ন্যায্য মজুরি চায় শুঁটকি পল্লীর নারী শ্রমিকরা

ন্যায্য মজুরি চায় শুঁটকি পল্লীর নারী শ্রমিকরা
কক্সবাজারের নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লীর নারী শ্রমিকরা এখনও রয়েছেন বেতন বৈষম্যে। তারা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সমান তালে কাজ করেও পাচ্ছেন পুরুষের অর্ধেক বেতন। যার ফলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ের মানবেতর দিন কাটছে ভুক্তভোগী নারী শ্রমিকদের। তাদের প্রত্যাশা শ্রমের ন্যায্য মূল্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের নাজিরারটেক শুটকি পল্লীর শ্রমিকদের অর্ধেকের বেশি নারী। শুটকি মহাল মালিক সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শহরের সমুদ্রের পাড়স্থ ১ নাম্বার ওয়ার্ডে ২৫০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ শুটকিপল্লী নাজিরারটেকে প্রায় ৫ শ শুটকি মহালে ৩ হাজারের বেশি ব্যবসায়ীর অধিনে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী শ্রমিক।
শুটকি উৎপাদনে নারী শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও তারা পাচ্ছে পুরুষের অর্ধেক মজুরী। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে নারী শ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। অন্যদিকে একই সময় পর্যন্ত কাজ করা পুরুষদের দেওয়া হচ্ছে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। দীর্ঘদিন চলে আসা এই বেতন বৈষম্যে হতাশ নারী শ্রমিকেরা।
নাজিরারটেকের নারী শ্রমিকদের মধ্যে ছেনুয়ারা আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমি শুটকি পল্লীতে কাজ করছি। সেই ভোর ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত কাজ করে বর্তমানে ৫০০ টাকা পাই। পুরুষেরা পায় ৮’শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমান বাজারে এই ৫’শ টাকা দিয়ে আসলে কিছুই হয়না।’
মোবারেকা নামে আরেক নারী শ্রমিক জানান, ‘পুরুষদের তুলনায় বেতন কম হলেও কিছু করার নেই পেটের দায়ে কাজ করতে হচ্ছে। আবার অনেকে দাদনের টাকার জালে আটকা পড়ে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাম মাত্র মজুরীতে কাজ করছে। বেতন বাড়ানোর প্রতিবাদ করলে কাজ থেকে তাড়িয়ে দেয়। এই ধরণের অনেকে বেতন না দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে’।

ফাতেমা বেগম নামে আরেক নারী শ্রমিক জানান, স্বামী সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। পাঁচ সন্তান নিয়ে জীবন চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই যা দিচ্ছে তাই দিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। পাঁচ সন্তানের সংসারে এই টাকায় কিছুই হয়না। অনেক সময় শরীর আর পারেনা।
নারীদের বেতন বৈষমের নিয়ে একাধিকবার আওয়াজ উঠলেও অসাধু মালিক সিন্ডিকেটের কারণে আশানুরূপ ফলাফল আসেনি। অনেকে যুক্তি হিসেবে দেখাচ্ছেন পুরুষেরা ভারী কাজ করে। তবে এবারে এর পরিবর্তন আশা করছে সচেতন ব্যবসায়ীরা।
লিয়াকত হোসেন নামে শুটকি মহাল ব্যবসায়ী জানান, ‘শুটকি মহালে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। পুরুষ শ্রমিকের চাহিদা থাকলেও কম পাওয়া যায়। এছাড়া পুরুষেরা যেসব ভারী কাজ করতে পারে নারীরা তা পারেনা। তাই নারীদের বেতন কম দেওয়া হয়। তবে আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।’
নাজিরারটেক এলাকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও তরুণ ব্যবসায়ী দিদারুল ইসলাম জানান, ‘গেল সরকারের আমলে নারী-পুরুষ শ্রমিক উভয়ই অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত ছিল। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে শ্রমের মজুরীতে বৈষম্য করেছে। আমাদের আশা করবে এই সরকারের আমলে এই বৈষম্য দুর করে নারীরা যেমন তাদের ন্যায্য শ্রমের মর্যাদা পাবে ঠিক তেমনি পুরুষেরাও পাবে তাদের শ্রমের মূল্য।
 এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, এই সমস্যা সমাধানে আমরা ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম শুরু করেছি। এরই মধ্যে ১২’শ শ্রমিকের একটা তালিকা করা হয়েছে। বাকী কাজ চলমান রয়েছে। শ্রম-মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবিত ট্রেড-ইউনিয়ন বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে শুটকি পল্লীতে শ্রমিকদের ন্যায্য মুজরী নিশ্চিত করা যাবে। ট্রেড-ইউনিয়নের নিয়ম বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে যে যার প্রাপ্য মজুরী বুঝে পাবে। তখন আর বৈষম্য হবেনা।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.