হৃদরোগে মৃত্যুর হার কমাতে কক্সবাজার জেলার পাচঁটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্ণারে সেবার মান উন্নত হচ্ছে। বহু মানুষ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসের ফলে হার্ট এটাক, স্ট্রোক ও অন্ধত্বের শিকার হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসসহ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডি) কর্মসূচীর উদ্যোগে ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় চট্রগ্রাম বিভাগে হৃদরোগে মৃত্যুরহার কমাতে সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করেছে।
২৭ এপ্রিল সকাল ১০ টায় কক্সবাজার জেলার ইপিআই ভবন সম্মেলন কক্ষে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের অংশগ্রহণে দুদিনব্যপী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসির লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা: সৈয়দ জাকির হোসেন। সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় এনসিডিসির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা: রাহাত ইকবাল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এর বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভ প্রোগ্রামের এডিশনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ডা: মাহফুজুর রহমান ভূইঁয়া, ডেপুটি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ডা. শামীম জুবায়ের, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালক আকরাম আলী খান বক্তব্য রাখেন।
এ সময় পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: মুজিবুর রহমান, কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রেজাউল হাসান, উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোছা: নাসরিন জেবিন, মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: প্রণয় রুদ্র, সার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার ডা: রাইসুল ইসলামসহ সংশ্লিস্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, স্টোরকিপার ও পরিসংখ্যানবিদগণ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রশিক্ষনার্থীদের মাঝে ট্যাব বিতরণ করা হয়।
এনসিডিসি লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা: সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, অসংক্রামক রোগ সারা বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণ। বিশ্বে প্রতিবছর ৪ কোটির বেশি মানুষ অসংক্রামক রোগে মৃত্যুবরণ করেন, এই হার মোট মৃত্যুর শতকরা ৭৪ ভাগ। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে এই হার আরো বেশি। আমাদের দেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর শতকরা ৩৪ ভাগ সংগঠিত হয় হৃদরোগে। ধূমপান ও তামাক বা তামাকজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার, এলকোহল বা মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, শারিরিক পরিশ্রম না করার বিষয়গুলো এনসিডি জনিত দুই তৃতীয়াংশ মৃত্যুর সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্বায়ন ও নগরায়নের ফলে বায়ূদূষণ, খাদ্যাভাস ও জীবনচারনের পরিবর্তনের ফলে অধিক মাত্রায় মানুষ অসংক্রামক রোগে বিশেষত উচ্চরক্তচাপ ও ডায়বেটিসের শিকার হচ্ছেন। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে মানুষের জীবনচারন পদ্ধতি পরিবর্তনের জন্য পরামর্শ প্রান করা হবে।
সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদুল হক বলেন, এ বছরের মধ্যে দেশে হৃদরোগ জনিত মৃত্যুরহার এক চতুর্থ অংশ কমিয়ে শতকরা ২৫ ভাগে, উচ্চ রক্তচাপের ব্যাপকতা কমিয়ে ১৮ ভাগে নিয়ে আসা এবং একই সাথে লবণ ব্যবহারের হার শতকরা ২৫ ভাগ কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কক্সবাজার জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর এনসিডি কর্ণারের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিস সহ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা, পরামর্শ ও ঔষধ প্রদান করছে। এদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপের রোগী পাওয়া যায়, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই কর্ণার গুলো থেকে প্রাপ্তবয়সী সকলকে আধুনিক ডিজিটাল মেশিনের মাধ্যমে রক্তচাপ পরিমাপ করা হবে এবং সকল রোগীর তথ্য সিম্পল এ্যাপস ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা হবে এবং তাদের উচ্চরক্তচাপ ও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণের হার মনিটরিং এর কাজ করবে।