মেজর সিনহা হত্যা মামলার আপিলের রায় ২জুন

মেজর সিনহা হত্যা মামলার আপিলের রায় ২জুন
মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা মামলায় আসামীদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদন) ও আপিলের শুনানী মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে গত  ২৩ এপ্রিল শুরু হয়ে ২৯ মে শেষ হয়েছে। আগামী ২ জুন রায় প্রচারের দিন ধার্য করা হয়েছে।
 বিচারিক আদালত কর্তৃক মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী শুনানী শেষে প্রথমআলোকে বলেছেন, প্রদীপকে ঘটনার পর জড়িত করা হয়েছে। সাক্ষ্যপ্রমাণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় না। তাই তকে খালাস দেওয়ার আরজি জানানো হয়েছে। বিকল্প হিসেবে তিনি দণ্ড কমানোর কথাও বলেছেন শুনানীতে ।
 এই মামলার অভিযোগপত্রের মোট ১৫জন আসামীর মধ্যে ১২জন আসামী প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে  ৬৫জন সাক্ষীর সাক্ষ্যজেরা গ্রহন করা হয়েছে।  বাদী শরমিন শাহরিয়া ফেরদৌস দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য দিয়াছেন ১ঘন্টা ২০ মিনিট, কিন্তু তাকে দুই দিন ব্যাপী দীর্ঘ ৯ ঘন্টা জেরা করা হয়েছে যা একজন মহিলা বাদীকে দীর্ঘতম জেরা কক্সবাজারের ইতিহাসে। এই মামলায় স্বীকৃতমতে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তারকৃত নিহত মেজর(অব) সিনহার সহযোগী ও ভিকটিম রাষ্ট্রপক্ষের ২নং সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাত আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন ২ঘন্টা ২০মিনিট, তাকে আসামীপক্ষে জেরা করা হয়েছে ২দিনে ৬ঘন্টা ৩২ মিনিট। আসামীদের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধকারী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তামান্না ফারাহ দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য দিয়াছেন ৫৬ মিনিট, তাকে জেরা করা হইয়াছে ৪ ঘন্টা ৪০ মিনিট। তিনি ১০.১৫ ঘটিকা থেকে ৫টা পর্যন্ত সাক্ষীর ডকে ছিলেন। অবশ্য ১ঘন্টা (২টা থেকে ৩টা) বিরতি ছিল। একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের এত লম্বা সাক্ষ্যজেরা এটাই কক্সবাজারের ইতিহাসে প্রথম।  অভিযোগপত্র দাখিলকারী তদন্তকারী কর্মকর্তা রাষ্ট্রপক্ষের ৬৫নং সাক্ষী সিনিয়র এএসপি খাইরুল ইসলাম  সাক্ষ্য প্রদান করেন ২ঘন্টা, কিন্তু তাকে আসামীর পক্ষে ৫দিন ধরে জেরা করা হয়েছে যা কোন তদন্তকারী কর্মকর্তার দীর্ঘতম জেরা। আসামী প্রদীপ কুমার দাশ ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় ৭ পৃষ্টার দীর্ঘ লিখিত জবানবন্দি ও তৎসাথে ৩৬৫পৃষ্টা কাগজপত্র দাখিল করেছেন। ওসি প্রদীপকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন নাই। তবে মেজর সিনহার বোন শরমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এই মামলা দায়ের করার আগে সিনহা হত্যাকান্ডকে ধামাচাপা দেওয়া ও ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার কুউদ্দেশ্যে সুচিন্তিতভাবে ওসি প্রদীপের নির্দেশে তার অধীনস্থ কর্মকর্তা বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত কর্তৃক দায়ের করা টেকনাফ থানার মামলা নং ০২ তারিখ ০১/০৮/২০২০(জি,আর ৬৯৬/২০২০) ধারা ৩০২/২০১/৩৪ দন্ডবিধি  ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রিণ আইনের মামলা নং ০২ তারিখ ০১/০৮/২০২০(জি,আর ৬৯৫/২০২০) এর এজাহার রেকর্ড করেছেন ওসি প্রদীপ নিজে দস্তখত করে। এজাহারে পরিস্কার ভাষায় লেখা আছে মেজর সিনহা পাহাড় থেকে নেমে নিজস্ব সিলভার রং এর একটি প্রাইভেট কারযোগে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের দিকে যাত্রা শুরু করেছেন তা সোর্সের মাধ্যমে জেনে টেকনাফ থানার ওসিকে অবহিতক্রমে ও তার নির্দেশক্রমে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সসহ গত ৩১/০৭/২০২০খ্রিঃ ২১.১৫ ঘটিকার সময় শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে অবস্থান নিয়ে সিনহার সিলভার রংয়ের প্রাইভেট কার থামানোর জন্য রাস্তায় বেরিকেড দিই। এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতের কম্পিউটারে টাইপ করা এজাহার দুইটি ওসি প্রদীপ পাঠ করেই তার নির্দেশক্রমে মেজর সিনহার গাড়ী চেকপোস্টে থামিয়ে অপারেশন চালানোর আদেশের স্বীকৃতির দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়। উল্লেখিত মামলা দুইটিতে আসামী ছিলেন এই মামলার ২নং সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। মামলাদ্বয় তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিলেন র‌্যাবে কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমদ এবং সিফাত অব্যাহতি পেয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে সংবাদদাতা বা রাষ্ট্রপক্ষ কোন নারাজীর দরখাস্তও দেন নাই। উল্লেখিত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা ২টির সংবাদদাতা ও এই মামলার ৩নং আসামী এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত গত ০৭/০৬/২০২১খ্রিঃ তারিখ বিচারিক আদালতে একটি জামিনের দরখাস্ত দিয়েছেন যা নথীতে আছে। উক্ত জামিনের দরখাস্তের ১০নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন ভিকটিমের বিরুদ্ধে প্রথমে আই,সি সাহেব (লিয়াকত আলী) বাদী হয়েই মামলা দায়ের করেছিলেন। কিন্তু ওসি প্রদীপ বাবুর নির্দেশে তিনি সেই মামলার বাদী ও জব্দ তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ প্রদান করলে তিনি (নন্দ দুলাল) বাধ্য হয়ে ওসি সাহবের নির্দেশ মতে জি,আর ৬৯৫/২০ ও ৬৯৬/২০ নম্বর মামলার বাদী হয়েছেন। তিনি একজন নবনিযুক্ত অফিসার হিসেবে কিছু বুঝে উঠার আগেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পাপের বোঝা বহন করছেন। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় মেজর সিনহা কিভাবে, কখন, কার গুলিতে নিহত হয়েছেন তার ব্যাখ্যা দেওয়ার আইনী দায়িত্ব ওসি প্রদীপের ছিল। ওসি প্রদীপ তার ৭ পৃষ্টার লিখিত দীর্ঘ ৩৪২ ধারার জবানবন্দিতেও তার কোন ব্যাখ্যা দেন নাই। সাক্ষ্য আইনের ১০৬ ধারার বিধান অনুযায়ীও মেজর সিনহা কিভাবে, কার গুলিতে নিহত হয়েছেন তার ব্যাখ্যা দেওয়া টেকনাফ থানাধীন এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপের ওপর ন্যস্থ ।
আমজনতার প্রশ্ন ---স্বার্থপর কমান্ডার ওসি প্রদীপ দাশ তার সরাসরি কমান্ডে থাকা অধীনস্থ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের উপর অপরাধের দায়ভার ঠেলে দিয়ে নির্লজ্জভাবে এককভাবে নিজেই বাঁচার অপচেষ্টা করছেন না?
প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সহ ৬৫জন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে বাদীপক্ষ আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় বিচারিক আদালত যথাযথভাবে ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদন্ডাদেশ ও অন্য ৬জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ শাস্তি দিয়েছেন এবং নির্দোষ প্রমাণিত  হওয়ায় ৭জন আসামীকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করেন, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগও বিচারিক আদালতের দন্ডাদেশ বহাল রেখে আদেশ প্রচার করবেন, ইনশাল্লাহ।

 
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.