প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন আলোচিত ভূমির মালিক সচ্ছিদানন্দ

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন আলোচিত ভূমির মালিক সচ্ছিদানন্দ
সুগন্ধা পয়েন্ট সংলগ্ন আলোচিত জমি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রকৃত ভূমি মালিক সচ্ছিদানন্দ সেন গুপ্ত। তিনি জমির মালিকানা বিষয়ে বিস্তারিত লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তাঁর পাঠানো বক্তব্যটি হুবহু পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো:

“নৃপেন্দ্র মোহন সেন গুপ্ত—আমার পিতা—১৯৩৮ সালের ১৭ আগস্ট কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজার আরএস রেকর্ডভুক্ত মালিক হাসমত আলী (পিতা: জাফর আলী) এবং ফজল করিম (পিতা: ওয়াজ উদ্দিন) এর নিকট থেকে ৩.১৮ একর কৃষিজমি ক্রয় করেন।
এই জমি আরএস খতিয়ান নম্বর ১২২৪/২০৪ (২.১০ একর) এবং ১২২৪/১৫১ (১.০৮ একর)-এর আওতায় রেকর্ডভুক্ত হয়। সর্বমোট জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩.১৮ একর। তৎকালীন সময়ে এ জমি এমআরআর খতিয়ান নম্বর ৬৮৮ ও ৬৮৯-এ চূড়ান্তভাবে অন্তর্ভুক্ত ও প্রচারিত হয়।
পরবর্তীতে, আরএস দাগ নম্বর ৫৪৬, ৯১১০ ও ৯১১১ থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৬৩-৬৪ অর্থবছরে ভূমি অধিগ্রহণ মামলার (এলএ মামলা নং ৩৯) মাধ্যমে ৩১ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং তার ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩১০০ টাকা আমার পিতা নৃপেন্দ্র মোহন সেন গুপ্ত  উত্তোলন করেন। ফলে অবশিষ্ট জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ২.৭৭ একর।
এরপর, ১৯৯১ সালের ১৫ জানুয়ারি আমার (সচ্ছিদানন্দ সেন গুপ্ত) নামে উক্ত জমির নামজারি সম্পন্ন হয়। ২০১০ সালের ২০ মে পৃথকভাবে খতিয়ান নম্বর ৭৯০০ খোলা হয়, যার আওতায় ১.১০ একর জমি অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং আমি ১৪৩৩ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) প্রদান করে আসছি।
পরবর্তীতে, ১৯৯২ সালের ১২ জানুয়ারি আমার নামে আরও একটি খতিয়ান (নং ৩২৪৭) অনুমোদিত হয়, যার আওতায় জমির পরিমাণ ১.৫৪ একর। সবশেষে, ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর খতিয়ান নম্বর ১৬০৫৭ চূড়ান্ত হয়। এই খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত জমির খাজনা আমি ১৪৩২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ইলেকট্রনিক দাখিলা পদ্ধতিতে প্রদান করেছি।”

সুতরাং, সচ্ছিদানন্দ সেন গুপ্তের পিতা নৃপেন্দ্র মোহন সেন গুপ্তের আমল থেকে জমির পরিমাণ ছিল ৩.১৮ একর। এর মধ্যে ৩১ শতক জমি সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয়, ফলে অবশিষ্ট থাকে ২.৭৭ একর। অথচ নামজারি হয়েছে ২.৬৪ একর।
উক্ত জমির দাগ বি.এস দাগ নং ২০০০৩। যেহেতু খতিয়ানটি ১৯৯১-৯২ সালে করা হয় এবং পরবর্তী প্রায় ৩৫ বছর ধরে তা সরকারি স্বীকৃতি ও নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন করের আওতায় ছিল, তাই ২০২৪ সালে এসে হঠাৎ এটিকে “অবাস্তব” বলা একেবারেই ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন নং ১০৬৫৭/২০২৪ দায়ের করা হলে, আদালত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে উক্ত জমি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রমে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের কোনোপ্রকার নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এরপর সরকার পক্ষে মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট  আপীল বিভাগে আদেশের বিরুদ্ধে ১০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে আপিল করে। সেখানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তিন মাসের জন্য (১০/১১/২০২৪–১০/০২/২০২৫) জমিতে কোনো নির্মাণকাজ না করার নির্দেশ দেন এবং হাইকোর্টকে মূল শুনানি তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ প্রদান করেন।
এই অবস্থায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জমিতে লাল রঙের সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙান। উক্ত বোর্ডে বাংলায় কিছু মন্তব্য লেখা হয়, যার কোনোটি আইনগত আদেশ নয়। একজন সহকারী কর্মকর্তা কীভাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মন্তব্য করতে পারেন—তা প্রশ্নবিদ্ধ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ।
সুপ্রিম কোর্টের তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে শেষ হয়। এরপর, রিটকারী সচ্ছিদানন্দ সেন গুপ্ত পুণরায় হাইকোর্টে আবেদন করলে, আদালত ৯ মার্চ ২০২৫ তারিখে আবারও ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখেন, যা বলবৎ থাকবে ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত।
পত্রিকায় বলা হয়েছে, এটি “১ নম্বর খাস খতিয়ানের জমি”—যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। এই জমি কখনোই খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এটি একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন, রেকর্ডীয়, বৈধ জমি, যার ধারাবাহিকতা রয়েছে: ১৯৩৮ সালের ক্রয়সূত্রে
আরএস খতিয়ান, এমআরআর খতিয়ান, সর্বশেষ সৃজিত বি.এস খতিয়ান পর্যন্ত।
ঝিলংজা মৌজার দাগ নং ২০০০৩ এর আওতায় ২ একর ৬৪ শতক জমি রিটকারী সচ্ছিদানন্দ সেন গুপ্তের নামে চূড়ান্তভাবে প্রচারিত আছে। এবং তিনি ১৪৩৩ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেছেন।
পত্রিকায় আরও বলা হয়েছে, “নিষেধাজ্ঞা ছিল, এখন নেই”—এ কথাটিও ভুল তথ্য। সত্য হচ্ছে, মহামান্য হাইকোর্ট রিট পিটিশন নং ১০৬৫৭/২০২৪ এর প্রেক্ষিতে ৯ মার্চ ২০২৫ তারিখে সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা আদেশ প্রদান করেন, যা এখনো বলবৎ রয়েছে।
#যে কারণে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন:
১৯৭৭ সালের ১৫ নভেম্বর, জমির মালিক নৃপেন্দ্র মোহন সেন গুপ্ত সম্পর্কে একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়—যে তিনি "ভারত চলে গেছেন"। এই অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে তার ২.৭৭ একর জমির মধ্যে ২.০৩ একর জমি (ক্রমিক নং ৩১, তারিখ: ১৫/১১/১৯৭৭) অবৈধভাবে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় এবং দখল নেওয়া হয়।
এই বেআইনি অর্পিত তালিকাভুক্তের বিরুদ্ধে, নৃপেন্দ্র মোহন সেন গুপ্তের একমাত্র পুত্র হিসেবে আমি, সচ্ছিদানন্দ সেন গুপ্ত, মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করি।
উল্লেখ্য, নৃপেন্দ্র মোহন সেন গুপ্ত ছিলেন একজন বাংলাদেশের নাগরিক। ১৯৮৬ সালে তাঁর মৃত্যু হলে আমি—তাঁর একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে—উক্ত জমির বৈধ মালিক হই উত্তরাধিকার সূত্রে।
আমার জমি ঘিরে যত জালিয়াতি ও ষড়যন্ত্র ঘটনার সূচনা যেভাবে:
বিগত সরকারের শাসনামলে, সায়েরা খাতুন নামের এক নারীর নামে গায়েবিভাবে জাল দলিল ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট আমার পৈতৃক জমি দখলের পরিকল্পনা করে।
এই ষড়যন্ত্রের নেতৃত্বে ছিলেন:কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, মহেশখালী উপজেলার সাবেক আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. নুরুল আমিনের পুত্র আতাউল্লাহ। তাদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন: সাবেক সংসদ সদস্য সায়মুম সরওয়ার কমল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এমনকি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতা ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আরও অনেকে।
তাদের সক্রিয় সহযোগিতায়, আমার প্রায় ৩০ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে সেখানে “টং” ও “স্বপ্ন” নামের স্থাপনা নির্মাণ করা হয় এবং তা এখনো অবৈধভাবে জবরদখল অবস্থায় রয়েছে।
জমি উদ্ধারের জন্য আমি ভূমি দখল প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিআর মামলা নং ১১১৮/২০২৫ দায়ের করি। মামলাটি বর্তমানে কক্সবাজার মডেল থানার তদন্তাধীন, এবং এতে ওই সিন্ডিকেটের প্রত্যেককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ভুয়া দলিল তৈরিতে সহায়তাকারী তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি), কক্সবাজার সদর—আরিফ উল্লাহ নিজামী এবং সংশ্লিষ্ট জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে আমি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দায়ের করি। দুদক অভিযোগটি গ্রহণ ও অনুমোদন করেছে এবং বর্তমানে বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এ ছাড়া জড়িতদের বিরুদ্ধে  সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জালিয়াতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি।
অতএব, বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার ভিত্তিতে কোনো সংবাদ প্রকাশ করা হলে তা শুধু প্রকৃত মালিককে হয়রানি করে না, বরং আদালতের আদেশেরও পরিপন্থী—যা আইনগতভাবে আদালত অবমাননার শামিল হতে পারে।
আমি সাংবাদিক সমাজের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুরোধ করছি—তারা যেন সংবাদ প্রকাশের আগে যথাযথ তথ্য যাচাই করে, পক্ষপাতহীন ও বস্তুনিষ্ঠভাবে গণমাধ্যমের মহান দায়িত্ব পালন করেন। আপনারা জাতির বিবেক—আপনাদের কলমে যেন সর্বদা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা পায়।
প্রতিবাদকারী ও ব্যাখ্যাকারী:
সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত পিতা: নৃপেন্দ্র মোহন সেন গুপ্ত
পরিচয়: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.