কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান
সাহিত্য এমন এক সুগন্ধি যা মানুষকে সুস্থ মানসিকতা নিয়ে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। সাহিত্য হচ্ছে মনকে সজীব,সতেজ,সচল ও গ্রহনশীল রাখার এক শ্রেষ্ঠ উপায়। সাহিত্য হচ্ছে দেশ ও জাতির জীবন মানসের প্রতিফলন। সাহিত্য হচ্ছে সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখ পূর্ণ জীবনের দলিল বিশেষ। জাতির মনের কথার লিখিত রূপই হচ্ছে সাহিত্য।  যে কোন সভ্যতার উৎকৃষ্ট ব্যারোমিটার হলো তার কবি, সাহিত্যিক, লেখকরা। সাহিত্য সেবকরা পরস্পরের পরমাত্মীয়। হিন্দু হোক, মুসলমান হোক,বৌদ্ধ হোক,খ্রিষ্টান হোক তারা কেউ পর নয়,সাহিত্যসেবীরা একে অপরের আপন জন। 
গত ২৩ মে ২০২৫ বিকেলে কক্সবাজার প্রেসক্লাব হলে কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সাংবাদিক আজাদ মনসুরের সঞ্চালনায় কক্সবাজার জেলার কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও সাহিত্য উৎসাহী ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতেতে কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর মুখপত্র সমুদ্র সংলাপ এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন, আলোচনা সভা, কবিতাপাঠ ও সংগীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক ও গল্পকার কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক  সোহেল ইকবাল। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে অতি মূল্যবান বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জনাব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা শিক্ষা অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) জনাব মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা। মূখ্য আলোচক ছিলেন লেখক কলামিষ্ট এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ২৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও ২৫তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, মনন ও সৃষ্টিশীলতাকে সমন্বয় করে স্থানীয় তথা মাটির ভাষাকে তুলে নিয়ে আনতে পারলে অভিনব সাহিত্য সৃষ্টি হবে,এতে করে আগামী প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হবে। কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষায় সাহিত্য চর্চায় এখানকার কবি,সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাহিত্য একাডেমীর সহ-সভাপতি ও বিদায়ী জেলা শিক্ষা অফিসার ছড়াকার মোঃ নাছির উদ্দিন,একাডেমীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল, একাডেমীর স্থায়ী পরিষদের সদস্য কবি আদিল চৌধুরী, একাডেমীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য উখিয়া ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কবি-উপন্যাসিক অজিত দাস ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সভাপতি এডভোকেট আশেক উল্লাহ প্রমূখ। পরে স্বরচিত ও প্রিয় কবির কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী কক্সবাজার জেলার কবি,সাহিত্যিক,লেখকদের লেখা কবিতা,ছড়া,গল্প,উপন্যাস,মুক্তিযুদ্ধ,ভাষা আন্দোলন, লোক সাহিত্য ইতিহাস,ইসলামিক লেখা শীর্ষক শতাধিক বই, ৩০টি একাডেমীর মুখপ্রত্র সমুদ্র সংলাপ,শিশুদের নিয়ে কিশোর সংলাপ ২টি,স্কুল মাদারাসার শিশুদের নিয়ে প্রতিভা অন্বেষণে কর্মসূচী পালন করেছে এবং একাডেমীর বার্ষিক পিকনিককে কেন্দ্র করে একটি বিনোদনমূলক ’প্রমোদ সংলাপ’ প্রকাশ করেছে । একাডেমী এ যাবৎ জাতীয় দিবসসমূহ পালনের পাশাপাশি পাক্ষিক সাহিত্য সভার আয়োজন করেছে। জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক  কবি-সাহিত্যিক-পন্ডিতদের পাশাপাশি একাডেমীর সম্মানিত সদস্য কবি-সাহিত্যিক,লেখকদের জীবনালেখ্য ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা সভার আয়োয়ন করেছে।
প্রমোদ সংলাপ সংখ্যাটি কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর খুরুস্কুল সবুজ খামারে ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ অনুষ্ঠিত বার্ষিক পিকনিক ও মিলনমেলাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। একাডেমীর সদস্যবৃন্দ কবি,সাহিত্যিক,লেখক, বুদ্ধিজীবী,আইনজীবীদের অনেকে সপরিবারে উপস্থিত ছিলেন। ’কচিপাঁঠা বুড়ো মেষ,দধিরআদ্য ঘোলের শেষ” লেখা ব্যানার নিয়ে সকাল ১১টার সময় সদস্য ও অতিথিরা উপস্থিত হন সবুজ খামারে। শহরের কোলাহল থেকে একটু দূরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত কবি-সাহিত্যিকরা পিকনিক ও মিলনমেলাটিকে ছড়া,কবিতা পাঠ, কবিতা আবৃত্তি, গান, আঞ্চলিক  গান, জারি গান, হাইল্যা গীত,হাঁওলা,রাশিয়ান গান,ফার্সি কবিতা,চুটকি,ধাঁধা ও কথামালা দিয়ে সাজিয়েছিলো। রামু থেকে আসা বয়োজ্যেষ্ঠ ছড়াকার ধনিরাম বড়ুয়ার বাঁশির সুরে সবুজ খামারের গাছগাছালিও নড়েচড়ে উঠেছিল। অনুষ্ঠানের শেষ দিকে পরিবেশিত খুরুস্কুল রাস্তারপাড়ার ঐতিহাসিক ’বাকগুলা’ নাস্তা,সবুজ চা ও মিষ্টি পান অনুষ্ঠানকে আরো আনন্দঘন ও উপভোগ্য করেছিল।  সেই দিনের ছয় ঘন্টার অনুষ্ঠান নিয়ে ৩৩জন কবি,ছড়াকার,সাহিত্যিক ও লেখকের লেখা নিয়েই প্রমোদ সংলাপ সংখ্যাটি প্রকাশ করা হয়েছিল। এক দিনের মাত্র ছয় ঘন্টার পিকনিক কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান নিয়ে এত বড় সাহিত্যকর্ম দেশে বিদেশে কোন সংস্থা আগে করেছিল বলে আমার জানা নেই, যা কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী করেছে। 
আমি কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্য বিষয়ক লেখক নই। তবে দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকা প্রকাশ আনন্দঘন ও উপভোগ্য করেছিল।  সেই দিনের ছয় ঘন্টার অনুষ্ঠান নিয়ে ৩৩জন কবি,ছড়াকার,সাহিত্যিক ও লেখকের লেখা নিয়েই প্রমোদ সংলাপ সংখ্যাটি প্রকাশ করা হয়েছিল। এক দিনের মাত্র ছয় ঘন্টার পিকনিক কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান নিয়ে এত বড় সাহিত্যকর্ম দেশে বিদেশে কোন সংস্থা আগে করেছিল বলে আমার জানা নেই, যা কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী করেছে। 
আমি কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্য বিষয়ক লেখক নই। তবে দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকা প্রকাশ হওয়ার দিন থেকে প্রায় ৩৩ বছর ধরে  ’অতিথি কলাম’ নামে দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকায় প্রতি সপ্তাহে একটি কলাম লিখে থাকি, যা আমার অভ্যাস বা নেশায় পরিণত হয়েছে। অতিথি কলাম নিয়ে সংকলন আকারে ঢাকার এক প্রকাশক বই প্রকাশ করেছেন তিনটি। আগে আমার আইন বই প্রকাশিত হয়েছে পাঁচটি। কিন্তু আমাকে লেখক হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী যা আমি কোন দিন কল্পনাও করি নাই। ৩২জন কবি, সাহিত্যিক,লেখকের লেখা নিয়ে আমাকে সম্মানিত করার জন্য ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে ’লেখক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সংখ্যা’ নামে সমুদ্র সংলাপের একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ  করে কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছে। এতে কক্সবাজার জেলার সুপ্রীমকোর্টের প্রথম বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরীর লেখা,কক্সবাজার তৎকালীন মহকুমার প্রথম জেলা ও দায়রা জজ আবু বক্কর ছিদ্দিকীর লেখা,সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের লেখা  ও ড. সফিউদ্দিন আহমদের লেখাও অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছিল। পেশাদার লেখক না হলেও কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধের কারণে একাডেমীর ডাকে সাড়া দিয়ে ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা আমার নৈতিক দায়িত্ব।
এটা নিশ্চিত করে বলা যায় কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী উদ্যোগ না নিলে হয়তঃ স্থানীয় লেখকদের অনেক বই প্রকাশিত হয়ে পাঠকদের হাতে আসতো না। মরহুম অধ্যক্ষ মোস্তাক আহমদ,মরহুম কবি এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ ও মরহুম কবি ডাক্তার কবির আহমদ বেঁচে থাকতেই তাঁদের সম্মানে কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী বিভিন্ন লেখকের লেখা নিয়ে সমুদ্র সংলাপের বিশেষ সংখ্যা বই আকারে প্রকাশ করে তাদের সম্মানিত করেছে। মৃত্যুর পর গুণী ব্যক্তিরা তাদের শোক সভায় কে কিভাবে তাদের প্রশংসা করে বক্তব্য দিলেন তা শুনার সুযোগ নাই। তাঁরা জীবিত অবস্থায় লিখিত আকারে বই এ তাদের সম্পর্কে কে কি লিখেছেন তা দেখে যেতে পেরেছেন। তা কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর প্রশংসাযোগ্য ও অনুকরণীয় উদ্যোগ ছিল বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। আরো প্রশংসনীয় হল, কেউ কোন দিন পরোক্ষভাবেও কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীতে রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প আনার চেষ্টা করেন নাই। বিগত ২৪ বছর ধরে কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীকে রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে রাখতে সফল হয়েছেন বিধায় একাডেমীর সকল সদস্যদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো । 
কোন লাভের আশায় নয়, দেশের বহুমুখী অনিশ্চয়তা,অশান্তি ও টেনশনের মধ্যেও সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা সভা ও সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে একটু মানসিক প্রশান্তির জন্য কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর সম্মানিত সদস্যরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ২৪ বছর ধরে সাহিত্যকর্মে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করে যাওয়ার জন্য সকল সদস্যদের প্রতি রইলো আন্তরিক মোবারকবাদ। 
কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর প্রাণপুরুষ, একাডেমীর প্রায় সকল অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকা লেখক,গবেষক,পাঠক,শিক্ষক সদ্য প্রয়াত নুরুল আজিজ চৌধুরীর অনুপস্থিতি চোখে লেগেছে, এতে অনুষ্ঠানের কিছু অপূর্ণতা ছিল বলে মনে হয়েছে অনেকের কাছে। আল্লাহ মরহুম নুরুল আজিজ চৌধুরীকে বেহেস্তে নসীব করুন। আমিন।
লেখকঃ একজন কলামিষ্ট, সাবেক সভাপতি কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটার, বহু বইয়ের প্রণেতা এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন সিনিয়ার আইনজীবী।

আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.