাদ করে। ২০০০ সালের পর এখানে পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হয়। পর্যটকরাই এখানকার মানুষের আয়ের নতুন পথ খুলতে সাহায্য করেন। এখন দ্বীপটির অধিকাংশ বাসিন্দার আয়ের বড় অংশ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। সেটা বন্ধ হয়ে গেলে তো বড় বিপদ, দুর্দিন আসবে। মানুষ যাবে কোথায়?'
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রায় ২১০০ পরিবার আছে। তাদের একটা অংশ বংশ পরম্পরায় জেলে। সমুদ্রে মাছ ধরাই তাদের জীবিকা। জীবন-মৃত্যুকে পরোয়া না করেই তাদেরকে বাঁচার তাগিদে ‘দরিয়ায়’ যেতে হয়।
নিষেধাজ্ঞার সময় প্রত্যেক জেলে সরকারিভাবে ৭৮ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা। কিন্তু জেলেদের অভিযোগ, এটা সবাই পায় না। আর খালি চাল খেয়ে তো বাঁচা যায় না, আরও কিছু লাগে।
দ্বীপের পশ্চিম পাড়ার জেলে আবদুল গণি গত সপ্তাহে বলছিলেন, 'সেন্ট মার্টিনের জেলেরা ভালো নেই। সাগরে মাছ ধরে সংসার চলে। কিন্তু মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সংসার নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি। স্ত্রীসহ পাঁচ সন্তানের সংসার। ধার করে আর কয়দিন চলতে পারব? আপনি সাংবাদিক, একটু সরকারকে বলেন না! আমরা না খেয়ে মরে যাচ্ছি। এই দ্বীপের মানুষের কান্না কি সরকারের কাছে যায় না? ঘরে মা অসুস্থ। দুটি সন্তানের মধ্যে মেয়ের কয়েকদিন ধরে জ্বর। টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারছি না।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ফয়েজুল ইসলাম বলেন, 'দ্বীপের বাসিন্দা ও পযর্টকদের কথা বিবেচনা করে সেন্ট মার্টিনে একটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়। এখানে হাসপাতালটি থাকলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। নেই ডাক্তার। তাই অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে হাসপাতালটি। সেন্টমার্টিনের মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দ্বীপের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত কয়েকদিন আগেও চিকিৎসার অভাবে দুই শিশু মারা গেছে। জরুরি ভিত্তিতে সেন্ট মার্টিনের জন্য সি ট্রাক ও সি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা দরকার।'
প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর রূপ
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৩টি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) একটি সেন্ট মার্টিন। পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার জন্যই সেন্ট মার্টিনে স্থাপনা নির্মাণে ছাড়পত্র দেয় না পরিবেশ অধিদপ্তর।
টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে নির্মাণ সামগ্রী নেওয়া নিষিদ্ধ। সরকারি কাজের জন্য নিতে হলেও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। তবে কিছু অসাধু ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী রাতের আঁধারে এসব নির্মাণ সামগ্রী দ্বীপে নিয়ে যায় বলে স্থানীয় পরিবেশবাদীদের দাবি। গত তিন বছরে সেখানে প্রায় দেড় শতাধিক বহুতল স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
যত্রতত্র ভবন নির্মাণ ও পরিবেশ নীতিমালা না মানার কারণে দ্বীপের পরিবেশ দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। দ্বীপটিতে হাজারের বেশি জীব-বৈচিত্র্য থাকলেও তা এখন বিপদাপন্ন। স্থাপনা নির্মাণের কারণে সেখানে সবুজ-আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে, পাশাপাশি কমেছে প্রবাল।
সেন্ট মার্টিনে পর্যটন বন্ধ হয়েছে চার মাস পর হয়ে গেছে। এই সময়ের প্রকৃতিতে একটা পরিবর্তন এসেছে। বিশেষত সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপে। সেন্ট মার্টিনের পর্যটকদের একটা গন্তব্য থাকে ছেঁড়াদ্বীপ।
স্থানীয়রা বলছেন, ছেঁড়াদিয়া, নিঝুম ও প্রবাল নিয়ে ‘ছেঁড়াদ্বীপ’। এখন সেখানে চারদিকে দেখা যাচ্ছে অপরূপ সৌন্দর্য। জোয়ারের সময় ডুবে যায় পাথরগুলো, দেখা মেলে স্বচ্ছ পানির। আর স্বচ্ছ পানির নিচে পাথরের সঙ্গে খেলা করে রং-বেরঙের মাছ। একই সঙ্গে দেখা মিলছে পাখির। জোয়ার শেষে যখন ভাটা শুরু হয় তখন ছেঁড়াদ্বীপ ধারণ করছে নতুন রূপ।
চারদিকে বালিয়াড়িতে নেই কোনো প্লাস্টিক কিংবা পলিথিন। সব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আর ছেঁড়াদিয়া, নিঝুম ও প্রবাল দ্বীপে জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন কেয়া গাছ। চারদিকে যেমন জীববৈচিত্র্য নতুন প্রাণ পেয়েছে, ঠিক তেমনি প্রবাল পাথরে জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন উদ্ভিদ। পুরো ছেঁড়াদ্বীপ জুড়ে নেই কোনো মানুষের পদচারণা কিংবা কোলাহল।
বিকল্প কর্মসংস্থানের ভাবনা
বিপদে পড়া সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির ভাবনার কথা বলছে সরকার। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে একটি ওয়ার্কিং টিম গঠন করা হয়েছে।
এর সদস্য হিসেবে রয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পর্যটন বোর্ড, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বন বিভাগ, জেলা প্রশাসন, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা।
চলতি বছরের মে মাসের শুরুতে ব্র্যাক ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের দুটি প্রতিনিধি দল দ্বীপ পরিদর্শন করে। তারা জীববৈচিত্র্য রক্ষা, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'আমরা দেখেছি দ্বীপের ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ পর্যটনের সঙ্গে জড়িত, তারা এখন সবাই বেকার। এ ছাড়া দ্বীপে ১৬০০-এর বেশি জেলে রয়েছেন, তারাও চরম কষ্টে আছেন। ফলে বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টা সামনে এসেছে।'
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, 'দ্বীপবাসীর ক্ষতি পোষাতে তাদের বিভিন্ন পেশায় জড়িত করার জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। বিকল্প কর্মসংস্থান তারই অংশ।'
প্রস্তাবিত বিকল্প কর্মসংস্থানের মধ্যে রয়েছে- বিষমুক্ত শুঁটকি মাছের ব্র্যান্ডিং, স্কুলের নতুন শিক্ষক নিয়োগ ও এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপন, পরিবেশবান্ধব জাল ও প্রযুক্তি ব্যবহার, সবজি ও মাশরুম চাষ, পোল্ট্রি ও গবাদিপশু পালন, নারীদের সেলাই, নকশিকাঁথা, স্মারক তৈরির প্রশিক্ষণ, নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে দড়ি তৈরি, ফটোগ্রাফি ও রেস্টুরেন্ট প্রশিক্ষণ, স্থানীয় যুবকদের ট্যুর গাইড প্রশিক্ষণ, পর্যটকদের জন্য বিকল্প পথ প্রভৃতি এবং জেলেদের জীবনমান উন্নয়ন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দাদের বিকল্প আয়ের বিষয়টি সরকারের নজরে আছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে। সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার দায়িত্ব সবার। এতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে।'
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.